- জান্নাতুল মাওয়া আইনান
পঞ্চাশের দশকে ব্রিটিশদের ফেলে যাওয়া কলোনি এবং ব্রিটিশ সূর্য যেসব কলোনিতে অস্ত যাবে যাবে করছে সেই সময়ে ওই অঞ্চলগুলোতে আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে কলোনির নির্মমতার শিকার মানুষগুলো নিজ নিজ অস্তিত্ব নির্মাণ করছিলো। এইসময়ে হিন্দুস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলের জাতিগত দাঙ্গাসহ নতুন নতুন রাজনৈতিক আন্দোলনের দিকে চোখ রাখলেই আমরা এই প্রবণতা দেখতে পাবো। হিন্দুস্তানের বাঙালিরা পাকিস্তান আর ভারত নামের দুইটা বর্গে ভাগ হয়ে গেলো, পাঞ্জাবিরা ভাগ হলো, কাশ্মীরিরা ভাগ হলো। পূর্ব বাংলা অথবা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা যাদের অধিকাংশই মুসলমান তারা উর্দুর আগ্রাসন ঠেকাতে পুলিশের গুলি বুকে পেতে নিলো। ১৯৫২ সালে ঢাকায় যে ছাত্ররা বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিল তাদের নাম কী?
সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার। কী বুঝলেন? যারা বাঙালি পরিচয়ের সাথে মুসলিম পরিচয়ের বিরোধ বাধাতে চায়-এরা উভয় দলেই ব্যাপক- তারা হয় অজ্ঞান না হয় অসৎ। সালাম বরকত রফিক জব্বার এই খাঁটি বাঙালি ও মুসলমান নামগুলোকে আপনি ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে ফেলতে পারবেন না। হিন্দুস্তানের অনেকে শুধু হিন্দুদেরকে বাঙালি ভাবেন, তেমনি বাংলাদেশের অনেক নতুন রাজনৈতিক বয়ানই নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের মুসলমান পরিচয়টাকে বাঙালি পরিচয়ের উর্ধে তুলে ধরার জন্যে। কিন্তু, শুধু বয়ানের জোরে কতটা বাস্তব নির্মাণ করা যায়?
হ্যাঁ, সত্যকে কিছুটা ম্লান করা যায়, ম্রিয়মাণ করা যায়। কিন্তু বাস্তবতা কতটা পাল্টায় বয়ানে? এই প্রশ্নটা থাকুক।
সালাম বরকত রফিক জব্বার – নামের এই মানুষেরা তাদের খাঁটি “মুসলমান” নাম নিয়েই তৎকালীন পাকিস্তানে বাংলা ভাষাকে উর্দুর পাশে একই রকম মর্যাদায় রাখার দাবিতে নিজের মূল্যবান জীবন দিয়ে দিয়েছে। “রাষ্ট্রভাষা” – এই বর্গটির দিকে তাকালেই আমরা দেখতে পাই ইয়োরোপিয়ান রাষ্ট্রভিত্তিক জাতীয়তার মধ্যে থেকেই ভাষাভিত্তিক জাতীয়তার পরিচয়টাকে আরও সুসংহত করতে চাইছিলো।
কেন? সালাম বরকত রফিক জব্বার কি শুধু কাঁধে খদ্দেরের চাদর ফেলে মিহিগলায় রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইবার জন্যে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ বলে বোকার মত পুলিশের গুলির সামনে মিছিল করেছিলেন? না। এটা কোন ‘সাংস্কৃতিক লড়াই’ ছিলো না হে জ্ঞানী। এটা ছিলো মৌলিক মানবাধিকারের প্রশ্ন।
একেবারেই সাধারণের কথা, ’ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’! ব্রিটিশবিরোধী পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদীরা উর্দুকে আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিলো, আর ব্রিটিশবিরোধী পাকিস্তানি বাঙালিরা নতুন জাতির নতুন ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থায় নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয়ার জন্যে রাজপথে এসে দাঁড়িয়েছিলো।
তো, এই টানাপোড়েন ব্রিটিশদের তৈরি করে দেয়া নতুন জাতিরাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অন্যতম টানাপোড়েন। মিশরে গামাল আব্দেল নাসের এবং আনোয়ার সাদাতেরা সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আরব জাতীয়তাবাদের বয়ানের মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্বকে নির্মাণ করতে সচেষ্ট ছিলেন, মিশরীয়রা তাদেরকে সাদরে গ্রহণ করেছিলো। সেইসাথে সেখানে গড়ে উঠেছিলো মুসলমান ভ্রাতৃবাদী সংগঠন- মুসলিম ব্রাদারহুড; যারা আরব নয় বরং মুসলমান জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সমস্ত মুসলমানদের ঐক্য খুঁজছিলেন। এই দলটিও নিজেদেরকে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মনে করত। তবে তারা সৌদি আরবের ওহাবিহ ধারার পতাকার নিচে ঐক্যবদ্ধ হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তাদের সাথে ঐক্যে এসেছিলেন মউদুদীর জামায়াতে ইসলামিও।
আপনি যদি মিশরের রাজনীতির দিকে তাকান তাহলে দেখতে পাবেন সেখানেও আরব জাতীয়তাবাদ এবং ইসলামি জাতীয়তাবাদ এই দুই ধারায় দ্বন্দ্ব প্রবাহমান। এই দ্বন্দ্বই মিশরের রাজনীতিকে রক্তাক্ত করে রেখেছে। ২০১৫ সালে মিশরের সংসদীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের একটা দলের সাথে মিশরের প্রত্যন্ত কিছু অঞ্চলে যাবার সুযোগ হয়েছিলো আমার। পাতানো ভোট। মানুষ ভোট নিয়ে কথা বলতে হয় ভয় পাচ্ছে, নয় প্রচণ্ড অনাগ্রহে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যেই যুবকরা আমাদের সাথে দোভাষী হিসেবে ছিলেন তারাও সুযোগ পেলেই ফিসফিস করে বলছেন, খুশি নন। কিন্তু জানেন না কিভাবে এর থেকে বেরোতে পারবেন। মধ্যবিত্ত বৃদ্ধদের কেউ কেউ অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে ভোট দিতে এসেছেন। গিজায় একটা ভোটকেন্দ্রের বাইরে এমনই এক বৃদ্ধের দেখা পেয়েছিলাম, যিনি আমাদেরকে দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলেন। বারবার ধন্যবাদ দিচ্ছিলেন আমাদেরকে। সারাদিনের শেষে তখন ভোট গণনার সময়। বৃদ্ধ সারাদিনের দুশ্চিন্তায় কিছুটা ক্লান্তি নিয়ে দেয়ালের পাশে রাখা একটা বেঞ্চে পা ঝুলিয়ে বসেছিলেন। আমি দুর থেকে তার ছবি তুলছিলাম দেখে কাছে আসলেন। তার গলায় উত্তেজনা, আনন্দ এবং দুশ্চিন্তা। বলছিলেন, দয়া করে আপনারা এই খবর দুনিয়ায় পৌঁছে দেন যে আমরা মিশরীয়রা এইখানে সবাই একসাথে থাকতে চাই। আমরা মুসলমান ভ্রাতৃত্ববাদীদের বিভেদের রাজনীতি চাই না। লোকটার পোশাক-আশাক অতি সাধারণ। এই মানুষগুলোর এই আবেগের অকৃত্রিমতাকে প্রশ্ন করি না। তবে বুঝতে পারি যুবকেরা ক্লান্ত, কোন রকমের জাতীয়তাবাদ নিয়ে তারা খুব আপ্লুত নয়। বরং এই অতি গতির পৃথিবীতে নিজেদের অস্তিত্বের সংকটে যুবকেরা ক্লান্ত।
আমার আরেক বন্ধু আল আজহার থেকে আসা মাহমুদ সামাকের কথা মনে পড়ে। তার জীবনের শেষ ঘণ্টায় সে আমাদেরকে বলে গিয়েছে কিভাবে তাহরির চত্বরে সকল ধারার মিশরীয় তরুণেরা ইসলামি রিচুয়ালের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলো। এই বক্তৃতা দেয়ার কিছুক্ষণ পরেই মাহমুদ আমাদের সবার চোখের সামনে হৃদ-আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। মাস্টার্সের দ্বিতীয় বছরে আমেরিকার সব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা বিশেষত যুদ্ধ আর সংঘাত বিধ্বস্ত দেশগুলো থেকে আসা শিক্ষার্থীরা প্রচণ্ড দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে যায়। তাদেরকে হয় পিএইচডি পেতে হবে, নয়তো একটা চাকরি। যেই চাকরিটি তাকে এই দেশে আরও কয়েকবছর থাকার কাগজ পত্র পেতে সাহায্য করবে।
মাহমুদ সামাকের মৃত্যু এই দুশ্চিন্তাজনিত কারণে হয়েছিল কি না ঠিক বলতে পারি না, তবে এই প্রবল দুশ্চিন্তা তার ছিলো। মিশরের মত একটা প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী দেশের তরুণরাও যখন আর নিজ দেশে ফিরে যেতে চান না তখন প্রশ্ন আসে, আমাদের মুসলমান জাতীয়তাবাদী ভ্রাতারা অথবা আমাদের আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদী ভ্রাতারা ভুলটা কোথায় করছেন?
ইয়োরোপীয় রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে বসে থেকে অঞ্চল অথবা ধর্মের ভিত্তিতে যে জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন সেটাই কেন দানবীয় হয়ে উঠছে। মানুষের জীবন ও জীবিকার চেয়ে পরিচয়ের বয়ান কেন তার অস্তিত্বের প্রশ্নকে বেশি আলোড়িত করছে? অস্তিত্বের প্রশ্ন, জীবন, জীবিকা আর জবানের প্রশ্নই মূলত আমাদেরকে তাড়িত করে যুগে যুগে।
মুজিব কাল্টের নির্মাতা আওয়ামী লীগ বাঙালি জাতীয়তাবাদকে মহিমান্বিত করে মানুষকে পবিত্রতাবাদী স্বাধীনতার দীক্ষায় দীক্ষিত করতে চেয়েছে। দরিদ্র দিনমজুর জাকির হোসেন যখন বলেছে, ’পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম, আমাগো মাছ মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো’। তখন শহুরে মধ্যবিত্ত জাতীয়তাবাদীরা অবাক হয়ে ভেবেছেন, এ কেমন অর্বাচীন। ভাতের মতো একটা “মামুলি” বিষয়ের সাথে স্বাধীনতার মতো এত মহাপবিত্র বিষয়কে মেলায়! ঠিক তেমনি, এইবার যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ‘অযৌক্তিক’ কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবি জানিয়েছে তখনও এই শহুরে মধ্যবিত্তরা ভীষণ অবাক হয়ে বলেছে, সামান্য একটা চাকরির জন্য এত হৈহট্টগোল করছে কেন, যদি এতই মেধাবী হয়!
একটা পর্যায়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের নাম দিয়ে নির্বিচারে মানুষ হত্যাকেও বৈধতা দেয়া হতে থাকে, এইবার বাঙালি জাতীয়তাবাদকেও পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের মত হিংস্র মনে হতে থাকে। আপনি যেই নাম ব্যবহার করে হিংস্রতা জায়েজ করতে চাইবেন বদনাম তো সেই নামের হবেই। যেমন ইসলামের নাম করে যে কোন নিষ্ঠুরতা করলে সেটা মুসলমানদেরকে ক্ষতিগ্রস্তই করে। নিষ্ঠুরতা নিষ্ঠুরতাই। ছাত্রলীগের একটা ছেলেকে বিনা বিচারে পিটিয়ে মেরে ফেলতে যে পরিমাণ নিষ্ঠুরতার দরকার হয়, একই পরিমাণ নিষ্ঠুরতা দেখিয়েই ছাত্রশিবিরের একজন ছেলেকেও পিটিয়ে মারা যায়। উভয় মবেই অপরপক্ষকে পিটিয়ে মারতে না চাওয়া লোকের চেয়ে পিটিয়ে মারতে চাওয়া লোকের সংখ্যা এত অধিক হয় যে, বাকিদের কণ্ঠ গৌণ হয়ে যায়, হৈহট্টতে ভেসে যায়।
মানুষের জীবন ও জীবিকার প্রশ্ন তখনই আপনার কাছে সামান্য মনে হবে যখন আপনার ভাঁড়ারে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য মজুদ থাকবে, ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা থাকবে, দেশের বড় পদের লোকেদের সাথে আপনার অর্থপূর্ণ যোগাযোগ থাকবে। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ বলুন আর ইসলামপন্থীদের নানান মাত্রার পরিচয়বাদী রাজনীতি বলুন এসবের বয়ান তৈরি হয় উচ্চবিত্ত অথবা মধ্যবিত্ত সমাজ থেকে।
সুতরাং, আরব, বাঙালি অথবা মুসলমান যে পরিচয়ের বয়ানই আপনি জোরদার করতে চান না কেন জীবন ও জীবিকার প্রশ্নকে ধামাচাপা দিয়ে এইসব করতে গেলে শুধু শুধু মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে থাকবেন। মিশরের আরব জাতীয়তাবাদী প্রকল্প সফল না হবার পেছনে অন্যতম কারণ ছিলো দেশের প্রধানদের অপরিসীম দুর্নীতি। খেয়াল করলে দেখবেন এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষেরা কিন্তু শুরুতে কখনোই মুসলিম ব্রদারহুডকে সুযোগ দিতে আগ্রহী ছিলো না। এছাড়াও, কেনানের (জর্ডান নদী থেকে সমুদ্র অবধি মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল) রাজনৈতিক পরিস্থিতিও বারবার মিশর সহ আরবের বিভিন্ন দেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছে। কেনানের পরিস্থিতিকে যদি আপনি শুধু মুসলমান-ইহুদি দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখেন তাহলে বড় ভুল করবেন। এটা সারা দুনিয়ার সাম্রাজ্যবাদবিরোধীদেরও একটা লড়াই। যার ফলে, বামপন্থীরাও কেনানের প্রাচীন অধিবাসীদের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে শরিক হয়েছেন। সেই সাথে আমেরিকার চিকানোরাও কেনানের ফিলিস্তিনীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমেরিকার এলজিবিটিকিউ কমিউনিটির মানুষেরাও বেশ সক্রিয় ফিলিস্তিনীদের অধিকার রক্ষায়। এছাড়াও বিভিন্ন প্যাগান রিচুয়ালে বিশ্বাসী এবং আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় সচেতন মানুষেরাও আছেন এই দলে। শুধু আরবের রাজনীতি নয়, আমেরিকার রাজনীতিও প্রভাবিত হচ্ছে এই পরিস্থিতিতে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে তরুণেরা বিক্ষোভ করছে। মুসলমান ভ্রাতৃবাদী কমিউনিটিগুলোও এই দলগুলোর সাথে একাত্ম হয়েছে। এখানেও পুরো আন্দোলনকে অনেকে ইসলামপন্থীদের আন্দোলন বলে চালিয়ে দিতে চান। কিন্তু প্রশ্নটা আদতে অস্তিত্ব রক্ষার মত মৌলিক মানবাধিকারের সাথে সম্পৃক্ত।
ফলে, জীবনের স্পন্দনহীন জাতীয়তাবাদী অথবা মুলমান ভ্রাতৃবাদী রাজনীতি কখনওই মূলধারার রাজনীতি হতে পারে না। যদি হয় তবে সেইখানে মানুষের অধিকার বলে আর কিছু থাকে না। ইসলামপন্থী রাজনীতিতে নারী এবং ভিন্ন মত ও পথের মানুষদের অবস্থান কী, ইসলামপন্থীদের ’রাষ্ট্রপ্রকল্পে’ এই মানুষগুলোর জীবন কেমন হতে পারে সেই বিষয়ে তারা কি পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারেন? সাম্রাজ্যবাদবিরোধিতার নাম করে আফগানিস্তানের তালেবগণ নারীদের মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। চোখের সামনে এই বাস্তবতা দেখার পরে বাংলাদেশের নারীরা যদি তাদের অস্তিত্বের প্রশ্নে ইসলামপন্থী রাজনীতির বিপক্ষে অবস্থান নেয় সেই অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এবং সেই কণ্ঠকে রুদ্ধ করে দেয়ার জন্যে এই নারীদেরকে পশ্চিমা, সাম্রাজ্যবাদের দালাল, এইসব ট্যাগ দিতে পারেন; তাতে কিন্তু নারীদের স্বাধীনতার দাবি মিথ্যা হয়ে যায় না। আফগানিস্তানের নারীরা অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করছে। তাদের স্লোগান হলো, নান কার আজাদি, অর্থাৎ তারা চায় রুটি, কাজ আর স্বাধীনতা।
আপনার জাতীয়তাবাদী প্রকল্পে যদি মানুষের ভাতের অধিকার অস্বীকার করে, কাজের অধিকার কেড়ে নেয় তাহলে আপনার জাতীয়তাবাদ অথবা সাম্রাজ্যবাদবিরোধিতায়; মোটকথা আপনার গোটা রাজনৈতিক দর্শনেই ছিদ্র আছে।
সুতরাং, অস্তিত্বের প্রশ্নে, জীবিকার প্রশ্নে, আদিবাসীদের অধিকারের প্রশ্নে, আত্মপরিচয়ের প্রশ্নে, জবানের প্রশ্নে, ঘরে ফেরার অধিকারের প্রশ্নে, আধ্যাত্মিকতার অধিকারের প্রশ্নে, ধর্ম পালনের এবং না পালনের স্বাধীনতার প্রশ্নে সাম্রাজ্যহীন, ঘরহীন, দেশহীন মানুষদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। আমরা একা নই, আমরা অনেক।
আমরা সবাই ভাত, কাজ, জীবনের আর জবানের স্বাধীনতা চাই।