- রাহুল বিশ্বাস
কিছুদিন আগে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল। শেষ মুহূর্তে চুক্তি হলেও জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় কতগুলো ইস্যু অমীমাংসিতই রয়ে গেছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ রাখতে ধনী দেশগুলো অঙ্গীকার করলেও তা কতটুকু বাস্তবায়ন করা সম্ভব সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। অতীতে এমনসব অঙ্গীকারের অসংখ্য নজির থাকলেও, বাস্তবে দেখা যায় ঘরে ফিরে কার্বন নিঃসরণ উল্টো কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। যাইহোক, জলবায়ুর পরিবর্তন রোধে মানুষের ভূমিকা কিংবা কার্বন নিঃসরণ কমানো এগুলো আশা করি কোন চুক্তির ব্যাপার নয়, যা প্রকৃত-ই যাপনের ব্যাপার। আর পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থা জিইয়ে রেখে সেই যাপনটা আসলে সম্ভব কিনা সেই প্রশ্নটাকে সামনে আনা জরুরি। এজন্য শুরুতে জানাশোনা কয়েকটি কথা বলা পরে আমরা মূল আলোচনায় প্রবেশ করবো।
সকল জীবের (উদ্ভিদ ও প্রাণীর) শ্বসনের জন্য অক্সিজেন একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। অক্সিজেন তৈরি হয় গাছ ও ছোট ছোট ফাইটোপ্ল্যাংটন থেকে। মাথায় রাখুন পৃথিবীতে প্রতিবছর ১৫ বিলিয়ন গাছ নিধন হচ্ছে।১ অর্থাৎ পৃথিবীর ৭৮৯ কোটি জনসংখ্যার গড় অনুপাত অনুযায়ী প্রতিবছর প্রতিজন মানুষ প্রায় ২ টা করে গাছ নিধন করছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষপ্রতি প্রায় ৪২২ টি গাছ আছে।১ তাহলে বলা যায় বৃক্ষ নিধন এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক দশকে মানুষসহ অন্যান্য অনেক জীবের জীবন মারাত্মক হুমকিতে পড়বে। এদিকে সমুদ্রের তাপমাত্রা যদি গ্রিনহাউজ গ্যাসের কারণে ৫-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যায় তাহলে ফাইটোপ্ল্যাংটনগুলো মারা যাবে। তবে এটা যে শুধু তাপমাত্রার সমস্যা তেমনটা কিন্তু নয়। যদি বেশি করে কার্বন ডাই অক্সাইড সমুদ্রের পানিতে মিশে, তাহলে সমুদ্রের পানি এসিডিক হয়। ফলে ঝিনুক, শামুক এমনসব ছোট ছোট প্রাণ, যারা ক্যালসিয়ামের একটি শেল তৈরি করে বাঁচে, সেই শেলটা এসিডের কারণে লীন হয়ে যায়।২ বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের ভাগ বেড়ে যাওয়ার ফলে সমদ্রের উষ্ণতা এবং জলের উপরিতলের pH তথা অম্লতা (এসিডিক প্রভাব) বেড়ে গিয়েছে; ফলে খোল (শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি) তৈরি করে এমন প্ল্যাঙ্কটন এবং প্রবাল প্রাচীর নির্মাতা প্রজাতিগুলো বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে।৩ ফলে বর্ণময়, স্বাস্থ্যময় এবং জীববৈচিত্র্যপূর্ণ প্রবালপ্রাচীরগুলি জুড়ে গিয়ে কেবল ছাই ছাই সাদা রঙের কঙ্কালটুকুই পড়ে থাকছে। সামাজিক বিপাক-ক্রিয়ার আমূল পরিবর্তন না হলে, পৃথিবীর প্রবালপ্রাচীরগুলির মৃত্যু মাত্র আর কয়েক দশকের অপেক্ষা। প্রবালপ্রাচীর মরলে, তার সংলগ্ন প্রাণীকূলও মরবেই।৪ উল্লেখ্য, প্লাস্টিক ও অন্যান্য এসিডিক দূষণে সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রবালগুলো রোগাক্রান্ত হচ্ছে এবং মরে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এমনটা চলতে থাকলে হয়তো এ দ্বীপটাই একসময় থাকবে না। বায়ুমণ্ডলের অন্যতম একটি গ্রিন হাউজ গ্যাস কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ উনবিংশ শতকের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। গত দুই দশকে বেড়েছে ১২ শতাংশ।৫ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় পৃথিবীর উত্তর মেরুর জমাট বাঁধা বরফ ও হিমবাহগুলো দ্রুত গলে যাচ্ছে। ফলে সাগরের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় উপকূল অঞ্চলগুলো মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। অন্যদিকে বরফের নিচে আটকে থাকা মিথেন গ্যাস (এমন একটি গ্রিনহাউজ গ্যাস যা কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায় তীব্রতায় ২৪ গুণ বেশি ক্ষতিকারক) বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়লে তা জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা কয়েকগুন বাড়িয়ে দিবে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বন-জঙ্গলে আগুন লাগার ঝুঁকি বাড়ছে। সর্বশেষ ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়ায় বনে আগুন লাগার ঘটনা যার চাক্ষুষ প্রমাণ। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিভিন্ন অংশে তীব্র দাবদাহ হচ্ছে, এমনকি তাপমাত্রা উঠেছে ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে। এ বিষয়ে নোয়াম চমস্কি পদার্থবিদ রেমন্ড পিয়েরেহামবার্টের বরাত দিয়ে বলেছেন, “এখন আতঙ্কিত হবার সময় এসেছে। আমরা ঘোর বিপদে আছি।“৬ জেমস হানসেন, তার দি থ্রেট টু দি প্ল্যানেট শিরোনামের এক নিবন্ধে লিখেছেন, আমরা এখন প্রজাতিদের গণ-বিলুপ্তির এমন এক সম্ভাব্য পরিস্থিতির সম্মুখীন, যা ভূপৃষ্ঠে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত। বিশ্ব ইতিহাসের বিগত পর্বে, এমন পরিস্থিতিতে ইতিপূর্বে অনেকবার শতকরা ৫০ থেকে শতকরা ৯০ ভাগ জীবিত প্রজাতির বিলোপ ঘটেছে।৭ যাইহোক এই ভয়ঙ্কর পরিণতি ঠেকানোর কোন সোজাসাপ্টা রাস্তা নেই। আর সে কারণেই আমাদের এই আলোচনা।
বৃহৎ পরিসরের (লার্জ স্কেল) কারখানাগুলো জলবায়ু ও পরিবেশ দূষণের প্রধান নিয়ামক। কারখানাগুলো যখন লার্জ স্কেলের হয় তখন বস্তুত তার দূষণ নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব। কারণ এমন কারখানাগুলোর দীর্ঘকায় শরীরে বর্জ্যও দীর্ঘকায় হয়। অত্যাধিক পরিমাণ এই উৎপাদনের জন্য অধিক ক্যেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়, যার বর্জ্যও হয় অধিক, যা পরিবেশের উপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলে। পুঁজিতান্ত্রিক উৎপাদন মানুষের চাহিদার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে না। এটি বিজ্ঞাপন কিংবা বিভিন্ন ধরনের ফাঁদে ফেলে নেহাত অকেজো-অপ্রয়োজনীয় পণ্যের উপর মানুষের কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টি করে অবাধ উৎপাদনের দিকে যায়। অন্যদিকে কারখানাগুলোর চিমনির ধোঁয়া বায়ুতে মিশে ব্যাপকহারে পরিবেশের ক্ষতি করছে। ঠিক তেমনি ব্যক্তি মালিকানাধীন কারখানাগুলোতেও দূষণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। কারণ ব্যক্তির কাছে পুঁজি তথা মুনাফাটা আসল। অপরদিকে পরিবেশ, জলবায়ু, মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এগুলো তার কাছে গৌণ বিষয়। আবার সেখানকার শ্রমিক-কর্মচারী এরা ব্যক্তি মালিকানাধীন কারখানাগুলোতে নেহাত একটা উৎপাদনের যন্ত্র মাত্র। তাই দূষণ বা বর্জ্য নিয়ে তাদের মাথাব্যথা থাকেনা কিংবা সেরকম বুঝওয়ালা একটা ব্যবস্থার সম্পূর্ণ বাইরে তাদেরকে রাখা হয়।
তাই প্রথমে যেটা দরকার তা হল লার্জ স্কেলের কারখানা বা শিল্প প্রতিষ্ঠানের ধারণা থেকে আমাদেরকে বের হয়ে আসা। দরকার সমবায় পদ্ধতিতে চালিত ছোট ছোট কারখানা। তাতে যেমন মানুষ আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হবে, তেমনি পরিবেশের জন্য তার এই উৎপাদন ব্যবস্থা ক্ষতির বড় কোনো কারণ হবে না বা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় জড়িত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যহানিও বড় পরিসরে কমে আসবে। নিজস্ব প্রকৃতির ও আবাসভূমির সাথে এই উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে উঠায় স্বভাবতই দূষণরোধে এখানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, একজন ব্যক্তি যখন কারখানার মালিক হন এবং তার অধীনে শ্রমিকরা কাজ করে তখন কারখানার মালিকের কাছে পুঁজি পুঞ্জীভূত করা কিংবা কতো বেশি লাভ করা যায় সেটা মূখ্য হয়ে দাঁড়ায়। ব্যক্তি মালিকানাধীন কারখানাতে একজন শ্রমিককে চরম হতাশা ও দারিদ্র্যের মাঝে রাখা হয়। সেখানে ন্যূনতম মজুরি শ্রমিকরা পায়না। কেমিক্যাল দূষণ, অতিরিক্ত সময় কাজ করাসহ নানা কারণে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যহানি ঘটে এবং তারা মারাত্মকসব রোগে ভোগে। তাই প্রাণ-প্রকৃতি ও সাম্যতার সমাজ বিনির্মাণে ব্যক্তিমালিকানাকে অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে। ব্যক্তি মালিকানার পরিবর্তে সামাজিক মালিকানায় (রাষ্ট্রীয় আমলাতান্ত্রিক নির্ভর নয়, সমবায় পদ্ধতিতে চালিত) চলবে এসব কারখানাগুলো। এই বিকেন্দ্রীভূত ব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা যেমন বাড়বে, তেমনি স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত হবে। কার্ল মার্কস প্রকৃতি ও পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে যে দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক তাকে ব্যাখ্যা করেছেন “সামাজিক বিপাক-ক্রিয়া পদ্ধতির পারস্পরিক নির্ভরতার মাঝখানে অপূরণীয় এক ফাটল” হিসেবে। মার্কস একইসাথে ব্যাখ্যা করেছেন যে “উৎপাদন প্রক্রিয়ার কৃৎকৌশল ও কি মাত্রায় উৎপাদনের উপাদানগুলো সংযুক্ত হবে, পুঁজিবাদী উৎপাদন প্রক্রিয়া কেবলমাত্র সেটাই নির্ধারণ করে, আর একই সঙ্গে ঐসব সম্পদের যে প্রাথমিক উৎস সেই জমি ও কৃষকের ভূমিকার গুরুত্বকে একেবারেই কমিয়ে দেয়।” মার্কসের ভাষায়, “এমনকি গোটা সমাজ, জাতি কিংবা একই সাথে সকল সমাজকে একত্রে ধরলেও কেউই পৃথিবীর মালিক নন, এরা কেবলমাত্র ধারক ও ফলভোগী। একজন ভালো গৃহকর্তার মতো পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এই পৃথিবীকে বিশুদ্ধ অবস্থায় হস্তান্তরিত করতে হবে।”৮ মার্কসের ভাষায় বিশ্ব পরিবেশের ক্ষতিসাধন-সমস্যার একমাত্র প্রকৃত অর্থাৎ টেকসই সমাধান পাওয়া যাবে “যৌথ উৎপাদকের” সেই সমাজব্যবস্থায় যেখানে উৎপাদকেরা ‘মানুষের বিপাক ক্রিয়াকে প্রকৃতির সঙ্গে যুক্তিশীল পন্থায় পরিচালিত করতে পারবে; প্রাকৃতিক শক্তিকে কেবল এক অন্ধ শক্তি রূপে কর্তৃত্ব করতে না দিয়ে, এক যৌথ বা সমষ্টিগত নিয়ন্ত্রণের আওতায় নিয়ে আসবে। এর ফলে ন্যুনতম পরিমাণ শক্তি ব্যয়িত হবে এবং এমনভাবে ব্যবহৃত হবে যা মানবপ্রকৃতির যোগ্য ও উপযুক্ত।”৯ ‘পূর্ণ বিকশিত প্রকৃতিবাদ হিসেবে সাম্যবাদ’, মার্কস লিখেছিলেন, “মানবতার সমান, এবং পূর্ণ বিকশিত মানবতাবাদ হিসেবে তা প্রকৃতিবাদের সমান।”১০ মার্কসের ‘বিপাক-ফাটল‘ তত্ত্ব আজ পরিবেশ বিজ্ঞানীদের কাছে নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।১১ একটি সত্যিকার ব্যাপক বিশ্লেষণকে ‘বাস্তবে বিরাজমান সমাজতন্ত্র’-এর সৃষ্টিশীল/ধ্বংসাত্মক শক্তির দিকটাও আলোচনা করতে হবে। বেশির ভাগ সময় এই সমস্ত সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো অগ্রসর পুঁজিবাদী দেশগুলোকে অনুসরণ করে এবং তাদের নাগাল পেতে চেষ্টা করে। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশের উপর ‘বাস্তব সমাজতন্ত্রের প্রভাবকে পুঁজিবাদের প্রভাবের থেকে আলাদা করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।১১ শ্রম বিভাজন সৃষ্টি, অতি উৎপাদন (উৎপাদনের জন্য উৎপাদন কিংবা বৃদ্ধির জন্য বৃদ্ধি, যেমনটা ক্যান্সার কোষের ধর্ম), পুঁজিবাদী দেশগুলোকে অনুসরণ ও তাদের লাগাল পেতে চেষ্টা করা সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েতের (লেনিন বাস্তুতান্ত্রিক বিকাশে উল্লেখযোগ্য কিছু পদক্ষেপ নিলেও, স্তালিন তার বেশির ভাগটায় ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। উল্লেখ্য, উইলিয়ম মরিস, আউগুস্ত বেবেল, কার্ল কাউটস্টি, রোজা লুক্সেমবার্গ এবং নিকলাই বুখারিন, এর্নেস্তো চে গেভারা সকলেই মার্কসের বাস্তুতান্ত্রিক অন্তর্দৃষ্টিকে ধারণ করেছেন।) পতন ঘটিয়ে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। সেমর্মে একথা বলা সমীচীন হবে যে প্রাণ-প্রকৃতিমূলক সমাজ সৃষ্টি না করতে পারার ব্যর্থতা বস্তুত সোভিয়েতের পতনের মূলে রয়েছে। তাই সর্বত্র কমবেশি আলোচিত একটি বক্তব্য, “পুঁজিতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক উভয় ব্যবস্থাতে ধরে নেওয়া হয় রিসোর্স অফুরন্ত, সমাজতান্ত্রিকরা এক্ষেত্রে সমস্যা হিসেবে দেখছেন বণ্টনের অসাম্যতাকে” মার্কসের দৃষ্টিকোণ থেকে এ বক্তব্যের অসাড়তা বোঝা গেলেও বাস্তবে বিরাজমান সমাজতন্ত্র অর্থাৎ তার পুঁজিবাদী দেশগুলোকে অনুসরণ, নাগাল পাওয়া বা পাল্লা দেবার প্রবণতা এমনকিছুর সাথে বিষয়টির প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। একইসাথে বাস্তুতন্ত্রবাদী ও সমাজতন্ত্রবাদী ঝোঁক রয়েছে (অর্থাৎ বাজারের শক্তিগুলোর উপর সবকিছু ছেড়ে না দিয়ে সামাজিক পরিকল্পনার উপর অনেকটা জোর দেওয়া), দি এন্ড অভ নেচার -এর লেখক বিল ম্যাককিবেন-এর মতো কয়েকজন সবচেয়ে দায়বদ্ধ পরিবেশবাদী কিউবা, ব্রাজিলের করিতিবা ও পোর্তো আলেগ্রে এবং ভারতের কেরালাকে এই রকম বাস্তুতান্ত্রিক পরিবর্তনের উদাহরণ হিসেবে দেখিয়েছেন।১২ জন বেলামি ফস্টারের মতে, অবশ্যই এগুলো এখনও আশার দ্বীপ মাত্র। এগুলো সামাজিক সম্পর্ক ও প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের ভোগের সম্পর্ক নিয়ে নানা নতুন পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া আর কিছুই না। এগুলোর ভাগ্য এখনও বৃহত্তর ব্যবস্থাটার দ্বারা উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া শ্রেণি ও সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের উপর নির্ভরশীল। গোটা পৃথিবীটাই পুঁজি ও তার বিশ্ব-বিচ্ছিন্নতার শক্ত মুঠোর মধ্যে রয়েছে। ব্যবস্থাটার কেন্দ্রে, যেখান থেকে মূলত এই গ্রহের উপর চাপ সৃষ্টি হয়, সেখানে মৌলিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই কেবল বাস্তুতান্ত্রিক বিপর্যয় এড়ানোর প্রকৃত সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। ফস্টারের মতে, সম্মিলিত উৎপাদকদের এক সমাজ সৃষ্টি করা যারা যুক্তিসম্মতভাবে প্রকৃতির সঙ্গে তাদের ভোগের সম্পর্ককে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, এবং তা করবে কেবল তাদের নিজেদের চাহিদা অনুসারে নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মগুলির এবং সার্বিক প্রাণের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। আজ সমাজতন্ত্রে উত্তরণ এবং এক বাস্তুতান্ত্রিক সমাজে উত্তরণ সমার্থক হয়ে গেছে।১১
বড় বড় শিল্প কারখানার জন্য, বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের জন্য কৃষি জমির পরিমাণ দিন কে দিন ব্যাপকহারে সংকুচিত হচ্ছে। বনভূমি হ্রাস পেয়েছে কয়েক গুণ বেশি। ফলে কম জমিতে অধিক ফসল উৎপাদন সময়ের চাহিদায় পরিণত হয়েছে। আধুনিক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলো অধিক ফসল উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। বলা হচ্ছে এটা বিজ্ঞানের বিরাট এক সফলতা। যদিও কম জমিতে অধিক ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে ফসলের নিজস্ব সক্রিয়তার ক্রমবিলুপ্তি/বিচ্যুতি ঘটছে এমনসব বিষয়গুলোকে যথাযথভাবে সামনে আনা হচ্ছে না। এ কারণে ফসলের স্বাভাবিক গুণাগুণ বিনষ্ট হচ্ছে কিংবা অন্যভাবে বলতে গেলে ফসলগুলো অনেকাংশে তার পুষ্টিগুণ হারাচ্ছে। আবার দেশি প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটছে। এদিকে অধিকমাত্রায় কৃত্রিম সার ব্যবহারের কারণে ফসলের গুণাগুণতো বিনষ্ট হচ্ছেই, কখনো কখনো নিজের অজান্তেই আমরা বিষ গ্রহণে বাধ্য হচ্ছি। উল্লেখ্য, উনিশ শতকের গোড়ায় জার্মানিতে তখনকার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে মূলত পাখিদের বিষ্ঠা দিয়ে চাষের সারের চাহিদা মিটতো। যখন প্রথম যুদ্ধ বাঁধলো তখন পেরু, চিলি এইসব দেশ থেকে আসা বিষ্ঠার সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেল। তখন জার্মান বিজ্ঞানীরা ভেবেচিন্তে বের করলেন বাতাস থেকে কি করে নাইট্রোজেন বের করে নিয়ে এসে অ্যামোনিয়া তৈরি করা যায়, যাকে আমরা কৃত্রিম সার বলি। যার নাম হেবার বস প্রসেস। এই কৃত্রিম সার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সব দেশই গ্রহণ করলো, কারণ ফসল বাড়াতে হয়েছিলো যুদ্ধ করতে গিয়ে।২ যাইহোক, পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থা ও জনসংখ্যার আধিক্য আমাদেরকে সেই যুদ্ধাবস্থার কৃত্রিমতার বাড়বাড়ন্ত থেকে এখন অবধি রেহাই দেয়নি। তাই আজ যাকে বিজ্ঞানের সফলতা বলে হৈ-হুল্লোড় করা হচ্ছে, সেদিকটা আসলে নতুন করে ভাববার সময় হয়েছে। সত্যিকার অর্থে পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থা এই বিষয়টিকে বিজ্ঞানের সফলতা বলে আস্ফোলন করে থাকে, তার নিজের টিকে থাকার স্বার্থে। অন্যদিকে তার দূষণের কারণে জনজীবন আজ বিপর্যস্ত। আমাদেরকে এই দূষণকারী-সর্বগ্রাসী ‘সভ্যকরণ’ দখলদারিত্বমূলক ব্যবস্থাকে হঠানোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাই বড় বড় কারখানাগুলোর বিলুপ্তি মানুষ তথা প্রাণীকূলের টিকে থাকার প্রয়োজনে অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। দরকার সমবায় পদ্ধতিতে চালিত ছোট ছোট কারখানা। একইসাথে অপ্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত নির্মাণ বন্ধ করা, এমনকি কৃষি, বনাঞ্চলের দিকে অধিক জমি ছেড়ে দেবার স্বার্থে আমাদের বসবাসের ঘরগুলোকেও যতটা সম্ভব ছোট করে আনতে হবে।
আবার একটা বিষয় খেয়াল করে দেখুন, পুজিমালিকরা তাদের কারখানার অকেজো-অপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলো সর্বদা নির্দিষ্ট মুনাফায় বিক্রি করছে, অন্যদিকে প্রায়শই দেখা যায় আমাদের কৃষকরা তার ফসল-শস্যদানার ন্যায্য মুল্য না পেয়ে পিঠ দেওয়ালে ঠেকবার অবস্থা, অথচ মানুষের জীবনধারণের জন্য যেগুলো কিনা অতিপ্রয়োজনীয় ও আবশ্যিক।
পরিবেশে বৈচিত্র্য যত বেশি, তা ততই স্থায়িত্বশীল অর্থাৎ সেখানে পরিবেশগত অস্থিতিশীলতার সম্ভাবনা কম। প্রাণ-প্রকৃতিবিদ বুকচিনের ভাষায়, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত কারখানাগুলোর আঁটসাঁট শিডিউলগুলো পূরণ করতে উদ্ভিদের বৃদ্ধি যত দ্রুত সম্ভব নিয়ন্ত্রিত হয়, প্রায়শই কোনও অঞ্চলের প্রাকৃতিক বাস্তুশাস্ত্র উপেক্ষা করে।১৩ তার মানে পুঁজিমালিকদের তাদের কারখানার জন্য দরকার হয় মূলত একক শস্য উৎপাদনের। ফলে কৃষিকে অধিকমাত্রায় যান্ত্রিকরণের দিকে নেওয়া হয় এবং প্রকৃতিজাত স্বতঃস্ফূর্ততার কোনোরকম তোয়াক্কা না করে যত কম সময়ে সম্ভব ফসল উৎপাদন করতে হয়। পোকা বা কীটপতঙ্গের বিস্তারলাভের জন্য একক শস্য হল আদর্শ পরিবেশ। এজন্য পোকামাকড় ও উদ্ভিদের রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রচুর পরিমানে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় (পঞ্চাশ বছর আগের তুলনায় ছয়গুন বেশি কীটনাশক বেশি ব্যবহার করেন কৃষকেরা১১)। পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানী কার্সন এই কীটনাশকগুলিকে নাম দিয়েছিলেন “জীবনাশক”, প্রাণীতত্ত্ববিদ চার্লস এল্টন যাকে ডেকেছেন “মৃত্যুবৃষ্টি” নামে। এইসব কীটনাশকগুলো কান্সারের জন্ম দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। অনুরূপভাবে, কৃষি-পশুদের যেগুলোকে খামারের নির্দয় পরিবেশের মধ্যে ঠাসাঠাসি করে রাখা হয়, ফলে শুধুমাত্র মাংসের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক অণু অবশেষ রয়ে যায় তা কিন্তু নয়, একইসাথে উৎপাদিত হয় অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণুও।
পলিথিন, প্লাস্টিকের দূষণ এভাবে চলতে থাকলে কয়েক শতাব্দী পরে পৃথিবী বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হবে। Science Advances জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা থেকে জানা যায়, প্লাস্টিক উৎপাদনের প্রথম দিন থেকে ২০১৫ সাল অবধি বিশ্ব প্রায় ৬.৩ বিলিয়ন টন প্লাস্টিকের বর্জ্য উৎপাদন করেছিল, যার মধ্যে ৯% পুনর্ব্যবহার করা হয়েছে, যদিও সমস্ত প্লাস্টিকের মাত্র ~১% একাধিকবার পুনর্ব্যবহার করা হয়েছে।১৪ প্লাস্টিকের বোতল ও পলিথিনে নদী ও হ্রদগুলো মারা যাচ্ছে। কয়লা ও ডিজেল তেলের নির্গমনে সামুদ্রিক জীবন আজ বিপর্যস্ত। মানুষ স্পষ্টই এখানে অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক পরজীবীর ভূমিকা পালন করছে। উদ্ভিদকূল, জলজ প্রাণী, দ্বীপ অঞ্চলের প্রাণীরা প্লাস্টিক বর্জ্যের জন্য তাদের অস্তিত্ব মারাত্মক হুমকিতে রয়েছে৷ খেয়াল করে দেখুন কারখানার মালিকরা রমরমা বিজ্ঞাপন দিয়ে কেমিক্যাল পূর্ণ, সতেজহীন দ্রব্যগুলো যার অধিকাংশই মূলত অকেজো, অপ্রয়োজনীয় সেগুলোকে পলিথিন-প্লাস্টিকে প্যাকেটবন্দী করে তারা মুনাফা লুটে আপনার স্বাস্থ্যহানীতো করছেই, অন্যদিকে প্রাণ-প্রকৃতির কি ক্ষতিটাইনা করছে। কিংবা প্লাস্টিকের বোতলের কোকোকলাজাতীয় পানীয়গুলোর স্বাস্থ্যগুণ নিয়ে একটাবার ভাবুন, তারপর ভাবুন আপনার ব্যবহারের পরে সেটা কোথায় যাচ্ছে তা নিয়ে। একইসাথে, প্লাস্টিকের বোতলে জল ভরে চালানকারী সংস্থাগুলি দরিদ্র দেশগুলো থেকে জল শুষে নিয়ে মুনাফার পাহাড় গড়ছে। অথচ এটাকে চালানকারী সংস্থা/কর্পোরেশনের আওতামুক্ত রেখে সারা পৃথিবীতে না ছড়িয়ে নেহাত যেসব দেশ/অঞ্চলে সুপেয় পানির অভাব রয়েছে সেখানে পুনর্ব্যবহারযোগ্য বোতলে (চূড়ান্ত লক্ষ্য হতে হবে বোতলের জল কোথাও যেন আর প্রয়োজন না হয়) স্থানীয়ভাবে পরিচালিত, গণনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার মাধ্যমে জলের চাহিদা মেটানো যায়। এর বাইরে আজকাল লোকজন যে নিত্যকার বাজারে, কিংবা বিভিন্ন পণ্য কিনতে পলিথিন ব্যবহার করছে, সেটা কিন্তু সচেতনতার মাধ্যমে, কিংবা ক্ষেত্র বিশেষ বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে (পাঁটের আঁশের ব্যাগ) তার রোধ করা সম্ভব। কিন্তু পুঁজিপতিদের কারখানার মোটা পেট সচেতনতা বোঝে না, বিশুদ্ধ মোড়কে তার অবিশুদ্ধ পেটকে আবৃত করাটাও যেমন সাধ্যাতীত, তেমনি সাম্যের পৃথিবীর বিরুদ্ধও।
বিশ্ব মৎস্যভাণ্ডার শোষণের তীব্রতা ও পুঁজি পুঞ্জীভূতকরণের চরম বিন্দু হল ফ্যাক্টরি ট্রলার। ফ্যাক্টরি ট্রলার (একটা ফুটবল মাঠের মতো বড়) এক হাজার ফুট লম্বা নাইলনের জাল সমুদ্রের মধ্যে দিয়ে টেনে নেয়, একেকবারে মাছ ধরার সম্ভাব্য পরিমাণ ৪০০ টন। বর্তমান বিশ্বের সমুদ্রবক্ষে ৩৭০০০-এরও বেশি শিল্প-ট্রলার রয়েছে। এদের সাহায্যে বছরে মোট আট কোটি টন মাছ ধরা হয়।১৫ ২০০০ সালে ৪ কোটি টন মাছ ধরতে ১৩ বিলিয়ন গ্যালন জ্বালানী পোড়াতে হত এবং তার ফলে প্রায় ১৩৪ কোটি টন কার্বন ডাই অক্সাইড মুক্ত হত। এর মানে হল বিশ্বব্যাপী মাছ ধরার ব্যবসা যে-পরিমাণ খাদ্য প্রোটিন শক্তির জোগান দেয়, ব্যবহার করে তার ১২.৫ গুণ জ্বালানী শক্তি।১৬ ধরা হয় যে বাণিজ্যিক মৎস্যশিকারে পৃথিবী জুড়ে ২.৭ কোটি টন মাছ গড়ে প্রতিবছর ‘ফেলনা’ (অর্থনৈতিকভাবে দরকারি নয়, তাই তারা ‘ফেলনা মাছ’। এগুলোকে সাধারণত পিষে ফেলে সমুদ্রেই ছুঁড়ে ফেলা হয়। এই অন্যান্য মাছের মধ্যে যে মাছ ধরতে চাওয়া হচ্ছে অর্থাৎ অর্থনৈতিকভাবে দরকারি মাছের চারাও থাকে এবং এই চারা মাছ ধ্বংসের ফলে তার পুনর্জীবন মারাত্মক হুমকি বা ক্ষেত্রবিশেষ বিলুপ্তির সম্মুখীন হয়) হিসেবে পরিত্যক্ত হয়।১৭ এই প্রক্রিয়ায় বাসস্থান ও বাস্তুতন্ত্রের ভিতর পৌষ্টিক জাল বিচ্ছিন্ন হয়। সেনেগাল, মোজাম্বিক, মরিটানিয়া, এঙ্গোলা প্রভৃতি আফ্রিকান দেশগুলো ভয়াবহ আর্থিক অবস্থার চাপে মাছ ধরার স্বত্ব ইউরোপীয় ও এশীয় জাতিরাষ্ট্র ও কোম্পানিগুলোকে বেঁচে দিতে বাধ্য হয়। গত তিন দশকে আফ্রিকার মৎস্যসংখ্যা ৫০ শতাংশ কমে গিয়েছে।১৮ ধারণা করা হচ্ছে যে বিশ্বমহাসাগরের ৯০ শতাংশ বড় শিকারি মাছই হারিয়ে গেছে।১১ মৎস্যভাণ্ডারের প্রবল ক্ষয় পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে বাধ্য করেছে মুনাফা বৃদ্ধির নতুন রাস্তা খুঁজতে। পুঁজির ছন্দ পেতে মাছের নিবিড় উৎপাদনের জন্য পুঁজিবাদী জলজ চাষের ব্যাপকতা বাড়ছে। যেখানে একটা ছোট খোঁয়াড়ে হাজার হাজার মাছ থাকে। মাছগুলো স্বাভাবিক পরিবেশ এবং খাদ্যজাল ও বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন বিনিময় সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন। যেখানে মাছের যৌন জীবনচক্র বদলে ফেলা হয়। গরুর মাংস, শুকর মাংস এবং মুরগি মাংসের মতো চাষের মাছকেও মৎস্যখাদ্য খাওয়ানো হয় যাতে অ্যান্টিবায়োটিক থাকে। ফলে সমাজে অনিয়ন্ত্রিত অ্যান্টিবায়োটিকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।১৯ মাছের জীন প্রতিস্থাপন-যাতে এক প্রজাতির ডিএনএ অন্য প্রজাতিতে প্রতিস্থাপন করা হয় যেন ওজন বৃদ্ধির হার বাড়ে। ফলে ডিএনএ প্রতিস্থাপিত মাছ সাধারণ মাছের ৬০ শতাংশ থেকে ৬০০ শতাংশ বড় হচ্ছে।২০ ফলে বদলে ফেলা হচ্ছে প্রকৃতিকে। মার্কস দুঃখ করেছিলেন যে পুঁজির কাছে, ‘সময়ই সব, মানুষ কিছু নয়; সে বড় জোর সময়ের শবদেহ। গুণ আর কোন ব্যাপারই নয়। পরিমাণই সব নির্ধারণ করে।১০ উল্লেখ্য, বিশ্ব মাছের বাজারে জলজ চাষ জোগান দিত ১৯৭০ সালে মাত্র ৩.৯ শতাংশ, ২০০০ সালে সেটা হয় ২৭.৩ শতাংশ এবং ২০০৪ সালে সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ শতাংশ।২১ যাইহোক এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় খোঁজাটা জরুরি।
কৃষির রক্ষার্থে স্থানীয় খাদ্য উৎপাদনকে পুনর্জীবিত করতে হবে। বাজারকে সমস্ত অর্থনীতির অগ্রাধিকার ঠিক করতে না দিয়ে স্থানীয় ও গোষ্ঠীগত প্রয়াস বাড়াতে হবে। সাধারণ জনগণ হয়তো একদিনে পুঁজিবাদী বাজার ব্যবস্থাকে নাই করে দিতে পারবে না, কিন্তু তিলে তিলে তাকে নিঃশেষিত করার সক্ষমতা সাধারণ জনগণের রয়েছে। তার জন্য দরকার সচেতনতার, একইসাথে সামাজিক পরিকল্পনার উপর জোর দেওয়া। আজ পৃথিবীর জনসংখ্যার শতকোটি মানুষের যা উপার্জন, মাত্র কয়েকশো মানুষের মিলিত সম্পদের পরিমাণ তাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বজোড়া অসাম্যকে টিকিয়ে রাখতে বিশ্বব্যাপী নিপীড়নের কর্মসূচি বানানো হয়েছে, যা চলমান রয়েছে। প্রকৃতঅর্থে এই কয়েকশো জন মানুষ প্রয়োজনের চাইতে অপ্রয়োজনীয়-অকেজো, ক্ষতিকর ও কৃত্রিম সব বস্তু/অবস্তু দিয়ে মুনাফা লাভের আশায় মানুষের ঘাড়ের উপর চেপে বসেছে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য দরকার মাঠের টাটকা ফসল, কারখানার প্লাস্টিক-পলিথিনে প্যাকেটজাত অপ্রয়োজনীয়-অকেজো, ক্ষতিকর পণ্যগুলো যতটা নয়; মানুষের জন্য দরকার জলাভূমি তথা হ্রদ-নদী-নালা-সমুদ্রের প্রাকৃতিক মাছ, একটা ছোট খোঁয়াড়ে পরিপালিত অ্যান্টিবায়োটিকযুক্ত মাছ যতটা নয় (একইকথা কৃষি-পশু খামারের জন্য প্রযোজ্য), মানুষের বেঁচে থাকার জন্য দরকার গাছপালা, নদী-নালা, পাহাড়-পর্বত বেষ্টিত দূষণহীন এক প্রাণ-প্রকৃতিমূলক সবুজ পৃথিবী, উন্নয়নের-প্রবৃদ্ধির শোঅফ করা অবকাঠামো কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভার্চুয়াল জগত যতটা নয়। এই ব্যাপারগুলো ঠিকঠাক মতো বুঝতে পারলে পৃথিবীর মানুষের পক্ষে কয়েকশো লোকের কারসাজিতে ঘাড়ের উপর চাপানো ভারটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না। তবে শুধু ভারটাকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার মধ্যে বিষয়টি সীমাবদ্ধ নয়, সামাজিক তথা গোষ্ঠীবদ্ধ প্রকল্পগুলোকে এগিয়ে নেওয়াটাও জরুরি। যার লক্ষ্য হাজার হাজার মানুষের অতি-সতর্ক যত্নশীল প্রয়াস।
পরিবেশ দূষণ নিয়ে আলাপ করতে হলে অন্য যে কথাটি গুরুত্বপূর্ণ তা হল জ্বালানি ব্যবস্থাপণা। সেক্ষেত্রে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো প্রকৃতি বিনাশী প্রকল্পগুলো থেকে সরে আসাটা বাধ্যতামূলক। আবার নদীতে বাঁধ তৈরী করে নদীর পট পরিবর্তন করাটা পৃথিবীতে প্রাণীকূলের অস্তিত্বকে মারাত্মক হুকমির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাব মানুষকে বাস্তহারা করছে, ফসলি জমি চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। কিংবা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর প্রাণঘাতী তেজস্ক্রিয় পদার্থ ব্যাপক পরিবেশ দূষণ ছড়ায় এবং যার বিশাল এবং স্পষ্টই ধ্বংসাত্মক আকার রয়েছে। কেননা তা থেকে যে তেজস্ক্রিয় জঙ্গাল বেরোয় তা শত শত, হাজার হাজার এমনকি নিযুত নিযুত বছর সক্রিয় থাকে। তাই কয়লা, পারমাণবিক, জলবিদ্যুৎ (বাঁধ দিয়ে) এগুলোর তৎপরতা আমাদের প্রাণ প্রকৃতি তথা প্রকৃতিতে মানুষসহ অপরাপর জীবের টিকে থাকার জন্য ভয়াবহ হুমকির কারণ। এজন্য আমাদের হাতে বিকল্প তাহলে কি? নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎসগুলো কতোটা চাহিদা পূরণ করতে পারবে—আমাদের সামনে এ প্রশ্নটা তখন এসে যায়। বলা যেতে পারে সৌর, বায়ু শক্তি আমাদের হাতে উত্তম বিকল্প। কিন্তু এককভাবে কোন শক্তি দিয়ে এই চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়। এজন্য আমাদের দরকার বিভিন্ন নবায়নযোগ্য শক্তির সমন্বয়সাধন। পৃথিবীর যে অক্ষাংশে সূর্যের আলোর প্রকোপ বেশি সেখানে আমরা সৌরশক্তির উপর অনেক বেশি নির্ভর করতে পারি। আবার যে অঞ্চলগুলোতে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ বেশি সেখানে আমরা বায়ুচালিত টারবাইনের উপর অনেক বেশি নির্ভর করতে পারি। ১৯৬৫ সালে বসে প্রাণ-প্রকৃতিবিদ মারে বুকচিন কল্পনা করতে পারেননি যে এমন সোলার কালেক্টর ডিজাইন করা সম্ভব হবে যা কয়েক হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে, তা কিন্তু আজ বাস্তবে সম্ভব হয়েছে। তাই সৌর ও বায়ু শক্তির সর্বোচ্চ ক্রমবিকাশের জন্য বিজ্ঞানকে আরো বেশি জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। একইভাবে পানি শক্তিকেও, তবে নদীতে বাঁধ দেবার মতো বিপথগামী পথে হেঁটে নয়। যেমন পানিকে ইলেক্ট্রোলাইসিস করে হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরি (বিষয়টিকে পরমানু ফিশনের সাহায্যে জল ফুটিয়ে তা থেকে বিদ্যুৎ বানানোর প্রক্রিয়ার সাথে ঘুলিয়ে ফেলবেন না) করার মতো প্রকল্পগুলোকে আমরা বড় পরিসরে এগিয়ে নিতে পারি। বায়োগ্যাস প্রযুক্তির উন্নতির জন্যও এজন্য আমাদেরকে পথ ছেড়ে দিতে হবে। হালকা নিউক্লিয়াসের সংযোজনে গঠিত ফিউশন প্রক্রিয়ার সম্ভাব্যতা ও তার দূষণহীনকে যাচাই করে দেখা যেতে পারে। তবে বিশাল বিশাল কারখানা, বিরাটকায় নগরবলয়ের চাহিদা মেটানো এই বিশুদ্ধ প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্ভব নয়। কিন্তু শহরে জনসমাজ যদি আকারে ছোট হয়, কারখানাগুলো যদি আকারে খাটো ও সামাজিক মালিকানার হয় তখন এ বিশুদ্ধ প্রযুক্তিগুলো কাজে না আসার কোন কারণ নেই। একটা বিষয় এখানে লক্ষণীয় যে, পূর্বেই আমরা জেনেছি যে মানুষের সাম্যের প্রয়োজনে কারখানাগুলো ব্যক্তি মালিকানার না হয়ে সামাজিক মালিকানার হতে হবে, জনসমাজকে বিকেন্দ্রীভূত হতে হবে। এখন তার সাথে যে কথাটা যোগ হল মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য হলেও একটি সাম্য ও প্রাণ-প্রকৃতিমূলক সমাজ ব্যবস্থার প্রয়োজন।
পেট্রোলচালিত মোটরযানগুলোর দুর্ঘটনা, পরিবেশ ও শব্দদূষণে তার ভূমিকা এড়াতে ঠিক কোন পদক্ষেপগুলো কার্যকর তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। বিকেন্দ্রীভূত ও শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা ছাড়া ওসব আইন, চুক্তি এগুলো করে কিন্তু পরিবহনগুলোর দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব নয়। তেলের কোয়ালিটি বদলে, ফুয়েল এফিশিইয়েন্সি বাড়িয়ে (যেমনটা লন্ডন, টোকিও করেছে২) এই দূষণ রোধ একটি সাময়িক সমাধান বটে। ছোট দূরত্বের পরিবহণের জন্য বৈদ্যতিক গাড়ির ব্যবহার ও দীর্ঘ দূরত্বের পরিবহণের জন্য একটিমাত্র লাইনের রেলপথ ব্যবহার করে১৩, নিরাপদ ব্যাটারিচালিত যান ব্যবহার এবং টেকসই সমাধান হিসেবে পরিবেশ ও শব্দদূষণ রোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটি তা হল নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা। ফসিল ফুয়েলের (পেট্রোল, প্রাকৃতিক গ্যাস) উত্তম বিকল্প যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদেরকে তা বের করতে হবে। যে জিনিসটা তৈরি হতে কয়েকশত লক্ষ বছর লেগেছে, আমরা তাকে কিন্তু চোখের নিমিষে পুড়িয়ে দিচ্ছি। এই যে কয়লা, পেট্রোল, প্রাকৃতিক গ্যাস এগুলোর উত্তোলনের ফলে বড় মাত্রায় একটা পরিবেশগত ক্ষতিতো রয়েছেই, আবার এদিকটাও ভাবতে হবে এগুলোর রিসোর্সও ফুরিয়ে আসছে।
দক্ষিন এশিয়ার ভারত, বাংলাদেশ এ সমস্ত দেশের কথা বললে বাড়তি জনসংখ্যা ও অবকাঠামো, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অদক্ষ চালক, অসৎ পরিবহন মালিকপক্ষ (চালক দক্ষ হলেও অর্থকষ্টের জন্য ওভারটাইম করা, একটানা দীর্ঘ সময় গাড়ি চালানো, মানসিক অশান্তি, অর্থলিপ্সুতা এগুলো দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ), রাজনৈতিক প্রভাবে চাঁদাবাজি, ব্রিজ-সেতু-ফ্লাইওভারে অধিক টোল আদায়, অসৎ ও দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ-ঠিকাদারি ব্যবস্থা এগুলোকে না শুধরিয়ে এ ব্যবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। পরিবহন মালিকরা প্রথমত শোষণটা চালায় তার নিজস্ব শ্রমিকদের উপর, তারপর যাত্রীদের উপর। পরিবহণ মালিকপক্ষ এখানে মূলত অসৎ-দুর্নীতিগ্রস্থ-অত্যাচারমূলক রাষ্ট্রের অংশীদার কিংবা তার মদদপুষ্ট। তাই সত্যিকার অর্থে, যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যক্তি মালিকানার পরিবহন ব্যবস্থা থাকছে ততক্ষণ পর্যন্ত যানবাহনের দুর্ঘটনা, পরিবেশ বা স্বাস্থ্যগত ক্ষতি এগুলোর কোনটাই এ দেশগুলোতে এড়ানো সম্ভব নয়।
বলা হচ্ছে এটা অতিমারির যুগ। সার্স (২০০৩), ইনফ্লুয়েঞ্জা (২০০৯), চিকুনগুনিয়া (২০১৪), জিকা (২০১৫), ইবোলা (২০১৪-২০১৫) এবং সর্বশেষ চলমান এই করোনা ভাইরাস যার প্রমাণ দেয়। বনভূমি নিধন, বন্যজীবনের আবাস এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, বন্যপ্রাণী শিকার, রাস্তা তৈরি, খনিজ উত্তোলন, সাগরে নিয়ট্রিয়েন্ট ভেসে যাওয়া, অ-টেকসইভাবে সামুদ্রিক খাবার আহরণ, নগর ব্যবস্থাপনা ও ‘সভ্যকরণ’ দখলদারিত্বকে অতিমারির কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে উদ্ভূত সংক্রামক রোগের ৭৫ শতাংশ বন্যপ্রাণী থেকে মানুষের দেহে সংক্রমিত বলে প্রমাণ মিলেছে।২ তার মানে মানুষের দ্বারা প্রাকৃতিক বিশ্বকে ধ্বংস করার প্রবণতায় মূলত আজকের এসব মহামারির জন্য দায়ী। অর্থাৎ মানুষ ধ্বংস করছে প্রাকৃতিক বিশ্বকে এবং শেষ পর্যন্ত নিজেকে।
একইভাবে, স্বাস্থ্যখাতকে ব্যক্তি মালিকানার অধীনে রেখে সাম্যের সমাজ একটি অবাস্তব কল্পনা। এক্ষেত্রে অতীতকালের চীনের পায়ে হাঁটা ডাক্তার কিংবা কিউবার বর্তমান স্বাস্থ্যব্যবস্থা আমাদের সামনে প্রাথমিক উদাহরণ। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকেও সেজন্য নতুন আঙ্গিকে সাজাতে হবে।
তথ্যসূত্র:
১) জাভেদ হুসেন,”পৃথিবীতে গাছের সংখ্যা কত?“, দৈনিক প্রথম আলো, ০২ অক্টোবর, ২০১৯
২) দীপেশ চক্রবর্তী, জলবায়ু পরিবর্তন ও বর্তমান অতিমারি: মানুষের ইতিহাসে একটি সন্ধিক্ষণ (লৌকিক প্রকাশন, ২০২১)
৩) Benjamin S. Halpem, et al., “Global Map of HumanImpact on MarineEco-systems,” Science 319 (2008): 948-952; Jennifer L Molnar, et. al., “Assessing the Global Threat of Intasive Species to Marine Biodiversity,” Frontiers in Ecology and the Environment 6 (2008); Roberts, The Unnatural History of the Sea (Washington, DC: Island Press, 2007)
৪) Cart Folke, et al, “Regime Shiffts, Resilience, and Biodiversity in Ecosystem Management,” Annual Review of Ecology, Evolution, & Systematics 35 no. 1 (2004): 557-81; O. Hoegh-Guldberg, et al., “Coral Reefs Under Rapid Climate Change and Ocean Acidification,” Science 318 (2007): 1737-42.
৫) বিবিসি বাংলা, “জলবায়ু পরিবর্তন: ক্লাইমেট চেঞ্জ কী? কীভাবে এবং কেন ঘটছে? বিষয়টির একটি সহজ-সরল ব্যাখ্যা“, ১২ অক্টোবর ২০২১
৬) নোয়াম চমস্কির সাক্ষাৎকার, “জলবায়ু সংকট: এখনো সব শেষ হয়ে যায়নি” দৈনিক প্রথম আলো, ২৪ আগস্ট ২০২১
৭)Jim Hansen, “The Threat to the Planet”, The New York Review, 13 July 2006
৮) John Bellamy Foster, Marx’s Ecology: Materialism and Nature, Monthly Review Press, 2000, p.155-170
৯) Karl Marx, Capital, vol. 3, p. 959
১০) Karl Marx, The Poverty of Philosophy
১১) আশীষ লাহিড়ী সম্পাদিত, আধু্নিক পরিবেশবিজ্ঞান ও মার্কসবাদ (পিপলস বুক সোসাইটি, ২০০৯)]
১২) Bill Mckibben, Hope, Human and Wild: True Stories of Living Lightly on the Earth, Milkweed Editions (January 12, 2007) এবং Deep Economy: The Wealth of Communities and the Durable Future, St. Martin’s Griffin (March 4, 2008)
১৩) Murray Bookchin, “Ecology and Revolutionary Thought“, The Anarchist Library, February 1965
১৪) Geyer, Roland; Jambeck, Jenna R.; Law, Kara Lavender, “Production, use, and fate of all plastics ever made”, Science Advances, 3 (7): e1700782, July 2017
১৫) William Warner, Distant Water (Boston: Little, Brown and Company, 1983)
১৬) Peter H, Tyedmers, Reg Watson, and Daniel Pauly, “Fueling Global Fishing Fleets,” Ambio 34 no. 8 (2005): 635-38.
১৭) Dayton L. Alverson and Steven E. Hughes, “Bycatch,” Reviews in FishBiology and Fisheries 6 (1996): 443-62; Lany B. Crowder and Steven A. Murawski, “Fisheries Bycatch,” Fisheries 23 (1998):8-16; Hamington, Myers, and Rosenberg, “Wasted Fishery Resources,” lance D. Monrgan and Ratana Chuenpagdege, Shiffting Gears (Washington, DC: Island press 2003), Dayton L. Alverson, Mark H. Freeberg, Steven A. Murawski, and J. G. Pope, “A Global Assessment of Fisheries Bycatch and Discard,” FAO Fisheries Technical paper 339 (Rome: FAO, 1996).
১৮) Sharon Lafraniere, “Europe Takes African’s Fish, and Boatloads of Migrants Follow,” New York Times, January 14, 2008; Elisaheth Rosenthal, “Europe Appetite for Seafood propels illegal Trade,” New York Times, January 15, 2008; John W. Miller, “Offshore Disturbance: Global Fishing Trade Depletes African Waters, ” Wall Street Journal, July 18, 2007.
১৯) Don Staniford, Silent Spring of the Sea, ” in Stephen Hume, et al., (Eds.), A Stain Upon the Sea (Madeira Park, British Columbia: Harbour Publishing, 2004), 149; Ronald Hites, et al., “Global Asessment of Organic Contaminants in Farmed Salmon,” Science 303 (2004): 226-29; Rachel Carson, Silient Spring (Boston: Houghton Mifflin, 1962).
২০) Thomas T. Chen, et al., ” Transgenic Fish and Its Application in Basic and Applied Research,” Biotechnology Annual Review 2 (1996): 205-36.
২১) FAO, State of World Fisheries, 2002; FAO, The State of World Fisheries, 2006,3.