অরাজ
আর্টওয়ার্ক: ডাকসু আর্টিস্ট: তীর্থ সূত্র: ফেসবুক
প্রচ্ছদ » ডাকসু নির্বাচন ২০১৯ : আশা ও দুরাশার খেলা

ডাকসু নির্বাচন ২০১৯ : আশা ও দুরাশার খেলা

  • সহুল আহমদ

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর মোটামুটি সবাই বলাবলি করছিল, বাংলাদেশ একটা নতুন পর্বে প্রবেশ করেছে; সেই নতুন পর্বের সবচেয়ে অ-ভাবনীয় বিষয় ছিল ভোটডাকাতির পক্ষে আমাদের বুদ্ধিজীবীকুলের নগ্ন উকালতি। এতদিন ধরে যে ফ্যাসিবাদ জমিতে গড়াগড়ি খাচ্ছিল এই পর্বে সে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে যায়। এবং ফ্যাসিবাদী শাসনের নিয়মানুযায়ী, ডাকসুর নির্বাচন নিয়েও আমাদের আশাবাদী হওয়া উচিৎ ছিল না। তবু, মানুষ তো, আমরা আশা দেখেছিলাম। সরকারও আমাদের আশাকে গুড়েবালি করে প্রমাণ করেছে তারা আসলে ফ্যাসিবাদের ঝাণ্ডাই বয়ে নিয়ে যাবে। তবে নিরাশ যে হয়েছি তা না, আশার আলোও অনেক। সে আলাপ পরে হবে, আপাতত ডাকসুর প্রাক-নির্বাচনীর দুয়েকটা চিত্র তুলে ধরা প্রয়োজন।

প্রাক- নির্বাচনী
ডাকসু নিয়ে জোরেশোরে আলাপ-সালাপ শুরু হওয়ার পর, বিশেষ করে যখন নিশ্চিত হওয়া গেলো যে ডাকসু এইবার হবেই হবে, তখন সংগঠনগুলো বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে ভিসি মহোদয়ের কাছে ধরনা দিয়েছিল। তন্মধ্যে হলের বাইরে একাডেমিক ভবনকে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার দাবিও তোলা হয়েছিল। কোনো সন্দেহ নেই এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের একটি। কেননা, গত দশবছরে সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে সবগুলো হলই ছাত্রলীগের দখলেই। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে এখানে কোন সাক্ষ্য হাজির করার প্রয়োজন দেখি না, পাঠকের মনে আছে ধরে নিলাম আমরা। এমতাবস্থায় ভোটকেন্দ্রগুলো যে ভোটের দিনেও ছাত্রলীগের হাতেই থাকবে কোনো সন্দেহ নেই। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের স্মৃতি সবার মনেই টাটকা ছিল। হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র করাসহ যেসব দাবি তুলা হয়েছিল তার কোনটাই মানা হয় নাই। উল্লেখ্য, সবগুলো সংগঠনই এই দাবী তুলেছিল, একমাত্র ছাত্রলীগ ছাড়া। প্রশাসনের এই পক্ষপাতিত্ব আমাদের খুব একটা অবাক করে না, যে আমল চলছে সে আমলে এটা না হলেই বরং অবাক হতাম। প্রাশাসনের এই আচরণকে অনেকে মেরুদণ্ডহীনতার সাথে তুলনা করলেও আমরা তা করতে রাজি না। কেননা, এটা মেরুদণ্ডতা নয়, এটাই তার বৈশিষ্ট্য। কেননা, উপাচার্য থেকে শুরু করে আবাসিক হলগুলোর প্রাধ্যক্ষেরা নিয়োগ পান দলীয় পরিচয়ে। এবং গত ১০ বছর ক্ষমতার থাকার সুবাদে এই সব পদই ‘শিক্ষকলীগে’র হাতে। কোটাসংস্কার আন্দোলন বা নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে তাদের চেহারার শেষ মুখোশটাও খসে পড়ে গিয়েছিল। সেই সাথে এজেন্ট নিয়োগ নিয়েও প্রশাসন রাজি ছিল না। এমনকি একজন প্রাক্তন ভিপিই বলছিলেন, তাঁদের সময় এজেন্ট থাকা না–থাকা নিয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। তবে এজেন্ট থাকতেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে এজেন্ট থাকা জরুরি বলে তিনি মনে করেন। তো, প্রশাসনের এমন কাঁত হয়ে যাওয়া গ্রাউন্ডেই অনুষ্ঠিত হয় ডাকসুর নির্বাচন।

আর্টওয়ার্ক : ছাত্রলীগ
আর্টিস্ট: তন্ময়
সূত্র: ফেসবুক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো বিষয়ে কথা ওঠলেই দুটো শব্দ আমরা শুনতে পাই, এক গেস্টরুম কালচার এবং আরেকটা গণরুম। গণরুম নিয়ে অনেকদিন আগে যুগান্তর একটা রিপোর্টপ্রকাশ করেছিল। তারা বলেছিল ঢাবির হলগুলো যেন একেকটা উদ্বাস্তু শিবির। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের বাড়তি খরচ গোনার ভয়ে অবস্থান নিতে হয় রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের অধীনে থাকা গণরুমগুলোতে। সবার কপালে আবার গণরুমও জোটে না;  ফলে থাকতে হয় হলের বারান্দা, ছাদ, মসজিদ, গেমসরুম, টিভি রুম এমনকি খেলার মাঠেও। কোনো কোনোগণরুমের শিক্ষার্থীদের ঘুমাতে হয় এক পাশ হয়ে বা কাত হয়ে, তাদের ভাষায় এটা ‘ইলিশ ফালি’। আবার, গণরুমের সব ছাত্রকে কোনো না কোনো রাজনৈতিক গ্রুপের অধীনে থাকতে হয় এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে হয়। রাত হলে আবার তাদের উপস্থিত থাকতে হয় গেস্ট রুমে। এই গেস্টরুম কালচার নিয়ে সমকাল একটা রিপোর্ট করেছিল‘গেস্টরুম কালচারের নামে ছাত্রলীগের আদালত’ শিরোনামে। সেখানে বিচার বসে, কেউ যদি তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অনুপস্থিত থাকে তাহলে তাঁকে বহিষ্কার করা হয় রুম থেকে, পাঠিয়ে দেয়া হয় গণরুমে। এই গণরুম ও গেস্টরুম কালচারের বলি হতে হয়েছিল  হাফিজুর মোল্লাকে। শীতের ধকল সইতে পারেন নি, আক্রান্ত হয়েছিলেন টাইফয়েড ও নিউমোনিয়াতে। গেস্টরুম কালচারের অংশ হিসেবে ছাত্রলীগের ‘ডিউটি’ করতে হয়েছিল। বলেছিল শরীর খারাপ, ডিউটি করতে পারবে না, তবু শীতের মধ্যে মাঠে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল, রাত সাড়ে নয়টা থেকে একটা পর্যন্ত। সেই সময়ে সে হলের প্রধ্যাক্ষ সাহেব এটাও বলেছিলেন যে, ছাত্রলীগের গেস্টরুমের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। ডাকসুর প্রাক্বালে ছাত্রসংগঠনের দাবিও ছিল, গণরুম ও গেস্টরুম সংস্কৃতি উচ্ছেদ করে প্রথম বর্ষ থেকেই মেধা ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে আসন বণ্টন করতে হবে। গেস্টরুম ও গণরুম নিয়ে একটা ছোটোখাটো আলাপ করলাম এই কারণে যে, গণরুমে থাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের অংশ নিতে হয়েছেছাত্রলীগের প্রচারণায়। আগেই বলছি এইসব হলো একচ্ছত্র লীগের দখলে। আগে হলে থাকার বিনিময়ে নিয়মিত লীগের মিছিল- মিটিংয়ে অংশ নিতে হতো, আর নির্বাচনের পূর্বে তাদের নির্বাচনে প্রচারণায় অংশ নিতে হয়। এবং এই অংশ নেয়া ‘বাধ্যতামূলক’। ছাত্ররা তো প্রথম আলোর একজন প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতেই রাজি হয় নাই। বলেছিল, কথা বলছি দেখলে খবর আছে।

সেই সাথে আছে হামলা। আমরা দেখেছি, বিভিন্ন দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন।যদিও প্রশাসনেরপক্ষের লোকজন বলেছেন পরিবেশ শান্ত ও স্বাভাবিক, কিন্তু বাদবাকীরা এটাও বলছিল যে, প্রশাসন মৌখিকভাবে স্বীকার না করলেও আসলে কর্তৃত্ব তাদের হাতে নেই, কর্তৃত্ব বিশেষ একটা সংগঠনের হাতে।

তবে, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া মানা হবে কি হবে না সে বিষয়ে যখন বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা মন্তব্য বা সিদ্ধান্ত দেয়া শুরু করেন তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্বায়ত্বশাসন’ নামক বস্তুটাকে চিনতে কষ্ট হয়। যা উল্লেখ করেছি তা কিছু নমুনা মাত্র, শুধু এটা দেখাতে যে, নির্বাচনের আগের মুহূর্তে সবাই ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্রচারণা চালালেও আসল পরিবেশ কোন দিকে হেলে ছিল।

নির্বাচনের ও ফলাফল
নির্বাচন শেষ হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যদাবিকরেছেন, উৎসবপূর্ণ পরিবেশে উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে, আবার অন্যদিকে ঢাবি উপ-উপাচার্য বলেছেন, আমরা এই অনিয়মের দায় এড়াতে পারি না। আবার একই সুরে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তাবলেন, তিনি ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর জন্যে বিব্রত। একই সুরে কথা বলেছেন পর্যবেক্ষকরা। নির্বাচনের দিন সকালে হলগুলো ঘুরে পর্যবেক্ষক দলের সদস্যরা বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে তারা লজ্জিত। নির্বাচন নিয়ে এমন বিপরীতমুখী মন্তব্যের কারণ খোঁজে পাওয়া যাবে পর্যবেক্ষক দলের পর্যবেক্ষনে। সরাসরি তাদেরকেই উদ্ধৃত করি,

আমরা কুয়েত মৈত্রী হল থেকে আমাদের পর্যবেক্ষণ শুরু করি কারণ, আমরা শুরুতেই জানতে পারি এই হলে ভোটদানে অনিয়মের কথা। আমরা জানতে পারি, ভোট গ্রহণ শুরু হবার আগে ছাত্রীরা নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা শিক্ষিকাদের কাছে ভোটদানের পূর্বে শূন্য ব্যালট বাক্স দেখতে চান কিন্তু তাদের এই ন্যায্য দাবি অগ্রাহ্য করা হয়। এতে ছাত্রীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এবং এক পর্যায়ে কেন্দ্রের পাশের কক্ষ থেকে একটি বিশেষ ছাত্র সংগঠনের পক্ষে পূরণ করা প্রচুর ব্যালটপেপার উদ্ধার করে। সেগুলোর বেশ কিছু আমরা শিক্ষকরাও দেখতে পেয়েছি। এরকম অবস্থায় স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়ে যায়। এই ঘটনায় প্রভোস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সমর্থ না হলেও আমরা রিটার্নিং অফিসারদের লজ্জিত ও মর্মাহত দেখতে পাই।

এক পর্যায়ে রোকেয়া হলে গোলযোগের খবর পাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি, সকালের কুয়েত মৈত্রী হলের অভিজ্ঞতার পর, সরকারি ছাত্র সংগঠনের বাইরের নানান প্যানেলের শিক্ষার্থীরা ভোটকেন্দ্রের পাশের ‍রুমে ব্যালট পেপারের সন্ধান পান এবং সেগুলোকে দেখানোর জন্য কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করেন। কিন্তু সেগুলো ছিল সাদা ব্যালট পেপার। এরপর পরিস্থিতির অবনতি ঘটে এবং সরকারি ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিরোধীদের ওপর চড়াও হয়। বিরোধী পক্ষের কয়েকজন আহত হন। উভয় পক্ষের উত্তেজনায় এরকম অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে রোকেয়া হলে, যার নিন্দা জানাই আমরা।

ছাত্রদের হলের ভেতরে মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়। তবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে কতকগুলো অনিয়ম চোখে পড়ে –

ক. ভোটারের আইডি চেক করার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের সদস্যরাই বেশী মাত্রায় ভূমিকা রেখেছেন এবং অনাবাসিক ছাত্রদের ভোট দিতে বাধা প্রদান ও নিরুৎসাহিত করেন তারা।
খ. ছাত্রলীগের কর্মীরা নির্বিঘ্নে চলাফেরা করলেও, অন্য প্যানেলের প্রার্থী ও কর্মীরা ভোটকেন্দ্রের বাইরে বা ভোটারের সারির আশেপাশে অবস্থান গ্রহণ করতে বাধাগ্রস্ত হয়েছেন।
গ. ভোটকেন্দ্রের অব্যবহিত বাইরে কৃত্রিম জটলা করে রেখেছেন ছাত্রলীগের কর্মীরা যাতে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া শ্লথ হয় এবং বাকিরা ভোটদানে নিরুৎসাহিত হয়।
ঘ. অনেকক্ষেত্রে বুথের ভেতরে আমরা সময় গণনা করে দেখেছি ৫ থেকে ২৩ মিনিট পর্যন্ত সময় ব্যয় করেছে কোনো কোনো ভোটার যা ইচ্ছাকৃত মনে হবার কারণ রয়েছে। ভোট চলাকালেই রোকেয়া হলের সামনে একটি সংগঠনের ২০/২৫ জন কর্মীকে বাইকের হর্ন বাজিয়ে শোডাউন করতে দেখা গেছে যা আচরণবিধির লঙ্ঘন।

একটি বড় অসঙ্গতি মনে হয়েছে, ব্যালট পেপারে কোনো সিরিয়াল নম্বর ছিল না। ৪৩ হাজার ভোটারের একটি নির্বাচনের ব্যালট পেপারে সিরিয়াল নম্বর না থাকাটা আমাদের কাছে বিস্ময়কর মনে হয়েছে। কারণ এতে নির্বাচনের ফলাফলে গুরুতর অনিয়ম ঘটানো অনেক সহজ হয়ে যায়। কোন হলে কোন সিরিয়াল গেল, তাও ট্র্যাক রাখার উপায় থাকার কথা না।

পর্যবেক্ষক দলের বিবৃতিতেই আপাত একটা ছবি পাওয়া যাচ্ছে। ভোটগ্রহণ যে অস্বচ্ছ ব্যালটে হবে সেটা আগের দিনই পরিষ্কার হয়ে যাবে। নির্বাচনের দিনের শুরুতেই কুয়েত মৈত্রী হলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যম্পাসে উত্তেজনা শুরু হয়। ছাত্রীরা ভোট শুরুর পর কুয়েত মৈত্রী হলে আগেই সিল দেওয়া ব্যালট পেপারভর্তি ব্যালট বাক্স উদ্ধার করেন। অবশ্যই একটা নির্দিষ্ট দলের সিল মারা, কোন দল আশা করি পাঠক সহজেই বুঝতে পারবেন। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর প্রাধ্যক্ষ বরখাস্ত হোন। এটা নিশ্চিত যে, প্রাধ্যক্ষ আসলে স্ট্রাকচারাল ক্রাইমের ভিকটিম বনে গেছেন, এটা সহজেই অনুমেয় যে, উপর থেকে আদাশনামা ব্যাতীত এই ঘটনা ঘটানো যেতো না। কুয়েত মৈত্রী হলের ঘটনার কারণে তাদের ভোটগ্রহণ শুরু হয় অনেক পরে। এরই মধ্যে রোকেয়া হলেও সিল না মারা ব্যালট পেপারসহ ব্যালট বাক্স উদ্ধার করা হয়। তার আগে সকালেই রোকেয়া হলের তিনটা ব্যালট বাক্স নিখোজ শিরোনামের সংবাদও প্রকাশিত হয়

 

আর্টওয়ার্ক: ডাকসু
আর্টিস্ট: মেহেদী
সূত্র: ফেসবুক

ছেলেরা যাতে ভোট দিতে না পারে সেই ব্যবস্থাও করা হয় কোশলে। জানা যায়,  ভোট কেন্দ্রে কৃত্রিম লাইন তৈরি করে রাখা হয়, লাইনে যারা দাঁড়িয়েছেন তারা অন্য ভোটারদের লাইনে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। এই লম্বা লাইন আবার ভোটগ্রহণের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর হঠাত করে উধাও হয়ে যায়। অভিযোগ করা হয় যে, লীগ প্যানেল তাদের সদস্যদের লাইনে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। এর মধ্যে অনেকেই ছিল যাদের ভোট দেয়াও শেষ, কিন্তু যেহেতু কোন ভোট দেয়া হয়েছে কি না তা বোঝার জন্যে কোন ব্যবস্থা রাখা হয় নাই তাই সেটা ধরাও মুশকিল হয়ে পড়ে। সময় শেষ হওয়ার আগে গেইটও বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগও পাওয়া যায়। জগন্নাথ হলে ভোট দিতে আসা এক শিক্ষার্থী জানিয়ছিলেন, ৫ ঘণ্টা লাইনে দাড়িয়েও তিনি ভোট দিতে পারেন নি। লাইন কেন আগাচ্ছে না জানতে চাইলে লীগের একজন ধমক দেয়, ‘গলা নিচে নামা। লাইনে দাঁড়িয়ে থাক।’

এমন কারচুপি ও অনিয়মের হাওয়ায় ছাত্রলীগ বাদে বাদবাকী সব প্যানেলই বর্জন করেন নির্বাচন। বিক্ষোভ করেন ক্যাম্পাস জুড়ে। ডাক দেয়া হয় পরবর্তী আন্দোলনের। এরমধ্যে ভিপি প্রার্থী নুরের ওপর হামলা হয়, তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই কারচুপির প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায় ফলাফলেঃ ‘নির্বাচনে ১৮ হলের মধ্যে ১২ টিতে ছাত্রলীগের প্রার্থীরা সহসভাপতি (ভিপি) পদে ও বাকি ছয়টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। আর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৪ টিতে ছাত্রলীগ ও বাকি চারটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন।’ তবে শেষ রাতে ভিপি হিসেবে নুরের জয়ী হওয়া টক অব টাউন হয়ে যায়। যেখানে প্রায় সব পদেই ছাত্রলীগ জিতেছে, সেখানে নুরের এই জয় হাজারটা সংশয় ও প্রশ্নের জন্ম দিতে থাকে। ক্যাম্পাসজুড়ে কানাঘুষা চলছে যে, সবগুলো পদেই নুর বা স্বতন্ত্রদের প্যানেলই জিতেছে, কিন্তু ফলাফল উলটপালট করলেও নুরকে হজম করতে পারে নাই। আবার, নির্বাচনের ফেয়ার মুখোশ ধরে রাখতে নুরের ভিপি পদ নিয়ে নাড়াছাড়া করা হয় নাই বলেও অনেকে মনে করেন। কেউ কেউ মনে করছেন পরবর্তীতে যেন কোনো আন্দোলন গড়ে ওঠতে না পারে সেজন্যে লীগের বাইরে কাউকে সর্বোচ্চ পদ দিয়ে খুশি বানানোর। এমন অনেক কথাই উড়ছে বাতাসে।

ভিপি নির্বাচিত হওয়ার পর নুর পরেরদিন ক্যাম্পাসে এসে আবারো হামলার শিকার হোন। অনেক নাটকীয়তার পর নুর জানান, তিনি অবশ্যই দায়িত্ব নিবেন, এবং সেই সাথে ভিপিসহ ডাকসুর সকল পদে পুনর্নির্বাচনের দাবিও তুলেন। ক্যাম্পাসে এর পরে আন্দোলন শুরু হয় বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে। স্বতন্ত্র প্রার্থী অরণি লীগের শোভনের সাথে ছবি তুলতে রাজি হোন নি, উল্টো শুনিয়ে দেন, সন্ত্রাসীদের সাথে তিনি ছবি তোলেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হল সংসদ নির্বাচনে জয়ী লামইয়া তানজিন তানহা ডাকসু নির্বাচনের সার্বিক ফল প্রত্যাখান করেছেন। রাজু ভাষ্কর্যের সামনে চারজন শিক্ষার্থী আমরণ অনশন করেন, অসুস্থ হয়ে হাসতাপালে ভর্তি হোন, সুস্থ হয়ে আবার তারা অনশন শুরু করেন। ১৫ তারিখ ক্যাম্পাসজুড়ে শিক্ষার্থীরা ভুখা মিছিলও করেছে। পরবর্তীতে প্রশাসনের আশ্বাসে তারা অনশন ভঙ্গ করেন। রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও অনশন শুরু করলে লীগের নেতাকর্মীরা অনশনকারীদের হেনস্থা করেন।

ডাকসুর অতীত এবং বর্তমানের ইঙ্গিত
প্রথমত, ডাকসুর ইতিহাস হচ্ছে সরকারী দল কখনো ডাকসুতে জিততে পারে নাই। এবারই প্রথম সেই ইতিহাস ভাঙল। কীভাবে ভাঙল তা ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচন এবং উপরের বিবরণ মাথায় রাখলে সেটা খুব সহজেই আন্দাজ করার কথা। অবশ্য ভিপি পদ ছেড়ে দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে বিভিন্ন কর্মকান্ডের কারণে নুর বিভিন্ন মহলের সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছেন। বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতে ডাকসুর নির্বাচনের জালিয়াতির বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কথা উপেক্ষা করে যাওয়া এবং প্রধানমন্ত্রীকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করার কারণে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকেও তিনি সমালোচনার শিকার হোন। কেননা, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কথা এখনো সবার মনে সজীব। আবার, প্রধানমন্ত্রীর সামনে কিছু সত্য তুলে ধরে নুর সামান্য হলেও সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। কেননা, ফ্যাসিবাদী জমানায় তেলবাজী মহাঔষোধ – সে সাংবাদিক হোন, আর শিক্ষক হোন। সবাই তেলবাজ।

এখানে অনেকগুলো বিষয় আলাপের দরকার। পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ দরকার। প্রচলিত গঠনতন্ত্র দিয়ে এই ডাকসু আদৌ কতটা ফলপ্রসূ হবে এই প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি এটাও জিজ্ঞাসায় রাখতে হবে যে, ডাকসুর মতো করে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের কর্তৃত্ত্বের বৈধতাই প্রদান করা হচ্ছে কি না।

ডাকসু নির্বাচনের পরপরই আন্দোলনের ডাক দেয়া হলেও সেটা হয়েছে বিচ্ছিন্ন বিচ্ছিন্ন উপায়ে, ভিন্ন ভিন্ন জনে। অনেকেই সাধারণ পাটাতনের আশা করলেও বাস্তবে বিচ্ছিন্নতাই বরং বেড়েছে। আন্দোলনে ফাটল ধরানোর যাবতীয় কলাকৌশলে ক্ষমতাসীনরা সফল এটা বলা যায়। কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হচ্ছে, বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংগঠন একইভাবে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় বাহিনীর সন্ত্রাসের শিকার হওয়া সত্ত্বেও তারা সাধারণ কোনো পাটাতনে দাঁড়াতে পারছে না, বরং ইস্যুকেন্দ্রিক যে আন্দোলনগুলোও হচ্ছে সেগুলো বিভিন্ন আশা-ভরসায় ভেসে যাচ্ছে। অবশ্য এটাও মাথায় রাখা উচিৎ, দেশের সবচেয়ে বড়ো চিত্রনাট্যকারদের বিরুদ্ধে এই ছেলেরা লড়ছে, ঝানু পলিটিশিয়ানদের বিরুদ্ধে এরা লড়ছে।

কিন্তু, কেনো নুরের প্রতি বা ডাকসু নির্বাচনের প্রতি সবাই এতো আশা করে পথ চেয়ে বসেছিলেন? এই জিজ্ঞাসা আমাদের বাস্তবতার জমিনে নিয়ে আসতে সাহায্য করবে। দুনিয়ার সকল ফ্যাসিবাদই তাদের রেজিমের বাদবাকি সকল পলিটিক্সকে ধ্বংস করে দেয়। ব্যক্তিকে নির্দয়ভাবে আক্রমণ করে ‘মহান’ কোনো তাড়নায়। ব্যক্তিকে করে ফেলে বিকৃত, বিকারগ্রস্থ। ব্যক্তিকে নিমজ্জিত করে হতাশার সাগরে। বানের পানিতে ভাসতে থাকা মানুষের মতো সবাই তখন লতাপাতা খুঁজতে থাকে, কোনোভাবে যেনো আকড়ে ধরে থাকা যায়, বেঁচে থাকা যায়। যদি কোনো মিনিমাম প্রতিরোধের সম্ভাবনা দেখা যায়, মানুষ চেয়ে থাকে সে দিকে। ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্র অফিসিয়ালি বিদায় নিয়েছে। বিন্দুপরিমাণ প্রতিরোধ প্রতিবাদ ছাড়াই। স্ট্রাকচারাল ক্রাইম এবং সাংবিধানিক ক্রাইম কতটা বিপদজনক হতে পারে তারই একটা মহড়া ছিল একাদশ জাতীয় নির্বাচন। সেখানে ডাকসু প্রতিরোধ বা প্রতিবাদের একটা সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। অথবা অন্যভাবে বলা যায়, আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম প্রতিরোধের বা প্রতিবাদের। তাই স্বতন্ত্র পদপ্রার্থী কিংবা লিটন কিংবা নুরকে আমাদের উচ্ছাসও ছিল বাঁধনহারা। নুরের জয়ের পর আন্দোলনের স্বপ্নও দেখেছিলেন অনেকেই। পুরো জাতির আশা-আকাঙ্খা যেনো পড়েছিল প্রার্থীদের ঘাড়ে। নুরের পরবর্তী কর্মকান্ডের তাদের অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েন। কেউ কেউ বলছেন এমন ডাকসু নেতা তারা চান নাই। কিন্তু কয়েকযুগের নির্বাচনহীনতা যে শূন্যতা তৈরি করেছে সেটাই বরং এসবের জন্যে দায়ী, এমন ‘নেতৃত্বের’ জন্যে দায়ী। গণতন্ত্র একটা প্রসেস, সেটা চলতে থাকলে আন্দোলন গড়ে উঠবে, স্বাভাবিক নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ পাবে। কিন্তু যেখানে গণতন্ত্রই শতভাগ অনুপস্থিত, গণতন্ত্র যেখানে একটা ‘ঘটনামাত্র’ সেখানে আমাদের স্বপ্নগুলো ছিল আকাশকুসুম কল্পনার সমান। পাশাপাশি একজন জনপ্রিয় নেতাকে খাঁটি দালালে পরিণত করা একটি সর্বাত্মকবাদী রাষ্ট্রের পক্ষে অসম্ভব কিছু নয়। আবার, নেতাকে কেন্দ্র করে যেমন আন্দোলন গড়ে ওঠে না, তেমনি আন্দোলন কখনো একজন নেতাকে তৈরি করে না, বরং ‘একদল’ নেতাকে তৈরি করে।

পাশাপাশি বোঝা উচিৎ, যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা দলবেঁধে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনী জালিয়াতিকে বৈধতা দেন তাদের হেফাজতে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে সেটা আশা করাটাই অনুচিত। তবু আশা করেছিলাম, ছাত্ররা প্রতিরোধ করবে। কিন্তু, যে মিনিমাম প্রতিরোধের আশা জেগেছিল, ছিন্ন-বিচ্ছিন্নতা সেও গুড়েবালি করে দেয়। যে পর্যবেক্ষক শিক্ষকেরা ডাকসুর জালিয়াতির প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উল্টো তাদের বিরুদ্ধে লেগেছে।

আর্টওয়ার্ক: ডাকসু ইলেকশন
আর্টিস্ট: মেহেদী
সূত্র: ফেসবুক

ডাকসু কি তাহলে শুধু হতাশা ছড়িয়েছে? না। আশার আলোও দেখিয়েছে। নির্বাচনকে প্রত্যাখান করে বিভিন্ন পাটাতনে যে আন্দোলন-প্রতিবাদ করা হয়েছে সেটাই বরং আশা ছড়ায়। ছিন্ন-বিচ্ছিন্নভাবে হলেও প্রতিবাদ হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর যে সুনসান নিরবতা ছিল, ডাকসুর ক্ষেত্রে অন্তত তা নেই। আশা করা হয়েছিল, শুরু থেকেই অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট একটা ঐক্য হবে, হয় নাই। কেনো হয় নাই, কানাঘুষাও শুনতে পাচ্ছি, যদিও এর কোনটাই প্রীতিকর নয়। বরং, আমাদের ‘প্রগতিশীলতা’কে মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তবু, এই নির্বাচনের দিন থেকেই ছাত্রীরা যে সাহসের পরিচয় দিয়েছে সেটা আমাদের আলো দেখাবে নিশ্চিত। ছাত্রীরা যে প্রতিরোধ করেছে, তাতে নড়েচড়ে বসতে হয়েছে প্রশাসনকে। নির্বাচনের ফলাফলে ছাত্রীদের হলের পরিসংখ্যান দেখলেই ছাত্রীদের প্রতিরোধের সফলতা বোঝা সম্ভব।

ডাকসু নির্বাচন রাজনীতিতে নতুন কিছু দিক উন্মোচন করেছে। অস্বীকার করার উপায় নাই, ডাকসু বা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নিয়ে বামপন্থিদলগুলো সর্বাধিক সরব এবং তা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছিল। কিন্তু, এই নির্বাচনে তাদের পরাজয় খুব সম্ভব নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে তাদের। কেনো গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে দিনে দিনে? অন্যদিকে, এই প্রথম কোনো পক্ষ পার্টিজান রাজনীতির বাইরে থেকে এসে এত বড়ো ধাক্কা দিয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে জিততেও পারতো। পার্টিজান রাজনীতির প্রতি সাধারণের এই অনীহাকে আশা করি আমাদের বিশ্লেষকরা আমলে আনবেন। কেনো পার্টিকেন্দ্রিক রাজনীতি শুনলেই তরুণরা বা সাধারণ মানুষ অনীহা প্রকাশ করছে তার সন্ধান করতে হবে। সেই স্বাধীনতার পর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকে সাধারণ মানুষ ক্রমাগত রাস্তায় নেমেছে, কিন্তু দিনশেষে দেখা গিয়েছে মানুষের হাত খালি, পার্টির হাত ভারি। প্রচলিত পার্টিকেন্দ্রিক রাজনীতির প্রতি এমন অনেক কারণেই মানুষের অনীহা জন্ম নিতে পারে। এই পার্টিবিহীন রাজনীতি আমাদের জন্যে নতুন। সেই সাথেও ‘দ্বি-দলীয়’ রাজনীতি থেকে বের হওয়ার প্রবণতাও ষ্পষ্ট, বিশেষত তরুণদের কাছে। সরকারী প্রোপাগান্ডাও কাজ করছে না। যাকে পছন্দ করি না, বা যে এই রেজিমের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় তাকেই ‘শিবির’ বা ‘রাজাকারের উত্তরসূরি’ বলে আখ্যায়িত করার রাজনীতির কার্যকরিতা হারাচ্ছে, এবং হারাবে। ডাকসুর নির্বাচন এই বিষয়গুলো স্পষ্টভাবেই আমাদের সামনে তুলে ধরেছে।

স্বপ্ন দেখার পূর্বে আমাদেরও প্রশ্ন করা উচিৎ, এক ডাকসু থেকে আমরা আর কি চাইতে পারি। আমরা কি আসলেই চাচ্ছি যে, মাত্র এক বছরের একটা ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে একজন বা একদল শিক্ষার্থী আমাদের রাষ্ট্রে জন্ম নেয়া ছিদ্রগুলো বন্ধ করে ফেলবে? তারা তো এমন কোনো দাবি-দাওয়াও সামনে হাজির করে নাই। তারা আন্দোলনে নেমেছিল একটা দাবি নিয়ে, এবং সেখানে আপোষহীনভাবে তারা রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে। রাষ্ট্র তার সকল যন্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তাদের রক্তাক্ত করেছে। তারাও রাষ্ট্রের ভয়াবহ আক্রমণের শিকার।

এই ডাকসু নির্বাচন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে আমাদের রাষ্ট্র কতটা নাজুক। সর্বাত্মকবাদী হয়েও কতটা জনবিচ্ছিন্ন। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে দিতে তারা অপারগ। এদের সামলাতেই তাদের যাবতীয় ক্ষমতা নড়ে ওঠে, যাবতীয় নাট্যকারদের টেনে নিয়ে আসতে হয়। তাই, রাষ্ট্রের এই ভয়াবহরূপ তুলে ধরার জন্যে ডাকসুর কাছে আমাদের শুকরিয়া।

অনেক হতাশার মাঝে ডাকসু কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার করেছে। আশার কতটা সঞ্চার হবে তা নির্ভর করবে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ওপর।

সহুল আহমদ

সহুল আহমদ, লেখক, অনুবাদক ও অ্যক্টিভিস্ট। গবেষণার পাশাপাশি সমকালীন বিষয়াবলীর বিশ্লেষক। জন্ম সিলেটে, ১৯৯১ সনে। পড়াশোনা করেছেন শাবিপ্রবিতে, পরিসংখ্যান বিভাগে। একাধিক জার্নাল সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত। প্রকাশিত বই: মুক্তিযুদ্ধে ধর্মের অপব্যবহার; জহির রায়হান: মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনৈতিক ভাবনা; সময়ের ব্যবচ্ছেদ (সহ-লেখক সারোয়ার তুষার)। অনুবাদ: ইবনে খালদুন: জীবন চিন্তা ও সৃজন।