অনুবাদ: তাসবির কিঞ্জল
ভূমিকা: পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ এবং “শক্তিক্ষয়ের রাজনীতি” (Politics of Attrition) । যে সঙ্কটসমূহের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি সেগুলিকে কিভাবে প্রভাবিত করেছে এই বিশ্ব-ব্যবস্থা? জলবায়ু সঙ্কট, চলমান বৈশ্বিক মহামারি এবং অভিবাসী সঙ্কটের মধ্যে কি কি মিল রয়েছে? ভারতীয় লেখক অমিতাভ ঘোষ এই সাক্ষাৎকারে এমন নানান প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন।
২০১৯ সালে Penguin Random House কর্তৃক প্রকাশিত অমিতাভ ঘোষের সর্বশেষ উপন্যাস Gun Island এক অস্থিতিশীল বাস্তবতার গল্প রচনা করেছে। এমন এক বাস্তবতা যার মধ্যে আমরা এই মুহুর্তে রয়েছি। এই বাস্তবতা হল জলবায়ুর বিনাশ এবং বাধ্যতামূলক বাস্তুচ্যুতির বাস্তবতা। করোনাভাইরাস অতিমারির আলোকে বিশ্বকে সংক্রমণকারী এই সঙ্কটসমূহের পথ ধরে আমরা এগিয়ে যাব এই সমমাত্রিক বাস্তবতাসমূহের গভীরতর বোঝাপড়ার দিকে।
ইতালীয় সংবাদপত্র il manifesto-কে দেওয়া সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে লেখক অমিতাভ ঘোষ কথা বলেছেন কোভিড-১৯, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সাহিত্য কিভাবে আমাদের বদলানো বিশ্বকে বোধগম্য করে তুলতে পারে, সেই সম্পর্কে। ইতালীয় ভাষার সেই সাক্ষাৎকারের ইংরেজী সংস্করণের একটি বাংলা রূপান্তর এটি।
মূল সাক্ষাতকার
আপনার সর্বশেষ উপন্যাস Gun Island–এর গল্প আবর্তিত হয়েছে জলবায়ুর বিনাশ এবং ক্রমবর্ধমান বাস্তুচ্যুতির দুনিয়াকে নিয়ে। সাহিত্য হয়ে উঠেছে বর্তমান। অতীতে, আপনি বলেছেন কিভাবে জলবায়ু–পরিবর্তন সাহিত্য জগতের ফাঁক গলে বেরিয়ে গেছে, কিভাবে এটি মূলত বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, যাদু অথবা মহাপ্রলয়–জাতীয় গল্পের স্তরে নেমে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতা সম্পর্কে বৃহদাকারে সচেতনতা লক্ষ্য করা গেলেও শিল্পমাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন এখনও অনেকটাই অপাংক্তেয়। মনে হচ্ছে যেন এটি ভবিষ্যতের কোনও বিষয়, অথচ পরিষ্কার বোঝা যায়, এটিই আমাদের বর্তমান। আপনি কি মনে করেন করোনাভাইরাসও একই নিয়ম অনুসরণ করবে? বৈশ্বিক উষ্ণতার মতই সাহিত্যের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাওয়াই কি এর নিয়তি?
Gun Island-কে আমি আমাদের চলিত বাস্তবতার বই হিসেবেই চিন্তা করি। যে সময়ে আমরা বসবাস করছি, যে মুহুর্তটিকে আমরা অধিকার করে আছি, তারই বাস্তবতা। আমার মনে হয় এখানে আসল প্রশ্নটি হল, এই বাস্তবতাকে কেন আমাদের অনেকের জন্য বন্ধ করে রাখা হয়েছে? মোটাদাগে, লেখকগণ জলবায়ু পরিবর্তনকে ভবিষ্যতের সাথে সম্পর্কিত একটি বিষয় হিসেবে দেখতে চান। আমি, অপরদিকে, এই বিষয়গুলোকে অতীতের আলোকে ভেবে থাকি। আমি মনে করি, জলবায়ু পরিবর্তন কেবল গত ত্রিশ বছরের মধ্যে ঘটে যাওয়া কোনও বিষয় নয়। এটি এমন কিছু যার রয়েছে এক সুদীর্ঘ ইতিহাস, যা আমাদের অতীতের অনেক গভীরে গিয়ে পৌঁছায়। এটিই সেই প্রেক্ষাপট যার আলোকে আমি সমস্যাটিকে বিবেচনা করি এবং এটিই সেই প্রেক্ষাপট যার আলোকে আমি Gun Island রচনা করেছি।
অতিমারির প্রসঙ্গে বললে, আমি মনে করি না জলবায়ুর মত এটিও একইভাবে সাহিত্যকে এড়িয়ে যাবে। ২০১২ সালে নিউইয়র্ককে ধ্বংস করে দেওয়া হ্যারিকেন স্যান্ডি সম্পর্কে নগণ্য-সংখ্যক উপন্যাস বা গল্প রয়েছে। ২০১৭ সালে হস্টনে তান্ডব চালানো হ্যারিকেন হার্ভি নিয়ে আমার জানা মতে একটিও নেই। কিন্তু আমি টের পাচ্ছি অতিমারি সংক্রান্ত উপন্যাসের বিশাল একটি ঢেউ আসতে যাচ্ছে। ঠিক যেমন ৯/১১-এর পরে হয়েছিল। মহামারি ঐতিহাসিকভাবেই অনেক লেখাপত্রের জন্ম দেয়। ইতালি একটি ভালো উদাহরণ। ইতালির সর্বোৎকৃষ্ট সাহিত্যকর্মগুলোর মধ্যে দুইটি উঠে এসেছে মহামারির ভেতর থেকে । একটি হল Decameron এবং অপরটি মানজোনির The Betrothed ।
বিজ্ঞান এবং সাহিত্য একসময় নিবিড়ভাবে বিজড়িত ছিল। বিজ্ঞানী এবং প্রকৃতিবিদগণ উনিশ শতকের সবচাইতে তাৎপর্যপূর্ণ কয়েকটি সাহিত্যকর্ম সৃষ্টি করেছেন। বিজ্ঞান কেন সাহিত্য থেকে এত আলাদা হয়ে গেল এবং তাদেরকে আবার মিলিত করবার কোনও উপায় আছে কি না? আপনি কি বিশ্বাস করেন, এটি সাম্প্রতিক সঙ্কটকে “আত্মীকরণ” করতে জনমানুষকে সাহায্য করতে পারে?
এই সঙ্কট “আত্মীকরণ”-এ জনমানুষকে সহায়তা করা সাহিত্যের পক্ষে সম্ভব। কিন্তু আমি মনে করি না এই উদ্দেশ্য মাথায় নিয়ে কোনও ঔপন্যাসিকের বই লিখতে শুরু করা উচিৎ। এটি প্রোপাগান্ডা চালানোর মত ব্যাপার হবে এবং আমি মনে করি না এটি কাজ করবে। যারাই মানুষকে “শিক্ষিত” করে তুলবার অথবা তাদের মনোজগতে পরিবর্তন আনবার উদ্দেশ্য নিয়ে লেখার প্রয়াস পেয়েছেন তারাই বিভ্রান্তির শিকার হয়েছেন। আসল ঘটনাই যদি মানুষের মনকে পরিবর্তন না করে, তাহলে একটি উপন্যাস কিভাবে তা করবে?
অপরদিকে, আমি মনে করি, যে বাস্তবতার মধ্যে থেকে একটি উপন্যাস লেখা হয় তার প্রতিফলন উপন্যাসে থাকতে হবে। এই বাধ্যবাধকতা থেকেই আমি অনুভব করি, আমাকে অবশ্যই লিখতে হবে আমাদের যৌথ সঙ্কটের বিষয়ে। মানুষকে পরিবর্তন করা অথবা প্রোপাগান্ডা চালানোর কোনও ইচ্ছা থেকে নয়, যা মোটামুটি নিরর্থক।
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে অনেক দূর্ভাগ্যজনক জিনিসের মধ্যে একটি হল এটিকে দেখানো হয় প্রযুক্তিগত-বৈজ্ঞানিক সমস্যা হিসেবে। কারণ এ সম্পর্কে আমরা যাই পড়ি না কেন তা কোনও না কোনও থিংক-ট্যাঙ্ক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে আবির্ভূত হয়। অথচ বৈজ্ঞানিক এবং বিশেষজ্ঞবৃন্দই একমাত্র ব্যক্তি নন যারা বুঝতে পাচ্ছেন যে, জলবায়ু বদলে যাচ্ছে। বিশ্বের যেকোনও স্থানে চাষী এবং জেলেদের সাথে কথা বললে আপনি দেখবেন তারাও জলবায়ুর পরিবর্তন টের পেয়েছেন। জেলে বা চাষী অথবা সেই নারী যিনি জল আনতে পাঁচ মাইল হেঁটে যান, তাদের বদলে বিজ্ঞানীদের কথা আমরা শুনি তার কারণ হল, জেলে বা চাষী অথবা সেই নারী জগতের কাছে তাদের কন্ঠস্বরকে শ্রবণযোগ্য করে তুলতে পারেন না। অপরদিকে বিজ্ঞানীরা ক্ষমতা কাঠামোর একটি অংশ যা বিশেষজ্ঞবৃন্দের মতামতকে প্রচার করে। আমি অনুভব করি, আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা যেন মনে না করি, বিজ্ঞান এবং কেবলই বিজ্ঞান ‘প্রকৃতি’র হয়ে কথা বলতে পারবে। এবং দূর্ভাগ্যজনকভাবে ঔপন্যাসিকদের ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে এটিই ঘটে যখন তারা প্রাকৃতিক জগত নিয়ে লিখতে যান।
আপনার বই The Great Derangement–এ আপনি লিখেছেন, জলবায়ু সঙ্কট একই সাথে সংস্কৃতিরও সংকট এবং ফলত কল্পনার সঙ্কটও বটে। অতিমারীর ক্ষেত্রেও কি এটি সত্য? আপনি কি মনে করেন জলবায়ু সঙ্কট, সংস্কৃতির সঙ্কট এবং কোভিড–১৯ এর সঙ্কট একই সুতায় গাঁথা?
এই সঙ্কটসমূহ– এবং এর সাথে আমি যুক্ত করব ‘অভিবাসী সঙ্কট’-কে – সমজাতীয়, যদিও এদের মধ্য কোনও প্রত্যক্ষ নৈমিত্তিক সংযোগ নেই। এরা সকলেই এক প্রকান্ড ত্বরণের (Enormous Acceleration) ফলাফল যা গত ত্রিশ বছরের বেশী সময় ধরে ঘটে চলেছে। আমাদের ভুলে যাওয়া উচিৎ নয় বায়ুমন্ডলে যে গ্রীন হাউস গ্যাস ১৯৯০ সাল থেকে (সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং ‘ওয়াশিংটন ঐক্যমত্যের’ প্রায় সার্বজনীন গ্রহণের পর থেকে) আজ অবধি পাঠানো হয়েছে তার পরিমাণ মোট গ্যাসের অর্ধেকের কম হবে না। এই সময়কাল-কে বলা হচ্ছে ‘Great Acceleration’ এবং নামটি বেশ যুতসই। কারণ, আমি মনে করি আমাদের সকল সঙ্কট যেমন, জলবায়ুর অস্থিতি, অভিবাসী সঙ্কট, এবং অবশ্যই করোনাভাইরাস অতিমারি এই ত্বরণেরই প্রভাব।
বর্তমান জলবায়ু সঙ্কটের প্রধান চালক হিসেবে পুঁজিবাদকে চিহ্নিত করা হয়। আপনার বই The Great Derangement–এ আপনি আরেকজন চালককে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন: সাম্রাজ্য এবং সাম্রাজ্যবাদ। বর্তমান সঙ্কটের কারণ যে সাম্রাজ্যবাদ তার ব্যাপারটি কি? এই অতিমারীর ক্ষেত্রেও কি এটি প্রধান অনুঘটক হিসেবে হাজির হতে পারে?
আমার দৃষ্টিতে, জীবাষ্ম জ্বালানীকে কেন্দ্র করে সাম্রাজ্য এবং বৈশ্বিক ক্ষমতার হিসাব-নিকাশ সবসময়ই আমাদের ভাগ্যের একটি অপরিহার্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে কার্যকর থেকেছে এবং থাকছে। এটি বলাই যথেষ্ট যে, জীবাষ্ম জ্বালানী – এর উত্তোলণ এবং পরিবহন – বৈশ্বিক ক্ষমতা কাঠামোর কেন্দ্রীয় বিষয়। এখন এটি প্রতিষ্ঠিত যে, জীবাষ্ম জ্বালানী থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানীতে রূপান্তর শুধু যে সম্ভব তাই নয়, অন্যান্য অনেক দিক দিয়ে এটি উপকারিও হতে পারে। অবশ্য এমন একটি পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্রকে এবং আরও সাধারণ ভাবে, পশ্চিমকে লুটে নিতে পারে, জরুরি কিছু অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত সুবিধা থেকে তাদের বঞ্চিত করার মধ্য দিয়ে যা তারা তেলের বৈশ্বিক সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে পেয়ে থাকে।
ক্ষমতা কিভাবে কাজ করে এই অতিমারিও তা অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দিয়েছে। এই ক্ষেত্রে, ধনী এবং ক্ষমতাবান দেশগুলো পরীক্ষা করার জন্য এবং হাসপাতালগুলোর জন্য সরঞ্জামের বন্দোবস্ত করতে পেরেছে যখন দরিদ্র দেশগুলো পারে নি। একইভাবে, যুক্তরাষ্ট্রে ধনী এবং সেলিব্রেটিরা বিনা ঝামেলায় পরীক্ষিত হতে পেরেছেন যখন সাধারণেরা তা পারেন নি। এবং, আপনি অবশ্যই জেনে থাকবেন, আফ্রিকান-আমেরিকান বংশোদ্ভুত মানুষেরা সামঞ্জস্যহীনভাবে অতিমারি দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। কিছু শহরে এই সামঞ্জস্যহীনতা বিষ্ময় জাগানিয়া।
The Great Derangement–এ আপনি উল্লেখ করেছেন, “শক্তিক্ষয়ের রাজনীতি“র (Politics of Attrition) ভিত্তি হিসেবে যে অনুমানটি কাজ করে তা হল, যেহেতু গরীব জাতিসমূহের মানুষেরা (এবং ঐ জাতিসমূহের মধ্যে দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীগুলো) কঠোর পরিশ্রমে অভ্যস্ত, তাই তারা এমন কিছু চাপ এবং ধাক্কা সহ্য করবার ক্ষমতা রাখেন যা ধনবান জাতিগুলোকে সহজেই পরিশ্রান্ত এবং অবশ করে ফেলতে পারে। এই দৃশ্যকল্পে, দরিদ্রের হারাবার আছে অল্পই এবং অভিজাতরা নিজেদের অবস্থাকে স্থিতিশীল রাখতে গরীবদের ব্যবহার করে থাকেন। অবশ্য এটি কখনই ব্যক্ত নয় বরং গুপ্ত। চলমান সঙ্কটই এর প্রমাণ। আপনি কি বিশ্বাস করেন সেই অর্থে সংস্কৃতির রয়েছে একটি রূপান্তরকামী ক্ষমতা? এটি কি ব্যবস্থার বদল ঘটাতে পারে?
আমার সন্দেহ হয়, আর যাই ঘটুক না কেন, অতিমারির মত এই সঙ্কটগুলো পুরোনো ধারণাসমূহকে সুরক্ষিত করতে চায়। গরীব এবং বর্ণের মানুষদের (People of Color) এই অতিমারিতে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হবার ঘটনা, আমার দৃষ্টিতে, সামাজিক ডারউইনবাদের ধারাটিকে চাঙ্গা করে তুলেছে যা পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে সতত উপস্থিত। তরুণ সাদা মানুষদের (বিশেষত পুরুষ) বেশ কিছু সাক্ষাৎকার আমি দেখেছি। তারা বলছেনঃ “আমি তরুণ, স্বাস্থ্যবান এবং উপসর্গহীন। তাই কোভিড-১৯ নিয়ে আমার দুশ্চিন্তা করার কোনও কারণ নেই”। যা অব্যক্ত থেকে যায় তা হলঃ “যারা স্বাস্থ্যহীন এবং খারাপ অবস্থার অধিকারী তাদেরই কেবল দুশ্চিন্তা করা উচিৎ”। ট্রাম্পের সমর্থকরা যারা লকডাউন তুলে নেবার দাবী জানাচ্ছেন তাদের মনোভাবও এমনই। প্রথম দিকে পরোক্ষভাবে বরিস জনসন এবং ম্যাক্রোনের অবস্থানও তাই ছিল।
লকডাউন শুরুর দিনগুলিতে, ব্রুকলিনে, যেখানে আমি থাকি সেখানে আমাকে তীব্রভাবে যা নাড়া দিয়েছে তা হল, মাস্ক ছাড়া যারা বাহিরে বের হতেন তাদের প্রায় প্রত্যেকেই ছিলেন তরুণ সাদা চামড়ার পুরুষ। তারা হয়ত ভেবেছিলেন মহামারি নিয়ে তাদেরকে চিন্তা করতে হবে না। এই ধরণের আত্মবিশ্বাসের শেকড়, আমি মনে করি, শেষ পর্যন্ত প্রোথিত থাকে সেটেলার-উপনিবেশবাদের ইতিহাসের মধ্যে, যেখানে জীবাণুকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে সেটেলাররা স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। পুরাতন দুনিয়ার সেইসকল জীবাণুর বিরুদ্ধে কোনও প্রতিরোধ ক্ষমতা স্থানীয়দের ছিল না। স্থানীয় জনগোষ্ঠীগুলোর সেই দূর্বলতা একটি খুঁটি হয়ে ইউরোপীয় জৈবিক শ্রেষ্ঠত্বের বদ্ধমূল ধারণাগুলোকে আরও মজবুত করেছে এবং একধরণের সবলত্বের অনুভূতি তৈরী করেছে। এই ইতিহাসকে বিবেচনায় না নিলে কোভিড-১৯ এর প্রতি পাশ্চাত্যের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াটি বোঝা সম্ভব হবে না। পাশ্চাত্যের, বিশেষত অ্যাংলোফোনদের, অনেক নেতাই সম্ভবত বিশ্বাস করেছেন যে, এই রোগটি একটি এশিয়ান (পড়ুন, ‘প্রাচ্চীয়’) বিষয় এবং তাদের দেশ এটি দ্বারা আক্রান্ত হবে না। এমনকি তাদের জনগণ কোভিডে আক্রান্ত হবার পরেও তারা সেই সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে গড়িমসি করেছে যেগুলো গ্রহণ করেছিল চীন, তাইওয়ান এবং দক্ষিণ কোরিয়া। তারা ভেবেছিল এশিয়ার পথ অনুসরণ করলে তারা নিচে নেমে যাবে।
এমনকি আজও নিউইয়র্ক টাইমস-এ একটি নিবন্ধ দেখলাম যেখানে একজন ফরাসি বিদেশনীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছেঃ মি. রচ বলেন, “ফ্রান্স নিজেকে দক্ষিণ কোরিয়া অথবা তাইওয়ানের সাথে তুলনা করতে পারে না। আরেকটি পরাশক্তির সাথেই কেবল এটি নিজের তুলনা করতে পারে । পরাশক্তি নয় এমন দেশের সঙ্গে এর তুলনা করার ঘটনাটি রীতিমত অসহনীয়”। এই অতিমারি যা কিছু উন্মুক্ত করল তার অপরিহার্য একটি অংশ হিসেবে হাজির হয়েছে বর্ণবাদ। পরিহাসটি হচ্ছে, এই অতিমারি বিশ্বকে এটিও স্পষ্ট দেখিয়ে দিল যে, পাশ্চাত্য দেশগুলো আর সু-শাসনব্যবস্থা অথবা সর্বোৎকৃষ্ট অনুশীলনের উদাহরণ নয়।