-
অনুবাদ : অনিক সন্ধি
গ্রেইবার এই লেখাটি দাঁড় করিয়েছিলেন ক্রপোৎকিনের মিচুয়াল এইড গ্রন্থের উপর আলোচনা হিসেবে। লেখাটি যৌথভাবে গ্রেইবার লিখেছেন তার বন্ধু ও শিষ্য আন্দ্রেই গ্রুবাচিকের সাথে। গ্রুবাচিকের মতে সম্ভবত এটাই গ্রেইবারের সর্বশেষ লেখা। গ্রেইবারের মৃত্যুর দুইদিন পর গ্রুবাচিক এটি ট্রুথআউট-এ প্রকাশ করেন। – সম্পাদক
কখনো কখনো বিরাজমান রাজনৈতিক কাণ্ডজ্ঞানের বিরুদ্ধে এমন এক অকাট্য যুক্তির আবির্ভাব ঘটে যাকে খণ্ডন করার জন্য সম্পূর্ণ নতুন তত্ত্ব আবিষ্কার করা লাগে। দার্শনিকভাবে বলতে গেলে এরূপ আবির্ভাব এমন এক ঘটনা যা বাস্তবতার অদেখা অংশগুলোকে দৃশ্যমান করে, কিন্তু যাকে একবার দেখলে আর বারাবার না দেখে পারা যায় না। এরূপ চ্যালেঞ্জ চিহ্নিতকরণ ও মোকাবেলাই ডান–বুদ্ধিজীবিদের প্রধান কাজ।
তিনটি উদাহরণ দেখা যাক।
হুরোন–ওয়েন্ডাট এর রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন কনডিয়ারনক, যিনি কিনা ইউরোপে ভ্রমণ করেছেন এবং ফরাসি ও ইংরেজ সেটলার সমাজের সাথেও পরিচিত ছিলেন। ১৬৮০’র দশকে তিনি কিউবেকের ফরাসি গভর্নর ও তার এক সহোযোগী, কোনো এক লাহোনটানের সাথে কয়েক দফা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। সেখানে তিনি পেশ করেন যে প্রাকৃতিক কোনো কারণে নয়— শাস্তিমূলক আইন ও সম্পূর্ণ রাষ্ট্র ব্যবস্থাটাই বিরাজ করে ঠিক আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করার জন্য। আর সেটা হলো অর্থ ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি বা প্রাইভেট প্রপার্টি। এদের অস্তিত্বই মানুষকে এমনভাবে ব্যবহার করতে প্ররোচিত করে যার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দরকার হয়। তিনি দাবি করেন সাম্যই সত্যিকারের স্বাধীনতার প্রধান শর্ত। এই বিতর্কগুলো পরে লাহোনটান বই হিসেবে প্রকাশ করেন, যা ১৮ শতকের প্রথম দিকে ব্যাপক সফলতা পায়। বইটি প্যারিসের থিয়েটারগুলোতে প্রায় ২০ বছর ধরে চলে এবং আলোকায়ন (enlightenment) পর্বের প্রায় প্রত্যেক চিন্তকই এর অনুকরণে লেখেন। এই যুক্তিগুলো এতই শক্তিশালী হয় যে সেগুলো খণ্ডনের জন্য বিরাজমান সামাজিক ব্যবস্থার রক্ষকদের (যেমন টুরগোট ও অ্যাডাম স্মিথ) সামাজিক বিবর্তন তত্ত্বের আবিষ্কার করে আনতে হয়। সামাজিক বিবর্তন তত্ত্ব বলে প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে মানব সমাজকে কতগুলো বিকাশের ধাপে ভাগ করা যায়। “সবাইতো স্বাধীনতা ও সাম্য ভালোবাসে,” টুরগোট বললেন; “কিন্তু প্রশ্নটা হলো একটা অগ্রসর বাণিজ্যিক সমাজ— যার ভিত্তি জটিল শ্রমবিভাজন— দুটোর একটির সাথে তা কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ।” এই তত্ত্ব পুরো ঊনবিংশ শতাব্দীজুড়ে রাজত্ব করে এসেছে এবং এখনো কিঞ্চিৎ সংশোধিত অবস্থায় আমাদের মধ্যে বিরাজ করছে।
উনিশ শতকের শুরু এবং আঠারো শতকের শেষের দিকে নৈরাজ্যবাদিদের উদারনৈতিক রাষ্ট্রের সমালোচনা ছিল এই যে আইনের শাসনের ভিত্তি হলো নির্বিচার সহিংসতা। তারা আরও বলেন রাষ্ট্র খোদ নিজেই একটি সেকুলার ‘ঈশ্বর’ যেটি তার মতো করে নীতি–নৈতিকতা বানাতে পারে কারণ রাষ্ট্র নিজে এসবের (আইনি বিধিনিষেধ) ঊর্ধ্বে অবস্থান করে। এই সমালোচনা কার্ল স্মিটদের মতো ডানপন্থী আইন তাত্ত্বিকদের আঁতে এমন ঘা লাগিয়েছিল যে শেষমেষ তিনি ফ্যাসিবাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বর্ম বনে যান। স্মিট তার সবচেয়ে নামকরা লেখা রাজনৈতিক ধর্মতত্ত্ব (Political theology) বইটি শেষ করেছেন বাকুনিনকে গালাগাল করে। তিনি বলেছিলেন যে বাকুনিন ‘সিদ্ধান্তবাদ’ (decision-ism) এর বাকুনিন ‘সিদ্ধান্তবাদ‘ তথা আইনি শৃঙ্খলা তৈরির উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছাচারী কর্তৃত্বকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। স্মিটের দাবি ছিল যে একে খারিজ করাও শেষপর্যন্ত বাকুনিন যেই কর্তৃত্বের বিরোধিতা করছেন তার মতোই ঠিক একই রকম স্বেচ্ছাচার। স্মিটের রাজনৈতিক ধর্মতত্ত্বের ধারণা সমকালীন প্রায় সমস্ত ডানপন্থী চিন্তার বনিয়াদ প্রতিষ্ঠা করছে, যার উদ্দেশ্য ছিল বাকুনিনের ঈশ্বর ও রাষ্ট্রের একটি জবাব দেয়ার চেষ্টা।
ক্রপোৎকিনের “মিউচুয়াল এইড: বিবর্তনের একটি অনুঘটক” বইটি যে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় তা এখনো বেশ যৌক্তিক গভীরতার দাবি করে। কেননা এটি শুধুমাত্র প্রশাসনের চরিত্রের কথাই বলে না বরং প্রকৃতির চরিত্র বা খোদ বাস্তবতার কথাই বলে।
সামাজিক বিবর্তনের তত্ত্ব যেখানে টুরগোট প্রথম ‘প্রগতি‘ (progress) এর ব্যবহার করেন, প্রথম প্রথম তা আদিবাসী সমালোচনার চ্যালেঞ্জের উত্তর হিসেবে গৃহিত হলেও পরে তা আরও তিক্ত রূপ নেয়। হার্বার্ট স্পেন্সারের মতো লিবারালরা সামাজিক বিবর্তনকে একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা একই সাথে ক্রমে পার্থক্যকরণ ও অঙ্গীভূতকরণে ব্যস্ত, হিসেবে পেশ না করে একে এক রকমের হবসিয়ান ‘যোগ্যতমের বেঁচে থাকা” হিসেবে ধরে নেন। ‘যোগ্যতমের বেঁচে থাকা‘ বা ‘সার্ভাইভাল অফ দা ফিটেস্ট‘ পরিভাষাটি হার্বার্ট স্পেন্সার প্রথম ১৮৫২ সালে কয়েন করেন। এই ধারণাটি দিয়ে তিনি মানব ইতিহাস বর্ণনা করতে চেয়েছিলেন এবং ইউরোপীয় উপনিবেশবাদ ও গণহত্যার ন্যায্যতা প্রতিপাদন করতে চেয়েছিলেন। দশ বছর পর ‘দি অরিজিন অফ স্পিসিজ’ বইয়ে ডারউইন গ্যালাপাগোস দ্বীপে তার রিসার্চে পাওয়া প্রাকৃতিক নির্বাচনের তত্ত্ব বর্ণনার সময় উক্ত পরিভাষা ব্যবহার করেন। ১৮৮০ ও ’৯০ এর দশকে, ক্রপোৎকিন যখন সবেমাত্র লেখালেখি করছেন, তখনই ডারউইনের ধারণা মার্কেট লিবারেলদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেতে শুরু করল। বিশেষকরে ডারউইনের ‘বুল ডগ’ থমাস হাক্সলি ও ইংরেজ প্রকৃতিবাদী আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস। তারা একে উপস্থাপন করেন প্রাকৃতিক ইতিহাসের— প্রায়শই যাকে বলা হয় ‘গ্ল্যাডিয়েটরিয়াল দৃষ্টিকোণ‘, তাকে প্রতিষ্ঠা করতে। ঠিক যেভাবে বক্সিং রিং এ বক্সাররা বা মার্কেট ফ্লোরে যেভাবে বন্ড ট্রেডার্সরা মারামারি করি টিকে থাকে সেভাবেই প্রজাতিসমূহ পরস্পর যুদ্ধ করে টিকে থাকার জন্য, এবং যারা শক্তিশালী তারাই জয়ী হয়।
প্রাকৃতিক নির্বাচনের অনুঘটক হিসেবে সহযোগিতাও প্রতিযোগিতার মতোই নিশ্চিত একটি ব্যাপার— ক্রপোৎকিনের এই প্রত্যুত্তর একেবারে মৌলিক কিছু ছিল না।
ক্রপোৎকিন নিজেও তা কখনো সে দাবি করেননি। তিনি তখনকার সবচেয়ে উত্তম জীববিজ্ঞানী, প্রত্নতাত্ত্বিক, নৃতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক জ্ঞান থেকে নিয়ে তার ধারণাগুলোকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সাথে সাইবেরিয়ায় তার নিজের গবেষণাতো ছিলই। এরই সাথে নিয়েছেন রুশ বিবর্তন তত্ত্বের বিকল্প একটি ধারা থেকেও তিনি নিজের ধারণাটি গ্রহণ করেছেন, যেটা ইংরেজ অতি–প্রতিযোগীয় ধারণাকে ক্রপোৎকিনের ভাষ্যমতে “অর্থহীনতার পেশি” বলে দাবি করত। “কেসলার, সেভেরস্টভ, মেনজবির, ব্র্যান্ডট— চারজন অসাধারণ রুশ প্রাণীবিজ্ঞানী, আরেকজন কম খ্যাতিমান ব্যক্তি, পোলাইকভ ও আমি, আমরা সবাই ওই পথেরই পথিক।”
তাও, ক্রপোৎকিনের অবদানের স্বীকৃতি আমাদের দিতেই হবে। উনি সাধারণ একজন ভ্রমণকারী থেকেও অনেক বেশি কিছু ছিলেন। সম্রাজ্যবাদের জয়জয়কার চলছে যে সময়ে তখন ইংরেজ ডারউইনবাদিরা শুধু নয় প্রায় প্রত্যেকেই উনার মতো মানুষদের সফলভাবে অবজ্ঞা করে গেছেন। কিন্তু তার সতর্কবাণী তারা উপেক্ষা করতে পারেননি। এর একটি কারণ হয়তো এই যে ক্রপোৎকিন তার বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানকে উপস্থাপন করেছেন অপেক্ষাকৃত বৃহৎ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে। আর এর ফলে ডারউনিয়ান সংস্করণটির জয়জয়কার যে স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নেয়া উদারবাদী ক্যাটাগরির অসচেতন প্রতিচ্ছবিই ছিল যে শুধু ছিল না তা অস্বীকার করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। (মার্ক্সের ভাষ্যমতে মানুষের এনাটমি এপের এনাটমির চাবিকাঠি।) এটা ব্যাবসায়ী শ্রেণির দৃষ্টিভঙ্গিগুলোকে সর্বজনীন করার এক প্রচেষ্টা ছিল। ডারউইনবাদ তখনো কাণ্ডজ্ঞানকে পুনর্গঠনের জন্য সচেতন ও সামরিক এক রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছিল। একে একপ্রকারের হবু মধ্যপন্থী বিদ্রোহও বলা চলে কেননা তা এক নতুন মধ্যপন্থা তৈরি করতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষমেশ তা সফল হতে পারেনি। এর এক বড় কারণ ছিল ক্রপোৎকিনের প্রতিউত্তর।
লিবেরাল বুদ্ধিজীবিরা কেন এত অস্বস্তি বোধ করছিল তা ভাবা কঠিন কিছু না। ক্রপোৎকিনের মিউচুয়াল এইড বইয়ের বিখ্যাত প্যাসেজটাই ধরুন, যা পূর্ণাঙ্গরূপে উদ্ধৃত হবার যোগ্যতা রাখে: “নেকড়ের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য ঘোড়া বা অন্যান্য জাবরকাটা প্রাণীদের যা একসাথে বৃত্ত রচনা করতে প্ররোচিত করে তা ভালোবাসা বা মমত্ব না, বা নেকড়েরা যে কারণে শিকার করবার জন্য দল তৈরি করতে প্ররোচিত হয় তাও ভালোবাসা নয়, যার দ্বারা প্ররোচিত হয়ে বেড়ালছানা বা ভেড়ারা খেলা করে বেড়ায় তাও ভালোবাসা নয়, অথবা ডজনে ডজনে প্রজাতির পাখিরা যে একসাথে শরৎকালীন আবহাওয়ায় সময় কাটাতে প্ররোচিত হয় তার কারণও ভালোবাসা নয়। এবং নদী পারাপারের উদ্দেশ্যে হাজারে হাজার হরিণ যে ফ্রান্সের সমান বিশাল কোনো ভূমিজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ভিন্ন ভিন্ন গোত্র তৈরি করতে প্ররোচিত হয় তার কারণও ভালোবাসা বা ব্যক্তিগত মমত্ববোধ নয়। এ এমন এক সহজাত প্রকৃতি যা মানুষ ও প্রাণীর অত্যন্ত দীর্ঘ সময়ের বিবর্তনের ফসল, ভালোবাসা বা ব্যক্তিগত মমত্ববোধ নয়। এটি সবাইকে শিখিয়েছে কীভাবে সহপ্রাণীর থেকে মিউচুয়াল এইডের মাধ্যমে তার শক্তি ধার করে সামাজিক জীবনকে সুখকর বানানো যায়। মানুষের সমাজও ভালোবাসা বা সহমর্মিতার উপর দাঁড় করানো নয়। আসলে তা হলো সংহতি— হোক তা সহজাত প্রকৃতি হিসেবে। আর এ সংহতি হলো প্রত্যেক সহমানবের থেকে মিউচুয়াল এইডের মাধ্যমে ধার করা শক্তি, সবার সুখের মাধ্যমে একের সুখ আর একের মাধ্যমে সবার সুখ— এই নির্ভরশীলতার শক্তি, ন্যায় ও সমতা এই ধারণা প্রবর্তন করে অন্য সব ব্যক্তির অধিকার আদায়ের মাধ্যমেই নিজেরটা আদায় সম্ভব— এই শক্তিসমূহের অচেতন স্বীকৃতি। এইসব বিস্তর ও দরকারি ভিত্তির উপরই উচ্চতর নৈতিক অনুভূতির বিকাশ ঘটে।”
এর প্রতিক্রিয়ার তীব্রতা দেখলেই বুঝা যায়। ক্রপোৎকিনের পয়েন্টগুলোর সাথে মীমাংসার জন্য অন্তত দুটি ফিল্ড— সোশিয়োবায়োলজি ও বিবর্তনীয় মনোবিদ্যা গঠন করা হয়েছিল। এসব ফিল্ডের ধারণার চলনশক্তি হলো রিচার্ড ডকিনসের ভাষ্যমতে আমাদের “স্বার্থপর জিন”। ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী জে.বি.এস. হ্যাল্ডেন যখন বলেছিলেন যে তিনি তার জীবন “দুই ভাই, দুই সৎ ভাই অথবা আটজন কাজিন”কে বাঁচানোর জন্য দিতে রাজি আছেন, তিনি সেই ক্যালকুলাসই তোতা পাখির মতো আওড়াচ্ছিলেন যেটা ক্রপোৎকিনের প্রতিউত্তরের জন্য বানানো হয়েছিল; ঠিক যেমন “প্রগতি”র ধারণা তৈরি করা হয়েছিল কন্ড্রিয়ারনককে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আর “জরুরি অবস্থা” তথা “স্টেট অফ একসেপশন” বানানো হয়েছিল বাকুনিনকে দেখে নেয়ার জন্য। “স্বার্থপর জিন” পরিভাষাটি এমনি এমনি নির্বাচন করা হয়নি। ক্রপোৎকিন দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে প্রকৃতিতে এমন নিয়মও রয়েছে যা স্বার্থপরতার সম্পূর্ণ বিপরীত। ডারউইনবাদীদের এখন একমাত্র ছল হলো প্রকৃতির সবচেয়ে দরদী, আত্মবিসর্জনী ও সামাজিক চরিত্র আসলে স্বার্থান্বেষী— এটা প্রমাণ করা।
ডান–বুদ্ধিজীবিদের ক্রপোৎকিনের পেশকৃত চ্যালেঞ্জ টক্কর দেয়ার প্রবণতা না হয় বুঝলাম। আগেই বলেছি যে “প্রতিক্রিয়াশীলদের” কাজই এটা। তারা রাজনৈতিক সৃজনশীলতার মধ্যে কোনো মূল্য খুঁজে তো পানই না বরং একে বিপজ্জনক মনে করেন। যার ফলে ডান–বুদ্ধিজীবিদের কাজই হলো বামেদের দ্বারা প্রদানকৃত ধারণার প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করা। কিন্তু বাম–বুদ্ধিজীবিদের কী অবস্থা?
এখানে ব্যাপারটা একটু গোলমেলে। যেখানে ডান–বুদ্ধিজীবিরা ক্রপোৎকিনের বিবর্তনীয়–সম্পূর্ণবাদকে টক্কর দেয়ার জন্য পুরো বৌদ্ধিক সিস্টেমের প্রবর্তন করেছেন, মার্ক্সবাদী–বামেরা এমন ভান ধরেছিল যেন [এ বিষয়ে] ক্রপোৎকিনের হস্তক্ষেপ আদতে ঘটেইনি! এটা বলাই বাহুল্য যে মার্ক্সবাদিরা ক্রপোৎকিনের সহযোগিতামূলক–ফেডারেলবাদের উত্তর দিয়েছিলেন মার্ক্সের নিজের কাজকে বিকশিত করার মাধ্যমে। সে কাজগুলো টানা হয়েছিল একদম বিপরীত দিক থেকে। অর্থাৎ তার সবচেয়ে “প্রগতিশীল” কাজগুলো। মিউচুয়াল এইডের মূল্যবান অর্ন্তদৃষ্টিকে ব্যাঙ্গাত্মকভাবে অবজ্ঞা করা হয়েছিল। মার্ক্সবাদী ও বামঘেঁষা পণ্ডিতগণ ক্রপোৎকিনের কাজকে “লাইফবোট সোশালিজম” আর “নাইভ ইউটোপিয়ানিজম” বলে এমনভাবে বিদ্রুপ করা শুরু করেছিল যে বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী স্টিফেন জে গোউল্ড তার এক নামকরা প্রবন্ধে বলতে বাধ্য হয়ে হয়েছেন, “ক্রপোৎকিন কোনো পাগল ছিলেন না।”
এরূপ কৌশলগত খারেজীপনার সম্ভাব্য ব্যাখ্যা থাকতে পারে।
এক হতে পারে খাঁটি উপদলীয়বাদ। আগেই বলা হয়েছে যে ক্রপোৎকিনের বুদ্ধিবৃত্তিক হস্তক্ষেপ বৃহত্তর এক রাজনৈতিক প্রকল্পের অংশ ছিল। ঊনবিংশ শতকের শেষভাগ ও বিংশ শতাব্দীর শুরুর ভাগজুড়ে কল্যাণ–রাষ্ট্রের ভিত গড়া হচ্ছিল। এর ভিত্তিভূমি মূলত গড়ে দিয়েছিল বিভিন্ন মিউচুয়াল এইড দল যা প্রথমদিকে রাষ্ট্র থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ছিল এবং পরে আস্তে আস্তে রাষ্ট্র ও বিভিন্ন রাজনৈতিক পার্টিগুলোর দ্বারা দখল হয়ে গিয়েছিল। বিসমার্ক অকপটে স্বীকার করেছিলেন যে তিনি জার্মান কল্যাণমুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছিলেন শ্রমিক শ্রেণিকে “ঘুষ” দেয়ার জন্য যাতে তারা সমাজতান্ত্রিক না হয়ে যায়। অপরদিকে [রাষ্ট্রবাদী] সমাজতান্ত্রিকগণ চাচ্ছিলেন সোশাল ইন্সুরেন্স থেকে শুরু করে পাবলিক লাইব্রেরিগুলো তাদের নির্মাতা: মহল্লা ও সিন্ডিকালিস্ট দলগুলো পরিচালনা না করে উপর থেকে নিচ তলার ভ্যানগার্ড পার্টি তা পরিচালনা করুক। এই পরিপ্রেক্ষিতে উভয় দলই ক্রপোৎকিনের নৈতিক সমাজবাদকে সর্বশ্রেষ্ঠ অবশ্য পালনীয়র মতো “ভাঁড়ামি” হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। মনে করিয়ে দিতে চাই, অন্তত অংশত ঠিক এই কারণগুলোর জন্যই নৈরাজ্যবাদ ও মুক্তিপরায়ন মার্ক্সবাদী ভাবনাগুলো ১৯০০ থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত শ্রমিক শ্রেণির মাঝে লেনিন ও কাউটস্কির মার্ক্সবাদের তুলনায় অধিক জনপ্রিয় ছিল। বলশেভিক পার্টির লেনিনীয় অংশের বিজয় (তখন তাদের ডানপন্থী বলশেভিক নামে ডাকা হতো) এবং তাদের দ্বারা সোভিয়েত, প্রলেতকুলত এবং অন্যান্য নিচ থেকে উপরতলার কর্মোদ্যোগকে দমনের মাধ্যমে এই বিতর্কের ইতি ঘটে।
কিন্তু আরেকটা সম্ভাব্য ব্যাখ্যা আছে। এই ব্যাখ্যা সনাতন মার্কসবাদ ও সমকালীন সমাজ তত্ত্বের “অবস্থানবাদের” সাথে সম্পর্কযুক্ত। একজন র্যাডিকাল বুদ্ধিজীবীর কাজ কী? বেশিরভাগ বুদ্ধিজীবিই নিজেকে কোনো না কোনো রকমের
র্যাডিকাল মনে করেন। তাত্ত্বিকভাবে তারা সবাই মার্ক্সের সাথে একমত যে পৃথিবীকে বুঝতে পারাই যথেষ্ঠ নয়, বুঝতে হবে পৃথিবীটাকে বদলানোর জন্য। কিন্তু বাস্তবে এর মানে কী?
মিউচুয়াল এইডের এক গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদে ক্রপোৎকিন একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন: র্যাডিকাল বুদ্ধিজীবির কাজ হলো “দ্বন্দ্ব ও ঐক্যের সত্যিকার অনুপাত” পুনরুদ্ধার করা। এটি শুনে অস্পষ্ট মনে হবে, কিন্তু তিনি তা আরও পরিষ্কার করেন। র্যাডিকাল পণ্ডিতগণ “অতীতের গহবরে সংরক্ষিত রাখা হাজারটা তথ্যকে সমসাময়িক জাতিতত্ত্বের জ্ঞাণ দ্বারা ব্যাখা করবেন। যুগ যুগ ধরে মানুষে–মানুষে কী এত বিভেদ সৃষ্টি করেছে সে জ্ঞান দিয়েই একই সাথে কোন জিনিসটা মানুষকে মানুষের সাথে ঐক্যবদ্ধ করেছে সেরকম প্রতিষ্ঠানাদি তিলে তিলে পুনর্নির্মাণ করবেন।”
এই ভূমিকার একজন রচয়িতার এখনো মনে পড়ে এই কথাগুলো পড়ে তরুণ বয়সে কতটা উদ্দীপ্ত হয়েছিলাম! জাতি–কেন্দ্রিক প্রাণহীন একাডেমির ট্রেনিং থেকে কত ভিন্ন এসব! মার্ক্সের সাথে মিলে এই সুপারিশ পড়া উচিত। মার্ক্স নিজের সমগ্র উদ্যম দিয়ে পুঁজিতান্ত্রিক পণ্য উৎপাদনের বিকাশ ও সংগঠন সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করেছিলেন। পুঁজি বইটিতে সহযোগিতার প্রতি তখনই মনোযোগ প্রদান করা হয়েছিল যখন কো–অপারেটিভগুলোকে বিশ্লেষণ করা হয়েছিল। তার মতে সেখানে শ্রমিকেরা “পুঁজির পদতলেই এক ভিন্ন জীবন–যাপন করে”। মনে হচ্ছিল যে দুই দুই প্রকল্প পরস্পরের ভালোই সম্পূরক হবে। একজন বিচ্ছিন্ন (alienated) শ্রমিক ঠিক কোন জিনিসটা হারায় তা বোঝাই ছিল ক্রপোৎকিনের লক্ষ্য। কিন্তু দুইটিকে একত্র করলে বোঝা যাবে কীভাবে এমনকি পুঁজিবাদ পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে কমিউনিজমের (মিউচুয়াল এইড) ভিত্তিভূমিতে দাঁড়ানো। যদিও এ এমন এক কমিউনিজম যাকে পুঁজিবাদ স্বীকৃতি দেয় না। এই কমিউনিজম একটা জ্যান্ত, চলমান ও প্রয়োগিক বাস্তবতা। কোনো বিমূর্ত, সুদূর, অসম্ভব ধারণা নয়। এই বাস্তবতার সাথে আমরা প্রতিনিয়ত ও প্রতিদিন বিভিন্ন মাত্রায় জড়িত হই। এ এমন এক জিনিস যাকে ছাড়া ফ্যাক্টরিও চালানো সম্ভব না। যদিও তা গোপনভাবে ফাঁকে ফোকড়ে প্রয়োগকৃত হয়। ইন্টারনেটে আজকাল বলা হয় সম্প্রতি পুঁজিবাদ নাকি সৃজনী–সহযোগিতার উপর পরজীবিতা করছে।
এটা বাজে প্রলাপ। কারণ সম্প্রতি নয়, বরাবরই তাই ছিল।
এ এক মূল্যবান বুদ্ধিবৃত্তিক প্রকল্প। কিন্তু কোনো এক কারণে কেউই তা করতে আগ্রহী নয়। হায়ারার্কিকাল ও শোষণমূলক সম্পর্কের কীভাবে পুনরূৎপাদন, প্রত্যখান হয় ও এসব কীভাবে মিউচুয়াল এইডের সাথে পেঁচিয়ে যায়; কীভাবে লালনের সম্পর্ক সহিংসতার সম্পর্কের সাথে বহাল থাকে, কিন্তু তাও সহিংসতার সিস্টেম দিয়েই কীভাবে তাদের ধরে রাখা হয় আঠার মতো যাতে এই সম্পর্কগুলো ভেঙে না পড়ে— এসব সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে ট্র্যাডিশনাল মার্ক্সবাদ ও সমসাময়িক সমাজ তত্ত্ব একগুঁয়েভাবে প্রত্যাখান করেছে কেননা তারা দাক্ষিণ্য, সহোযোগিতা বা পরার্থপরতাকে বুর্জোয়া বিভ্রম মনে করে। “ইউনিয়ন” এর থেকে সংঘর্ষ ও অহংজনিত স্বার্থপরতাকে বেশি আকর্ষণীয় ভাবা হয়। (একইভাবে বহু বাম–একাডেমিকদের কার্ল স্মিট ও টুরগোট নিয়ে লেখালেখি করতে দেখা যায় তবে বাকুনিন ও কন্ড্রিয়ারনক নিয়ে লেখেন এমন একাডেমিক খুঁজে পাওয়া খুবই মুশকিল।) স্বয়ং মার্ক্স যেমনটি বলেছিলেন যে পুঁজিবাদী সমাজে জীবনের কম সংখ্যক কিছু বছর আমাদের (সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বাস্তবিক) পুঁজি বাড়ানোর নৈরাশ্যজনক কৌশল ও সেই কৌশলের উপদেশ শুনে কাটিয়ে দিতে হয়। এসবকে সমালোচনা হিসেবে দেখানো হয়। কিন্তু আপনি যে জিনিসটার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর দাবি করেন তার সম্পর্কেই কথা বলে সারাটা জীবন পার করে দেন, সে জিনিসটা ছাড়া আপনি কোনো কিছু কল্পনাই করতে পারেন না, তাহলে আপনি কোন অর্থে সে জিনিসটার বিরুদ্ধে? কখনো কখনো মনে হয় বাম–বুদ্ধিজীবিগণ নয়াউদারবাদী অর্থনীতিবাদের সবচেয়ে বিদ্ঘুটে দিকগুলোকে অন্তরীকরণ করে ফেলেছেন। ব্যাপারটা এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছে যে এসব বিশ্লেষণ (কোনো নামকরণ করছি না) পড়ে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করি, এসব বিশ্লেষণের সাথে “স্বার্থবাদী জিনের” সামাজিক–জীবতাত্ত্বিক ধারণার পার্থক্যটা কী!
আসলে শত্রুর এরূপ অন্তরীকরণ তার চূড়ায় পৌঁছেছিল ১৯৮০ ও ‘৯০ এর দশকে যখন আন্তর্জাতিক বাম সম্পূর্ণভাবে পিছু হটছিল। এর মধ্যে বহু জল গড়িয়েছে। ক্রপোৎকিন কি আবারও প্রাসঙ্গিক? বলাই বাহুল্য ক্রপোৎকিন সবসময়ই প্রাসঙ্গিক ছিলেন। কিন্তু এই বই প্রকাশিত হচ্ছে এই বিশ্বাসে যে এক নতুন বিপ্লবী প্রজন্ম এসেছে যাদের মধ্যে অনেকে কখনো এরূপ ধারণার সাথে সরাসরি পরিচিত হয়নি। তবুও তারা তাদের বাপ–দাদার থেকে ঠান্ডা মাথায় বৈশ্বিক অবস্থার মূল্যায়ন করতে পারে কারণ তারা জানে যে তারা যদি তা না করে তাহলে অনাগত পৃথিবী তাদের জন্য জাহান্নাম হয়ে দাঁড়াবে।
আসলে ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। মিউচুয়াল এইডের রাজনৈতিক ভাবনাগুলো নতুন প্রজন্ম দ্বারা গ্রহজুড়ে নানা সামাজিক আন্দোলনে পুনরায় আবিষ্কৃত হচ্ছে। উত্তরপূর্ব সিরিয়ার গণতান্ত্রিক ফেডেরেশন (রোজাভা) ব্যাপকভাবে ক্রপোৎকিনের সামাজিক ইকোলজি ও কোঅপারেটিভ ফেডেরালবাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। আর তারা তা হয়েছে আংশিক মারে বুকচিনের লেখার দ্বারা আর আংশিক তাদের নিজেদের কুর্দি ঐতিহ্য এবং বিপ্লবী অভিজ্ঞতা দ্বারা।
পুঁজিবাদী আধুনিকতাবাদের জ্ঞানের কাঠামোর বিপরীতে কুর্দি বিপ্লবিরা নতুন সামজিক বিজ্ঞান গড়ার দায়িত্ব নিয়েছে। সেখানকার যৌথ প্রকল্পগুলোতেঅংশ নেয়া মানুষজন সত্যিই “তিলে তিলে মানুষ ও সংগ্রামকে ঐক্যবদ্ধ রাখার প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্নির্মাণ” করা শুরু করেছে। বৈশ্বিক উত্তরে, বিভিন্ন জায়গায় নানা ধরনের অকুপাই আন্দোলন থেকে শুরু করে কোভিড–১৯ মোকাবিলার জন্য নানান সংহতি প্রজেক্টে “মিউচুয়াল এইড” একটিভিস্ট ও জার্নালিস্টদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক বাক্যাংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে গ্রিসে অভিবাসী সংহতি সমাবেশ ও জাপাতিস্তার সমাজ সংগঠনে মিউচুয়াল এইডের আহবান জানান হচ্ছে। এমনকি পণ্ডিতদের দ্বারা সময় সময় এর ব্যবহারের গুজবও শোনা যাচ্ছে।
পুঁজিবাদ ও জাতীয়তাবাদ মানব প্রকৃতির গভীরে গ্রোথিত কিংবা রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব অলঙ্ঘনীয়— এই ভাবনা চ্যালেঞ্জ করার সাহস ১৯০২ সালে (মিউচুয়াল এইড বইয়ের প্রকাশ সন) খুব কম সংখ্যক বিজ্ঞানীরই ছিল। যারা সে চ্যালেঞ্জ করেছিল তাদের ‘পাগল’ তকমা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু একেবারেই খারিজ করার মতো না এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব যেমন আইনস্টাইনকে ডাকা হয়েছিল ‘উদ্ভট’ বলে আর এমন ভাব করা হয়েছিল যে তাদের রাজনৈতিক দর্শন তাদের আজব চুলের স্টাইলের মতোই গুরুত্বহীন ছিল। কিন্তু বাকি দুনিয়া এগিয়ে চলছে। বিজ্ঞানীগণ, বিশেষ করে সমাজ বিজ্ঞানীগণ কি অনুসরণ করবে?
আমরা এমন এক সময়ে এই ভূমিকাটি লিখছি যখন সারা বিশ্বে বর্ণবাদ ও রাষ্ট্রীয় সহিংসতার বিরুদ্ধে গণবিদ্রোহ চলছে। এমন এক সময় যখন সরকার ও রাষ্ট্র নৈরাজ্যবাদিদের বিরুদ্ধে বিষ ছড়াচ্ছে ঠিক যেমনটি ক্রপোৎকিন সময়ে তারা ছড়াচ্ছিল। শুনে আজব মনে হতে পারে কিন্তু মনে হচ্ছে এখন সেই “আইন ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি ঘৃণাকারী” মানুষটির জন্য মদের গ্লাস উঁচু করার একদম উপযুক্ত সময়। তিনি এমনভাবে বিজ্ঞানের চেহারা পরিবর্তন করেছিলেন যার প্রভাব এখনো আমরা পাই। পিওতর ক্রপোৎকিনের বুদ্ধিবৃত্তি ছিল সতর্ক, রঙিন, অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ও বিপ্লবী। আর আশ্চর্যজনকভাবে তা কিন্তু খুব সুন্দরভাবে যুগোপযোগিও হয়েছে। ক্রপোৎকিন পুঁজিবাদ এবং আমলাতান্ত্রিক–সমাজতন্ত্রকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। আমলাতান্ত্রিক–সমাজতন্ত্র সম্পর্কে উনার ভবিষ্যৎবাণী বারবার সত্য প্রমাণিত হয়েছে। কে এ সম্পর্কে ঠিক ছিল এ বিষয়ে আজ আর কোনো সন্দেহ নেই।
অনেকেই আছে যারা এখনো কঠোরভাবে এর সাথে দ্বিমত প্রকাশ করেন। কেউ আছেন যারা অনেক আগে ছেড়ে দেয়া জাহাজে উঠার স্বপ্ন দেখেন। আবার কেউ কেউ যা ভাবেন তা ভাবার জন্য টাকা পান। আর এই বিনয়ী ভূমিকার লেখকদের ক্ষেত্রে বলব যে আমরা আবারও আশ্চর্যান্বিত যে, বহু দশক পর বইটি পড়ার পরও এর কেন্দ্রীয় যুক্তির সাথে আমরা এখনো কতটা একমত! পুঁজিবাদী বর্বরতার একমাত্র বিকল্প রাষ্ট্রহীন সমাজতন্ত্র। এ হলো তার ফল, যা এই মহান ভূগোলবিদ আমাদের কখনো ভুলতে দেননি, “যার প্রবণতা সমাজে এখন আপাত” এবং যা সবসময়ই “কোনো না কোনোভাবে বর্তমানে আসন্ন।”
নতুন দুনিয়া গড়তে হলে আমাদের চোখের সামনে যা আছে এবং যা সবসময়ই ছিল তা পুনরায় উদ্ঘাটন করতে হবে।