অনুবাদ: রোকন রকি
সামরিক শাসন নয়, আমাদের শত্রু ভাইরাস
-ম্যালাকানাং এর কিছু ফাঁপা রাজনীতিবিদ১
ধীরে ধীরে শ্বাস নিন ১০০১, ১০০২, ১০০৩, ১০০৪। ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন ১০০১, ১০০২, ১০০৩, ১০০৪।
আমরা বাস করছি সেই ১৯৮৪ তে। মার্কোসের দুঃস্বপ্ন যেন ফিরে এসেছ।
এটা আসলে আমাদের সামাজিক প্রক্রিয়ার ভেতরেই গড়ে ওঠা একটা চর্চা। কর্তৃত্ববাদেরই সামাজিকীকরণ, যার চুড়ান্ত লক্ষ্য একটি কর্তৃত্বপরায়ণ সমাজ।
দারিদ্র্য একটি সামাজিক পরিস্থিতি। আমাদের প্রত্যেকের বেঁচে থাকা অথবা ন্যূনতম জীবনমানের নিশ্চয়তার জন্য প্রত্যাশিত প্রয়োজনীয় সম্পদের স্বল্পতার ভিত্তিতে একে বৈশিষ্টমণ্ডিত করা হয়। আমারা (ফিলিপিনীয়রা) এইখানেই বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। আর আমরা যদি আমাদের চিন্তাশক্তিকে একটু বিস্তৃত করি তাহলে দেখতে পাবো এটা স্পষ্টতই একটি শ্রেণীযুদ্ধ।
আমার নিত্যদিন যে বৈষম্যের শিকার হচ্ছি তা মেনে নিতে এবং সরকার ও তার সহযোগীদের হাতে আমাদের জীবনের নিয়ন্ত্রণ তুলে দিতে প্রত্যেককে সম্মত করা হচ্ছে। সেনাকর্তা ও রাজনীতিবিদরা মিলে আমাদের জন্য যে শাসনতন্ত্র তৈরি করেছে তা শুধুমাত্র মান্য করতেই বলা হচ্ছে না, এমনকি সেগুলোকে করে তোলা হয়েছে প্রশ্নাতীত। অন্ধ ভক্তিই হয়ে উঠেছে নিরঙ্কুশ। কেবলই আজ্ঞাপালন করতে থাকা।
আসলে এটাই এই লকডাউনের লক্ষ্য। এরই মধ্যে বর্ধিত করা হয়েছে কমিউনিটি কোয়ারেন্টাইন। আর সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ। শুধু দেখতে নয়, সত্যিসত্যিই এটা সামরিক শাসন ছাড়া আর কিছু নয়।
বর্তমান রাষ্ট্রপতি যখন কমিউনিটি কোয়ারেন্টাইন জারি করে, তারপর তা বৃদ্ধি করে এবং শেষ পর্যন্ত তা চরম মাত্রায় গিয়ে দাঁড়ায় তখন আমরা ধন্দে পড়ে যাই। দুতের্তে কোভিড–১৯ জাতীয় কর্মপরিকল্পনা শীর্ষক কমিটিতে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্তাদের বাদ দিয়ে সেনাবাহিনীর অবসরকপ্রাপ্ত সব জেনারেলদের নিয়োগ করেছেন। একই সঙ্গে অজুহাত হিসেবে সামরিক শাসন জারি এবং তা আড়ালের জন্য এটি একটি যুতসই পন্থা। শেষ পর্যন্ত, ‘বিশেষ ক্ষমতা’ নাজিল করতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা আইন’২০২০ পাশ করা হযেছে যা চরম স্বৈরতান্ত্রিক হস্তক্ষেপকেই বিধিবদ্ধ করে। ভাবখানা এমন যে, তারা এভাবেই কোভিড-১৯ থেকে উদ্ভুত সঙ্কটের মোকাবেলা করবে।
প্রকৃতপক্ষে, কর্তৃত্ববাদ অতিকায় ব্যক্তিমূর্তি২ যা এর সামাজিক আসক্তিকে ব্যক্তি স্বাধীকারের উপর প্রাধান্য দিয়ে নির্দিষ্ট মূল্যবোধকে পুনঃপ্রকাশ করে। এবং এইখানেই অরাজপন্থার কাজ শুরু।
আমরা আজ নিপীড়িত, আমাদের মানবতা আজ হুমকির মুখে। আইন-কানুন বা যাবতীয় শাসননীতির বশ্যতার বিপরীতে স্বাধীনতা, স্বভাব বা নিয়ম আমাদের অস্তিত্বে বিরাজিত। দুনিয়া সম্পর্কে এই আমাদের মৌলিক ভাবনা।
কমিউনিটি পাস আরোপ, কারফিউ লঙ্ঘনকারীদের বেয়াইনি আটক, দেশব্যাপি ত্রাণসরবরাহে দূর্নীতি, সুবিধাপ্রাপ্ত বা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রাধান্য, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং অনলাইন বা অফলাইনের সামগ্রিক ভিন্নমত দমন হয়ে উঠেছে খতিয়ান।
আমাদের মানবাধিকারের উপর নিত্য দিনের আঘাতে আমাদের ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠা অস্বাভাবিক নয়। কেননা আমারা ভয় নিয়ে চিন্তিত। এই আরোপিত বিচ্ছিন্নতায় আমাদের জীবন বিপন্ন। সবাই না হলেও অনেকেই স্বীকার করে যে, এই ক্রান্তিকালে আমাদের যা প্রয়োজন তার যোগান দিতে দুনিয়া ব্যাপি সরকার গুলো অক্ষম। আর হ্যা, আমরা খুব ভালো করেই জানি পুঁজিবাদের সীমাবদ্ধতা কি এবং এই গ্রহের জন্য তা কতটা অস্বাস্থ্যকর।
এই জন্যই আমারা নৈরাজ্যবাদী। ভূ-বিদ্যার পুরোধা ক্রপোৎকিন বলেছিলেন যে মানুষ হিসেবে পারস্পরিক সহযোগিতার প্রতি যে প্রাথমকি জীববিদ্যাসংক্রান্ত ঝোঁক আছে তা নিশ্চিত। কিন্তু অন্যান্য প্রজাতির সাথে সহযোগী হয়ে প্রজাতি সমূহের টিকে থাকার সাফল্য ততটা দৃশ্যমান নয়। নৃবিজ্ঞানীরা এটা উদ্ঘাটন করেছে যে, প্রাচীন সমাজ প্রায় সব সময়েই নানা ধরনের ‘উপহার অর্থনীতির’ (এটা অনেকটা এরকম যে দ্রব্যের পুঞ্জিভূতকরণ নয় বরং উন্মুক্ত রাখা৩) চর্চা করেছে এবং তারা সম্পদ অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতেই পছন্দ করতো। মানুষজনের আন্তসম্পর্কে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বিনিময় রেষারেষির পরিবর্তে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করে।
বর্তমান সময়ে এটা কিভাবে কাজে লাগানো যায়? কোভিড-১৯ সনাক্তকরণে টেস্টিং কিটের হালহকিকৎ নিয়ে হাজির প্রশ্ন থেকেই তৈরি হয়ে যায় সৃজনশীল কবিতার৪ আসর এবং অন্যদের তা প্রভাবিত করে।আর আমরাও তাকে স্বাগত জানায়।আদতে রাষ্ট্রকে কবর দেয়ার জন্য আমাদের আর গভীরতর গর্ত করার প্রয়োজন নেই,রাষ্ট্র নিজেই তা সুদরকাল আগেই খুঁড়ে রেখেছে ।
সঙ্কটকালে নৈরাজ্যিক মূল্যবোধ সক্রিয় হয়ে ওঠে। আসে পাশে তাকালেই দেখবেন আমরা আছি (বা কোন না কোন ভূমিকা রাখছি) এবং আমাদের কাজ আমরা করে যাচ্ছি। আর, হ্যাঁ এটা উচ্চস্বরেই বলতে চাই। আমরা সর্বত্র বিরাজমান!
তথ্যপঞ্জি
১. একদল ক্রেতা একটা ব্যয়বহুল সপিং মলে দুতের্তের সাথে সেলফি তোলে। ভার্জিল লোপেজ। জিএমএ নিউজ অনলাইন। মে ৭, ২০১৮. www.gmanetwork.com
২.কর্তৃত্বপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। এডরনো, লেভিনসন, সানফোড এবং ফ্যাঙ্কেল ব্রানসুইক। ১৯৫০
৩.উপহার : প্রাচীন সমাজে বিনিময়ের ধরন এবং কারন। মার্কেল মাওস। ২০০২. Libcom.org
৪. কিট : কোভিড-১৯ সংবাদ সম্মেলনে ডিউটারটের উপস্থিতিই এখন সৃজনশীল কবিতা। জেলিন মালাসিগ। Interaksyon. মার্চ ১০, ২০২০ www.interaksyon.com