- অনুবাদ: আবদুল্লাহ হেল বুবুন
[পুঁজিবাদী বিকাশ কোথাও ‘শান্তিপূর্ণ’ প্রক্রিয়ায় হয় না, এই বিকাশ স্বভাবগতভাবেই ভায়োলেন্স নির্ভর। অষ্টাদশ শতকের শিল্প বিপ্লব ঘটত না, যদি না ‘এনক্লোজার’ পলিসি এক বিশাল জনগোষ্ঠীকে ভূমিহীন না করত। এই বিশাল জনগোষ্ঠীই পরবর্তীতে ইংল্যান্ডের ক্রমবর্ধমান ফ্যাক্টরিগুলোর জন্য সস্তা শ্রম নিশ্চিত করে। বাংলাদেশে পুঁজিবাদী বিকাশও শান্তিপূর্ণভাবে ঘটেনি। বাংলাদেশে শিল্পায়ন, বিশেষ করে পোশাক শিল্পের বিকাশ সম্ভব হয়েছে একটি সস্তা ও ভূমিহীন শ্রমিক শ্রেণির উপস্থিতির কারণে। কোন কোন সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক উপাদান এই সস্তা ও ভূমিহীন শ্রমিক শ্রেণিকে সম্ভবপর করে তুলেছে, তা-ই এই প্রবন্ধে আলোচিত হয়েছে। এছাড়া, এই প্রবন্ধের আরেকটি ফোকাস ছিল প্রচণ্ডভাবে অসম পৃথিবী, যেখানে অধিকাংশ দেশের অর্থনীতি অনেকাংশেই নির্ভর করে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর মনমার্জির উপর। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি এরকম নির্ভরশীলতার একটি উদাহরণ। লেখক প্রবন্ধে এই নির্ভরশীলতা থেকে উত্তরণের পথ দেখানোরও চেষ্টা করেছেন। তারেক হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। তিনি নরওয়ের ইউনিভার্সিটি অব বারগেন থেকে সামাজিক নৃবিজ্ঞানে পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। এছাড়া, তিনি লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর এশিয়ান স্ট্যাডিজ থেকে পোস্টডক্টোরাল রিসার্চ ফেলোশিপ অর্জন করেছেন। তার কাজের বিষয়বস্তুতে দেখা যায় গার্মেন্টস শ্রমিক, কাজের নৃবিজ্ঞান, রাষ্ট্র গঠন, রাজনৈতিক নৃবিজ্ঞান ও সাম্যবাদ। তার এই প্রবন্ধটি Red Pepper ম্যাগাজিনে The Cost of Clothes শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিলো। – অনুবাদকের ভূমিকা]
১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর, এই পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সাফাল্যকে দেখা হচ্ছে এক বিস্ময় হিসেবে। এক সময়ে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ নামে পরিচিত এই দেশে গত ৩০ বছরে বার্ষিক মোট জাতীয় উৎপাদন ৬ শতাংশেরও বেশি হারে বেড়েছে, যা বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে এশীয় ‘টাইগার অর্থনীতি’-র স্বীকৃতি৷ এই আপাত সাফাল্যের জন্য সাধারণত বাণিজ্যের উদারীকরণ (liberalisation), বিকেন্দ্রীকরণ ও বেসরকারিকরণকে (privatisation) কৃতিত্ব দেয়া হয়। তবে এদেশের কৃষি সম্প্রদায়ের উপর এই অর্থনৈতিক উদারবাদের প্রভাব ছিল ভয়াবহ, কারণ ঋণ তাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি কেন্দ্রীয় উপাদানে পরিণত হয়। এবং অনেকেই বাধ্য হয় সস্তা মজুরি শ্রমিক হিসেবে দেশের ক্রমবর্ধমান কারখানাগুলোতে কাজ করতে।
স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্ট
২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর, বাংলাদেশ আরো ২৪ বছর পাকিস্তান কর্তৃক জাতীয় সম্পদ লুট ও শোষণের শিকার হয়েছে। এরপর ১৯৭১ সালে নয় মাসের এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীনতার পর নতুন সরকার এদেশের বিঃধস্ত অর্থনীতিকে পুনর্গঠনের জন্য বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও অন্যান্য দাতা সংগঠনের থেকে সহায়তা গ্রহণ করে। এই ‘সহায়তা’-র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান ছিলো স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্ট প্রোগ্রাম।
[অনুবাদকের নোট: স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (SAPs) বলতে সাধারণত কিছু অর্থনৈতিক সংস্কারমূলক ব্যাবস্থাকে বোঝায় এবং এই ব্যাবস্থাগুলোকে আইএমএফ কিংবা বিশ্ব ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার জন্য প্রত্যেক দেশরই মেনে চলতে হয়। যেমন: অর্থনীতিতে সরকারি ব্যয় কমানো, বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য বাজার উন্মুক্তকরণ ইত্যাদি।
১৯৮০ সালের মধ্যে সরকার পরিচালিত “সবুজ বিপ্লব” কৃষি উৎপাদনে ভর্তুকির পরিমাণ কমায় এবং বাণিজ্যের উদারীকরণ করে। অর্থনৈতিক উদারবাদের এই ট্রেন্ড চলতে থাকে আশি ও নব্বই দশকজুড়ে: আমদানির উদারীকরণ, শস্য বাজারের বেসরকারিকরণ এবং জনগণের মাঝে শস্যের বণ্টন নিশ্চিত করতে এতোদিন ধরে পরিচালিত সরকারী প্রোগ্রামগুলো হ্রাসকরণ।
স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্টের পূর্বে কৃষকদের ভর্তুকি মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি, বীজ ও সার সরবরাহ করা হতো। কিন্তু আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংক আরোপিত স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্টের নীতি অনুযায়ী, সরকার ভর্তুকির পরিমাণ তাৎপর্যপূর্ণরূপে কমিয়ে ফেলে, যার ফলশ্রুতিতে কৃষিতে ব্যবহৃত পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। এবং, তখনই কৃষি উৎপাদনের জন্য কৃষকদের বেসরকারি খাতের উপর নির্ভরশীলতা শুরু হয়। একইসাথে, কৃষকরা সেচ সুবিধা ও যন্ত্রপাতির জন্য বিনিয়োগ করা শুরু করে। এসব কিছুই কৃষকের উৎপাদন খরচ বাড়িয়েছে, তবে বাজারে কৃষি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়নি। ফলে বিনিয়োগের তুলনায় উৎপাদক কৃষকের বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়। এই ট্রেন্ডের একটি ধ্বংসাত্মক পরিণতি ছিল কৃষকদের মাঝে ক্রমবর্ধমান ঋণগ্রস্ততা। এই কৃষকরাই পরবর্তীতে উৎপাদনের উপকরণের উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং শেষ পর্যন্ত মজুরি শ্রমিক হিসবে ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে বাধ্য হয়।
বিশেষ করে নারীদের জন্য এই পরিস্থিতি ছিলো আরো চ্যালেঞ্জিং। কারণ, আশির দশকে যন্ত্রনির্ভর রাইস মিলের আবির্ভাব ঘটে, যার ফলে হঠাৎ করে তখন পর্যন্ত নারীদের আয়ের একটি বিশাল উৎস — ধান শুকানো ও মাড়ানো — অস্তিত্বহীন হয়ে যায়। ভূমিহীন পুরুষ আয়ের বিকল্প উৎস খুঁজে পেলেও অধিকাংশ নারীর আয় ও উৎপাদনের উপকরণের উপর আর কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না।
ক্ষুদ্রঋণ, দেনা ও গার্মেন্টস শ্রমিক
নতুন ভূমিহীন শ্রেণির ক্রমবর্ধমান দরিদ্রতা দূর করার জন্য এনজিও (NGO) গুলো গ্রামীন দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারীদেরকে সামাজিক প্রতিবন্ধকতার বেড়াজাল ভাঙতে এবং উপার্জন মূলক কার্যক্রমে যুক্ত হতে উৎসাহিত করতে শুরু করে। ২০০৬ সালে গ্রামীন ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও তার ব্যাংক-কে “সমাজের নিচ থেকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন” এর জন্য নোবেল পুরষ্কার প্রদান করা হয়। কিন্তু, যেভাবে ক্ষুদ্রঋণ আরো ব্যাপক পরিমাণে ঋণগ্রস্ততা তৈরি করে, তা লামিয়া করিম (২০১১) ও আমিন রহমান (১৯৯৯) এর মতো গবেষকরা খুব দক্ষভাবেই দেখিয়েছেন। এবং এই ঋণগ্রস্ততা নারীদেরকে (শ্রমের বিনিময়ে) মজুরি উপার্জনের উপর আরো বেশি নির্ভরশীল করে তোলে। যখন তারা ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণ করতো, তখন তাদেরকে সাপ্তাহিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে হতো। এবং এই ক্ষুদ্রঋণে সুদের পরিমাণ ছিল অনেক বেশি । এবং এই সাপ্তাহিক কিস্তি প্রদানের জন্য তাদেরকে আবার অন্যান্য ক্ষুদ্রঋণ দাতা প্রতিষ্ঠান থেকে লোন নিতে হতো। সাধারণত গ্রামীন নারীদের জন্য ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণের অর্থ ছিল উপার্জন, ঋণ গ্রহণ ও কিস্তি প্রদানের একটি চক্রের মাঝে বন্দী হওয়া।
বাংলাদেশে শিল্পায়ন দাঁড়িয়ে আছে সস্তা ও অধিকারহীন শ্রম শক্তি বা বাহিনীর উপর। অর্থ্যাৎ কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থার পুনঃবিন্যাস এবং এই পুনঃবিন্যাস ও ক্ষুদ্রঋণের মিথস্ক্রিয়ায় তৈরি ঋণগ্রস্ততাই জন্ম দিয়েছে এক বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠীকে, যাদের শ্রম বিক্রি ছাড়া জীবিকা অর্জনের অন্য কোন উপায় নেই। দেশের উঠতি ফ্যাক্টরিগুলোর জন্য এই জনগোষ্ঠীই ছিল সস্তা ও আবশ্যকীয় শ্রমের উৎস।
১৯৭৮-৭৯ সালে, পোশাল শিল্পের বৈশ্বিক বিস্তৃতির শুরুর দিকে, বাংলাদেশে প্রথম গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি দেশের রপ্তানি আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস এবং এই সেক্টর লক্ষ লক্ষ নিম্ন আয়ের কর্মসংস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে; বিশেষ করে নারীদের জন্য। এনজিও থেকে গ্রহণ করা পারিবারিক লোন (সাপ্তাহিক) কিস্তিতে পরিশোধ করার জন্য অনেক গ্রামীণ নারী যেভাবে গ্রাম থেকে রাজধানী ঢাকায় এসে ফ্যাক্টরিতে কাজ করে এবং পরিবারকে টাকা পাঠায়, তা আমার বই এভ্রিডে লাইফ অব রেডিমেড গার্মেন্টস কর্মী ইন বাংলাদেশ (২০২২) – এ আলোচিত হয়েছে।
যদিও গার্মেন্টস শিল্পে লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের উপস্থিতিকে দেখা হয় বাংলাদেশের “অর্থনৈতিক বিস্ময়” ও “নারীর ক্ষমতায়ন”- এর প্রতীক হিসেবে, তবে বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন। এরকমই এক বাস্তবতা হলো ২০১৩ সালের রানা প্লাজা ধস (রান্না প্লাজা একটি আট তলা ভবন, যেখানে আটটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ছিল)। এই ঘটনা তখন আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল। এখন আমরা জানি যে, ফ্যাক্টরি ব্যাবস্থাপকরা চাকরিচ্যুত করা ও বেতন আটকে দেয়ার ভয় দেখিয়ে শ্রমিকদের অনিরাপদ ভবনে কাজ করতে বাধ্য করেছিল এবং এর পরিণতিতেই এক হাজার শ্রমিকের মৃত্যু ঘটে।
যদিও বিল্ডিং সেইফটি নিশ্চিত করণের জন্য ফ্যাশন ব্যান্ডগুলো বেশ কিছু প্রতিকার মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যেমনঃ ক্রেতা ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোর মধ্যকার অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স এগ্রিমেন্ট। তবুও রানা প্লাজা ধসের এক দশক পরে, শ্রমিকরা এখনও কঠোর কর্ম পরিবেশের মুখোমুখি হচ্ছে। যেমনঃ বৈশ্বিক ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর শিপমেন্ট ডেডলাইন পূরণের জন্য শ্রমিকরা দিনে ১২-১৬ ঘণ্টা কাজ করছে। এক নারী পোশাক শ্রমিক (যার সাক্ষাৎকার আমি নিয়েছিলাম) জানান, “আমরা পানিও পান না করার চেষ্টা করি, যাতে আমাদের টয়লেটে যেতে না হয়। আমরা খাবারের জন্যও বিরতি নেই না। আমাদেরকে প্রোডাকশান টার্গেট পূরণ করতে হবে।”
আমরা কী করতে পারি
বর্তমানে সরকার ও বেসরকারি পুঁজি বৈশ্বিক পোশাক শিল্পে দেশের উচ্চ অবস্থানকে উদযাপন করছে। এইচ অ্যান্ড এম, মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার ও প্রিমার্ক এর মতো হাই-স্ট্রিট ব্র্যান্ড (যেসব ব্র্যান্ড ট্রেন্ড ও সামর্থের উপর ভিত্তি করে কম মূল্যে পণ্য উৎপাদন করে এবং টমি হিল্ফিগার ও বারবেরির মতো হাই-এন্ড ব্র্যান্ড (যেসব ব্র্যান্ড উচ্চ মানের দামী পণ্য বিক্রি করে) বাংলাদেশের ফ্যাক্টরি ব্যবহার করে। প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে পাল্লা দিয়ে বাজার দখলে রাখতে এই ব্র্যান্ড গুলো পণ্যের দাম যতোটা সম্ভব কম রাখার চেষ্টা করে। তবে এই ব্র্যান্ডগুলোই উৎপাদক ফ্যাক্টরিগুলোকে উৎপাদন ব্যয়ের প্রায় সমান অর্থ প্রদান করছে, যার ফলে শ্রমিকের মজুরি আরো কমছে।
মুক্ত বাণিজ্য (ফ্রি ট্রেড) নিশ্চিতকরণের জন্য স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্যাম্পেইনের সাথে পরিচিত ব্র্যান্ডগুলো দিনদিন তাদের উৎপাদনী বিবরণ (প্রোডাকশান ডিটেইলস) প্রকাশের ব্যাপারে অনিচ্ছুক হচ্ছে। তবে, অন্তত পক্ষে, আমরা ভোক্তারা যদি সমাজ ও পরিবেশের উপর আমাদের কঞ্জাম্পশান প্রাক্টিসের প্রভাব সম্পর্কে সচেতন থাকি এবং ওইসব ব্র্যান্ডকেই বেছে নেই যারা তাদের উৎপাদনী বিবরণ (sourcing) নিয়ে স্বচ্ছ, তাহলে এটা উৎপাদক ও বিক্রেতা উভয়কেই বাধ্য করবে উৎপাদনের বর্তমান এই পাগলাটে ও শোষণমূলক চর্চা থেকে সরে দাঁড়াতে।
সাধারণত বৈশ্বিক রিটেইল ব্র্যান্ডগুলো দরিদ্র দেশে অবস্থিত ম্যানুফ্যাকচারারদের (উৎপাদক ফ্যাক্টরি) উপর নির্দিষ্ট ‘কোডস অব কন্ডাক্ট’ (codes of conduct) চাপিয়ে দেয়। কিন্তু, উৎপাদক ফ্যাক্টরিগুলো এ ধরনের কোনো আচরণ বিধি (যেমন: ন্যুনতম মূল্য নির্ধারণ বা ক্রয় সম্পর্কিত নির্দিষ্ট কোনো মানদণ্ড) ব্র্যান্ডগুলোর উপর আরোপ করতে পারে না। অধিকন্তু, ফ্যাক্টরিগুলো অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি কিংবা অন্য কোনো দেশের কাছে ক্রেতা হারানোর ভয়ে ব্র্যান্ডগুলোর সাথে দরাদরি করতে পারে না। সম্ভবত, তৈরি পোষাক শিল্পের উৎপাদকদের নিয়ে একটি নিয়ন্ত্রকসংস্থা গঠনের এটাই যথার্থ সময়, যা বরঞ্চ ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
বর্তমানের এই অবস্থাকে সমর্থন ও ন্যায্যতা প্রদানের ক্ষেত্রে একটি জনপ্রিয় যুক্তি হলোঃ বেশি উৎপাদন মানে বেশি কর্মসংস্থান। তা সত্ত্বেও, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আন্তর্জাতিক অ্যাপারেল সাপ্লাই চেইনের (আন্তর্জাতিক পোশাক উৎপাদন ও বিক্রি) মতো একটি ধ্বংসাত্মক ব্যাবস্থার র্যাডিক্যাল পরিবর্তন দরকার ও আমরাই হতে পারি এই পরিবর্তনের পথ প্রদর্শক।