- অনুবাদ: শ্রবণা শফিক দীপ্তি
[এমিল আর্মান্ড (১৮৭২-১৯৬২) একজন ফরাসি এনার্কিস্ট মুক্তচিন্তক। ব্যক্তি, প্রেম, যৌনতা, নৈতিকতা নিয়ে লিখেছেন তিনি প্রচুর। তার On sexual liberty লেখাটি প্রকাশিত হয় ১৯১৬ সালে। বর্তমান অনুবাদটি এনার্কিস্ট লাইব্রেরিতে যেই সংস্করণটি তুলে দেয়া তা অনুসরণ করে করা হয়েছে। – সম্পাদক]
“যৌন স্বাধীনতা” বিষয়ে আমাদের ধারণাকে স্পষ্ট করার আগে, আমি মনে করি খোদ স্বাধীনতার সংজ্ঞায়ন করাটা জরুরি। আমরা জানি স্বাধীনতার কোনো শেষ বলে কিছু নেই, এ কারণে চূড়ান্ত স্বাধীনতা বলেও কিছু নেই, ঠিক যেমন সাধারণ সত্য বলে কিছু নেই। বাস্তবিক অর্থে, নির্দিষ্ট প্রত্যয়গুলোর মধ্যে যার অস্তিত্ব আছে সেই সাধারণ স্বাধীনতারও কোনো অস্তিত্ব নেই, আছে শুধুমাত্র সুনির্দিষ্ট, ব্যাক্তিক স্বাধীনতা। সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়কে আসলে এড়ানো সম্ভব হয় না। যেমন কেউ নিঃশ্বাস না নেয়া বা খাবার না খাওয়ার মতো স্বাধীন হতে পারে না। স্বাধীনতা হচ্ছে সত্য, বিশুদ্ধতা, সদ্গুণ, সমতার মতোই বিমূর্তায়ন। এবং এই বিমূর্তায়নের কোনো শেষ নেই।
এর পরিবর্তে বরং ধরে নেয়া যায়, কোনো নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে বিমূর্তায়নের বদলে একটি পন্থা ও একটি উপায় হিসেবে স্বাধীনতাকে বুঝা হচ্ছে। আর এজন্যই আমরা চিন্তার স্বাধীনতার কথা বলি। অর্থাৎ এর মানে হচ্ছে, কোনো বাহ্যিক বাধা ছাড়াই মনের ভেতর যেভাবে চিন্তা উপস্থিত হয় ঠিক সেভাবেই কথা বা লেখার মাধ্যমে তাদেরকে প্রকাশ করার ক্ষমতা। আর এটাই হচ্ছে চিন্তার পরিপূর্ণ প্রকাশ, যেই লক্ষ্যের পেছনে আমরা ছুটে চলি, কিন্তু তা স্বাধীনতা নয়। আর এর কারণ হচ্ছে এই যে, সুনির্দিষ্ট কিছু স্বাধীনতা রয়েছে যাদেরকে আমরা বিমূর্তায়নের এখতিয়ার থেকে সরিয়ে এনে একটি শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করাতে পারি এবং ‘আমাদের প্রয়োজন ও আকাঙ্ক্ষাগুলোকে’ নিশ্চিত করতে পারি। এবং একে ‘আমাদের অধিকারগুলো’ থেকে আরও ভালোভাবেই এই শক্ত ভিতের উপর প্রতিষ্ঠা করা যায়। এই ‘আমাদের অধিকারগুলো’ হচ্ছে একটি বিমূর্ত ও যথেচ্ছা অভিব্যক্তি, যাকে কিনা নানা পদের কর্তৃত্বকারীরা শ্বাসরোধ করে মারে, ছিন্নভিন্ন করে বা বিকৃত করে দেয়।
ব্যক্তি হিসেবে ও ব্যক্তির স্বাধীনতা হিসেবে দেখেই, ধর্ম অথবা নাগরিক ব্যবস্থার আইনি ধারণা ও সংস্কার ছাড়াই বুদ্ধিজীবিতার জীবনের, শিল্পের জীবনের, অর্থনৈতিক জীবনের, যৌনতার জীবনের মুক্তভাবে স্বাধীন উদ্ভাসন চাই আমরা। মোরালিটিজমের আবদ্ধতা কিংবা ট্রেডিশনালিজমের বাঁধ যা কিনা আমাদের এই ছুটে চলাকে বিপদে ফেলে দিচ্ছে এগুলোকে এড়িয়েই একটা বৃহৎ নদীতে, যেখানে মানবীয় ক্রিয়াকলাপগুলোর বাধাবিপত্তিহীন বিচরণ চাই আমরা। সর্বোপরি, এই কর্তৃত্ববাদিতা, অস্থায়ী মুখোশ, জমাটবদ্ধ গিরিপথ যার পূর্বে আমরা মুশড়িয়ে পড়ি এবং মরে যাই তা থেকে এই দুর্দমনীয় ত্রুটি, বিচলিত ধাক্কা, অচেতন দৃষ্টিভঙ্গির অভাবকে সাথে নিয়েই স্বাধীনতা উত্তম বলে প্রতীয়মান হয় । দরজার বাইরের জীবন এবং ভেতরের জীবনের মধ্যে আমরা তো বাইরের জীবনকেই বেছে নেই।
***
আমরা যখন ‘যৌন স্বাধীনতা’ দাবি জানাচ্ছি তখন আসলে কী বুঝাচ্ছি আমরা? আমরা এটা বলতে কি ‘ধর্ষণের স্বাধীনতা’ কিংবা বেলাল্লাপনাকে বুঝাচ্ছি? আমরা এটা কামনা করছি যে লাভ লাইফের মধ্য থেকে আবেগ উবে যাক; উবে যাক অনুরাগ, আবেগপ্রবণতা, বা প্রেম? আমরা কি যেকোনো স্থানে ও সময়ে অকল্পনীয় উগ্রতা বা পাশবিক যৌন পরিতৃপ্তিকে মহিমান্বিত করছি? কোনোভাবেই নয়। যৌন স্বাধীনতার দাবিতে, আমরা স্রেফ প্রতিটি ব্যক্তির মুক্তির সম্ভাবনার দাবি জানাচ্ছি। যাতে করে করে তারা তাদের ইচ্ছামতো, নিজেদের যৌন জীবনের প্রতিটি পরিস্থিতিতে নিজ নিজ মেজাজ, আবেগ ও যুক্তি অনুসারে মুক্ত হতে পারে। যেগুলো কিনা তাদের কাছে উদ্ভট বলে মনে হয়। সুতরাং আমরা ‘ধর্ষণ’-এর স্বাধীনতার দাবি জানাচ্ছি না। লক্ষ্যণীয় যে, একজনের যৌন জীবন অন্য আরেকজনের যৌন জীবনের আভাস দেয় না। আমরা যৌন জীবনের এমন স্বাধীনতারও দাবি জানাচ্ছি না, যা কিনা কোনো প্রকার যৌন শিক্ষার উদ্ভব ঘটাতে পারে। আবার অন্যদিকে, আমরা মনে করি যে, বয়ঃসন্ধিকালের পূর্বে মানুষকে যৌন জীবন সংক্রান্ত পর্যায়ক্রমিক কোনো বিষয়েই অজ্ঞ রাখা উচিত নয়। যেমন, অনিবার্য যৌন আকর্ষণ, তা সে যৌন জীবনকে ভাবপ্রবণ, আবেগ বা শারীরিক যে দৃষ্টিকোণ থেকেই বিবেচনা করা হোক না কেন। আমরা বিশ্বাস করি যে, অগ্রসর চিন্তারই উচিত হবে এই শিক্ষার প্রতি সমর্থন দেয়া ও একে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, এর সাথে সংশ্লিষ্ট হবার সুযোগ হাতছাড়া না করা। আমরা মনে করি যে, যেই মুহূর্তের কথা আমরা বলছি সেই মুহূর্ত থেকেই মানুষের জানা উচিত পুলক সৃষ্টি হয় কীসে— তা সে ভাবপ্রবণতা, আবেগ এবং শারীরিক কারও যৌন জীবনে যাই মুখ্য হয়ে ওঠুক না কেন। এছাড়াও কী কী দায়বদ্ধতার তার নেয়া উচিত তাও তার জানা দরকার। উভয় লিঙ্গের মানুষদেরই এই বোঝাপড়ার দিকে যাওয়া উচিত। যেমন, গর্ভধারণের সময় নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নারীর উপরই থাকা উচিত। এবং গর্ভনিরোধক এর উপায় সম্পর্কে নারী-পুরুষ কারও অজ্ঞ থাকা উচিত নয়। আমার চিন্তার একটি যৌক্তিক উপসংহারের দিকে গেলে, আমি বলব যে, যে সমাজ তার নারী সদস্যদের হাতে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ করতে অস্বীকৃতি জানানো অথবা তাকে ঠেকানোর অধিকার দেয়নি, সে সমাজে সেইসব সদস্যরা যদি সমষ্টির জিম্মায় তার সন্তানকে ছেড়ে দেয় তা পুরোপুরি ন্যায্য হবে।
আমরা “যৌন জীবনের স্বাধীনতা” থেকে “যৌন শিক্ষাকে” আলাদা করি না।
***
ধর্মীয় ও সমাজব্যবস্থার কুসংস্কারগুলোর বিপরীতে আমরা যৌনতার প্রশ্নকে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রশ্ন হিসেবেই দেখি। মনুষ্যকর্ম যে সমস্ত প্রশ্নের আমদানি করেছে সেগুলোর সাথে একে আলাদা করে দেখি না। সামগ্রিক জীবন-অভিজ্ঞতা যতটা প্রয়োজনীয় মনে হয়, যৌন জীবনের অভিজ্ঞতাও ঠিক একই রকম অপরিহার্য। ১৬ বছরের তরুণ ছেলে বা মেয়ের ক্ষেত্রে বিবাহিত জীবনের বাধ্যবাধকতাকে আমরা ‘অর্থহীন’ বলে ঘোষণা করছি আবার একই সাথে একে অপরের সহিত আবেগীয় বা শারীরিক যে প্রকারেই হোক যৌন সম্পর্ক বজায় রাখাকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছি। এছাড়াও, পনেরো থেকে বিশ বছর বয়সের মানুষের যৌন জীবন পয়ত্রিশ বা শেষ বয়সের মানুষের যৌনজীবন থেকে ভিন্ন। যৌন জীবন এতটাই জটিল বিষয় যে একই সাথে যৌন জীবনের একাধিক অভিজ্ঞতার অস্তিত্ব থাকার ব্যাপারটি সহজেই অনুধাবন করা যায়। কেননা, প্রতিটি অভিজ্ঞতায়ই, কখনো কখনো ভাবপ্রবণতা বা আবেগীয় দিকটা প্রধান হয়ে ওঠে, আবার কখনো কখনো আবেগ বা শারীরিক দিকটি প্রধান হয়ে ওঠে, আবার কখনো কখনো স্রেফ ইন্দ্রিয়গত পরিতৃপ্তির ব্যাপারটি। একটি অভিজ্ঞতা থেকে অন্য অভিজ্ঞতায়, নৈতিক, আবেগীয় বা ইন্দ্রিয়গত অনুভূতি এত অদ্ভূত ভিন্নতা পায় যে, আমরা বলতেই পারি কোনো অভিজ্ঞতাই এর পূর্ববর্তী বা পরবর্তী অভিজ্ঞতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না।
আমরা সাধারণত অভিন্ন অভিজ্ঞতার পেছনে ছুটি না।
যেহেতু আমরা অভিজ্ঞতা থেকে তীব্র, শারীরিক, ইন্দ্রিয়গত সুখানুভূতিকে বাদ দিচ্ছি না, সেহেতু আমরা একে বুদ্ধিবৃত্তিক (শৈল্পিক, সাহিত্যিক ইত্যাদি), নৈতিক ও অর্থনৈতিক সুখানুভূতির সাথে একই পটভূমিতে স্থাপন করছি। আমরা হীন নৈতিকতাবাদী, নৈতিকভাবে বিধ্বস্ত যারা কিনা একে নিচু স্তরে স্থাপন করে তাদেরও বিবেচনায় রাখছি। জীবনের কোনো অভিজ্ঞতাই ছোট নয়, কেবলমাত্র জীবনভীতি বা ইচ্ছাশক্তির ভারসাম্যহীনতার ফলে জাত অভিজ্ঞতা বাদে। এখন, স্বাভাবিক শরীরবৃত্তিকতা, তা সে চমৎকার দৃশ্য উপভোগ করাই হোক বা তীব্রভাবে যাপন করা ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতাই হোক, তা জীবনের প্রতি ভালোবাসা ও ইচ্ছাশক্তির অনুশীলনের জন্ম দেয়।
***
‘লাম্পট্য’ যাকে অন্যভাবে বলা যায় ‘নৈতিক সমবস্থার অবক্ষয়’ তা ‘যৌন জীবনের স্বাধীনতার’ সমার্থক নয়। যৌন স্বাধীনতা কেবলমাত্র ব্যক্তিগত দিকই নির্দেশ করে।
এটি এমন এক ইচ্ছার শিক্ষাদানের প্রস্তাব করে, যা কিনা প্রত্যেককে নিজের জন্য এমন একটি মুহূর্তকে নির্ধারণ করার সুযোগ দেয় যখন তরা নিজেদের আসক্তি বা প্রবৃত্তির উপর খবরদারি বন্ধ করবে। হয়তো প্রথমে যেমনটা মনে হয় শিক্ষা এর থেকেও অনেক বেশি প্রবৃত্তিগত। অপরাপর সব স্বাধীনতার মতোই যৌন জীবনের সাথে প্রচেষ্টা জড়িত। এ প্রচেষ্টা সংযমের নয় (সত্যিকার অর্থে জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে সংযম হচ্ছে নৈতিকতার ঘাটতির লক্ষণ, ঠিক যেমন লাম্পট্য হচ্ছে নৈতিক দুর্বলতার লক্ষণ।) বরং তা বিচার, বিচক্ষণতা ও বর্গীকরণের প্রচেষ্টা। অন্যভাবে বললে, এটা নিরীক্ষার পরিমাণ বা সংখ্যার প্রশ্ন যতটা না তারচেয়ে বেশি নিরীক্ষকের গুণমানের প্রশ্ন। শেষ কথা হলো, আমাদের মনে যৌন জীবনের স্বাধীনতা শেষপর্যন্ত পূর্বপ্রস্তুতিমূলক যৌন শিক্ষা ও ব্যক্তির সংকল্পের সাথে একীভূত হয়ে থাকে।
সবরকম পরিস্থিতিতেই যৌন জীবনের স্বাধীনতা, অবশ্যই: সম্মিলনের ভেতরে এবং বাইরে… একের থেকে অন্যের যৌন অভিজ্ঞতায় পার্থক্য আছে তা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে প্রেমের এক অসুস্থ আচরণ অর্থাৎ ঈর্ষা কীভাবে অস্তিত্বশীল? কোনো ব্যক্তি যে কিনা কোনো অভিজ্ঞতার বিষয় বা বিষয়ী হয়ে ওঠছে, সে কি কোনো সংগত কারণে প্রয়োজনীয় গুণাগুণের অভাবে, যার ফলে তার কোনো সঙ্গী অন্য কোনো অভিজ্ঞতার বিষয় বা বিষয়ী হয়ে ওঠছে তা নিয়ে আক্ষেপ করতে পারে? আবেগীয় অভিজ্ঞতা এক বিষয়, ইন্দ্রিয়গত অভিজ্ঞতা আবার ভিন্ন বিষয়, আবার জন্মদানকারীর সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। এটা হতেই পারে যে কোনো নারী যাকে তার সন্তানের জন্মদাতা হিসেবে বেছে নিচ্ছে আর যার প্রতি সে সর্বোচ্চ পরিমাণ আকর্ষণ বোধ করে তারা দুজন ভিন্ন কেউ। এবং একজনের মাঝে সে যেই বিশেষ গুণাগুণের অনুসন্ধান করছে অন্যজনের ক্ষেত্রে সে ব্যাপারে সে উদাসীন। যৌক্তিকভাবে এর একজন কি অন্যজনের প্রতি ঈর্ষান্বিত হতে পারে?
***
আলাপ শেষ করা যাক। গতানুগতিক জীবনের অভিজ্ঞতার মধ্য থেকে আবেগীয় প্রপঞ্চগুলোকে প্রতিস্থাপিত করার মাধ্যমে আমরা আসলে আমরা কোনোভাবেই মানব অস্তিত্বে ‘প্রেম’ নামক উপাদানটির গুরুত্ব খর্ব করতে চাচ্ছি না। আমরা মনে করি গুরুতর, গভীর ও তীব্রভাবে কোনো অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়া সম্ভব কিন্তু আমাদের বহু নৈরাশ্য ও কষ্টভোগ থেকে নিষ্কৃতি ঘটবে যদি জীবনের একাধিক উপাদান চূড়ান্ত না হয়ে বরং সাময়িক, রূপান্তরযোগ্য, পরিবর্তনযোগ্য হিসেবে হাজির হয়। এটি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও গ্রহণ করে নেয়া হয়েছ, গ্রহণ করে নেয়া হয়েছে বুদ্ধিবৃত্তিক দৃষ্টিকোণ বা সকল দৃষ্টিকোণ থেকেই— ভাবপ্রবণ, আবেগীয় বা যৌন দৃষ্টিকোণ থেকে এটা ভিন্ন কিছু কীভাবে হতে পারে, তা আমরা ভেবে পাই না। আর এই ধারণা লুকিয়ে লুকিয়ে সাথে ধারণ করা ও গোপনে গোপনে এর চর্চা করাটাই আমাদের জন্য যথেষ্ট নয়। আমাদের দাবি হচ্ছে যৌন স্বাধীনতার গবেষণা ও চর্চা হোক লোক চক্ষুর সম্মুখে যেভাবে অন্য সকল স্বাধীনতার ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। এর অগ্রগতি ও বির্বতন শুধুমাত্র যে ব্যক্তি ও সমষ্টির সুখের সাথেই জড়িত তাই নয়, বরং বর্তমান ব্যবস্থার একটা বড় অংশের বিলুপ্তির সাথেও জড়িত।
তাছাড়া, আমরা নিজেদের প্রেমের ক্ষেত্রে একত্ব বা বহুত্বের পক্ষপাতী বলে ঘোষণা করছি না বিরুদ্ধে বলেও ঘোষণা করছি না, দুক্ষেত্রেই আমাদের অবস্থান সমান। এবং এটাও হতে পারে যে কোনো নির্দিষ্ট দম্পতির মধ্যে একজন একত্বের চর্চা করছে আবার অন্যজন বহুত্বের চর্চা করছে। এবং কোনো একসময় বহুত্বের চেয়ে একত্বই বেশি পছন্দনীয় হয়ে উঠতে পারে বা উল্টোটাও হতে পারে। এগুলো ব্যক্তির নিজস্ব বিষয়। আমরা দাবি জানাচ্ছি যে, কোনো অভিজ্ঞতা কতটা সরল বা মৌলিক তার উপর ভিত্তি করে সে অভিজ্ঞতার গুণমান যাচাই করা বন্ধ করতে হবে। আমরা এটাও দাবি জানাচ্ছি যে, এই বিষয়ে সকল প্রাণিকেই নির্দেশনা দিতে হবে। এবং পিতা, মাতা বা সঙ্গী তাদের সুবিধাজনক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে তাদেরকে বিশ্বাস করতে বাধ্য যারা সেইসব বাধ্যগতদের কাছ থেকে এসমস্ত ব্যাপার লুকিয়ে রেখে কোনো ফায়দা লুটুক। প্রত্যেকের ইচ্ছামতো নিজের যৌন জীবন নির্ধারণ করা, এর অভিজ্ঞতাকে পরিবর্তন করা অথবা নিজেকে কেবলমাত্র একক কোনোকিছুতেই বেঁধে রাখার শিক্ষা পৌঁছে যাক প্রত্যেকের কাছেই। এক কথায় বললে ‘ইচ্ছাস্বাধীন’ হয়ে উঠার দিকে যাত্রা হোক।