তৌকির হোসেন
১
২০১৫ সালে রোলিং স্টোনের এক কভার নিউজে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একবার আলোচনায় আসেন রিপাবলিকান পার্টির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কার্লি ফ্লোরিনাকে নিয়ে একটা সেক্সিস্ট জোক করার জন্যে। লেখক পল সোলোটারফের সাথে বসে থাকার সময় একটা ভিডিও ক্লিপে ফ্লোরিনার ছবি আসতেই ট্রাম্প আঙুল দেখিয়ে বলেন, ‘এই মুখখানা দেখেন, এনাকে এই চেহারার জন্যে কে ভোট দিবে?… তিনি অবশ্যই একজন মহিলা, এখন এইজন্যে তো আমার এইসব বলা উচিত না। কিন্তু, কাম অন ফোকস। আর উই সিরিয়াস?’১
সবচেয়ে মজার ব্যাপার এই কাহিনীর জন্যে যখন ট্রাম্পকে ফক্স নিউজে ধরা হয় তখন তিনি একপ্রকার জাস্টিফিকেশনই হাজির করলেন, ‘কাম অন। আমি তো তার চেহারা নিয়ে কথা বলি নাই। আমি তো তার পারসোনা নিয়ে কথা বললাম। আমার চুলের দিকে খেয়াল করছেন কখনো? এই চুল তো অতটাও খারাপ দেখায় না। কিন্তু যখন আমার চুল নিয়ে সমালোচনা উঠে, কই কেউ তো বলে না— এটা খুব অন্যায় হইছে?’২
আমরা রাজনৈতিক লেখাপত্রে কিংবা একাডেমিক মানুষজনের কাছে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিনতে পারি একটু অন্যভাবে। ট্রাম্প নিয়ে কথা বলার সময় আমাদের একটা ব্যঙ্গ থাকে— ধুর! ওতো স্টুপিড। ওকে নিয়ে কথা বলার দরকার কী? যেন উনি স্টুপিড, জোকার এইজন্যে তাকে নিয়ে কথা বলার দরকার নাই। কিন্তু, দিনশেষে উনি কিন্তু প্রেসিডেন্টও। আমরা রাজনীতিতে কল্পনা করি, বিবেকবান মানুষজন উঁচু পদে থাকবেন, গম্ভীর, চিন্তাভাবনাসম্পন্ন মন্তব্য করবেন। কিন্তু ট্রাম্পের কেসে ব্যাপারটা উল্টা। তিনি বরঞ্চ একটা পপ-কমেডিয়ান-পলিটিশিয়ান ফেনোমেনন আকারে হাজির হয়েছেন। যেটা খুব ডিস্টার্বিং— অনেকটা একজন জোকারের প্রেসিডেন্ট হওয়া।
কিন্তু, ট্রাম্পকে সিরিয়াসলি নেওয়ার দরকার আছে যদি আমরা তার জোকগুলোকেও সিরিয়াসলি নিই। উল্লেখিত জোকটা আদতে খুবই সেক্সিস্ট৷ একজনকে লিঙ্গানুসারে, তার চেহারা দিয়ে তুচ্ছ করা। নিজের সেক্সকে অন্যের সেক্সের তুলনায় প্রভু-প্রভু ভাবা। অন্যকে তার সেক্স দিয়ে ছোট করা। এমনকি, ট্রাম্পের এইরকম সমস্ত সেক্সিস্ট জোকগুলো নিয়ে টেলিগ্রাফ ইউকে একটা সেক্সিজম ট্র্যাকার প্রতিষ্ঠা করেছে। যেখানে ট্রাম্পের সমস্ত সেক্সিস্ট কথাবার্তা, মন্তব্যের সম্মিলন ঘটানো হবে।৩ এটা অনেকটা দলিলের মত, ডকুমেন্টের মত। এবং আমরা বেশিরভাগই একমত, ট্রাম্প আদতে খুবই সেক্সিস্ট একজন মানুষ।
দার্শনিক হেগেলের সাবজেক্টিভ হিউমার বলতে যা বোঝায়, তার মধ্যে অনেকেই ট্রাম্পকে প্রথমে খুঁজে পেতে পারেন। সাবজেক্টিভ হিউমার হচ্ছে, যে ধরনের রঙ্গ/রসিকতার ভিতর বক্তার একটা বাড়ানো জোশ থাকে, এবং বেশিরভাগ সময়ই সেই ধরনের রঙ্গ/রসিকতার ভিতর একটা ফাঁপা বুলি, নেতিবাচকতার একটা জায়গা থাকে। এইখানে যে বলছে তার অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। তার ব্যক্তিগত ব্যাপারস্যাপারই হিউমারকে সাবজেক্টিভ করে তোলে। ‘এইটা ভুল’, ‘ওইটা ভুল’, ‘তুমি বোকা’ এই ধরনের কথাবার্তার ভিতরও বক্তা যা বলতেছে তাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যে বক্তার একটা অতিরঞ্জিত, আগ্রাসী মনোভাব থাকে; অনেকসময়ই সেটা জোকসের জায়গা থেকে ব্যক্তিগত কিন্তু অতটাও সিরিয়াস না। কিন্তু, দার্শনিক স্লাভো জিজেকের মতে, হেগেলের অবজেক্টিভ হিউমারই ট্রাম্পকে খুব ভালোভাবে ব্যাখা করতে পারে। অবজেক্টিভ হিউমারের ক্ষেত্রে, বক্তা যাই বলে না কেন, যেই জোকই আসে না কেন, সে ওইটা শুধু এমনে বলার জন্যেই বলে না; তাতে বক্তার গভীর অনুভূতি থাকে, যথাযথ সমর্থন থাকে, সিরিয়াসনেস থাকে এবং তাতে কল্পনার মিশ্রন থাকে। একটা অবজেক্টিভ ঝোঁক থাকে সেই ধরনের জোকস/রঙ্গ/রসিকতাগুলোয়। সাবজেক্টিভ হিউমারের মধ্যেই অবজেক্টিভ হিউমার লুকায়িত থাকতে পারে। যদি এভাবে বলি, একজন মানুষের ব্যক্তিগত জোকসের মধ্যে দিয়ে আমরা ওই মানুষের পৃথিবীকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার একটা সুযোগের অনুসন্ধান নিতে পারি। যদি কেবল বলার জন্যে বলা— এটা সাবজেক্টিভ হিউমার হয়; তাহলে, বলার পরও যে নানাকিছু না বলা থেকে যায়— সেটাকে অবজেক্টিভ হিউমারের শুরু হিসেবে দেখতে পারি।৪
বার্লট ব্রেঝটের একটা বিখ্যাত কথা আছে, স্টালিনের সময়ে এন্টি-স্টালিনিস্ট কৌতুকের জোয়ার নেমেছিলো। কিন্তু স্টালিনের রাজনীতিটাই তো একটা বড় এন্টি-স্টালিনিস্ট কৌতুক। জিজেকের মতে, একইভাবে ট্রাম্পের আসল রাজনীতির থেকে ট্রাম্পকে নিয়ে বড় আর কোন কৌতুক থাকতে পারে?৫
জোকসের একটা রাজনৈতিক দিক আছে, এমনকি জোকসের নাগরিক সমাজকে ঠিকঠাক রাখার একটা ফাংশনও আছে। খেয়াল করে দেখেন, ট্রাম্প রাজনীতিতে আসার বহু আগে থেকেই ট্রাম্প তার কমেডিয়ান ব্যাপারস্যাপারগুলোর জন্যে বিখ্যাত ছিলো। ট্রাম্পের প্যান্ট খুলে পড়ে যেতে গেছে, ট্রাম্প পাবলিক সুইসাইড করতে গেছে- এই ঘটনাগুলো মানুষকে এক অর্থে হাসায়, মজা দেয়— মানুষ ভাবে, আরে মজা তো! ট্রাম্পের সেক্সিস্ট/রেসিস্ট মন্তব্য, তথ্যগত ভুল, অর্থনৈতিক গোঁড়ামি, উল্টাপাল্টা কথাবার্তা আসলে তাকে ছোট করে না, বরং তার জনপ্রিয়তা বহুগুণে বাড়ায়ে দেয়। জিজেক দাবি করেন, এইভাবেই ব্যক্তির আইডেন্টিফিকেশন কাজ করে, ট্রাম্প যেভাবে সাধারণ মানুষকে নিয়ে হেয় করেন তাতে তার সাবলিমিনাল বা অন্তর্নিহিত বার্তাটাই হচ্ছে, ‘আরে! আমিও তোমাদেরই মত! বালছাল বকি। উল্টাপাল্টা কথা বলি।’ মানুষজন ট্রাম্পকে আরও বেশি করে রিলেট করতে পারে।৬
ট্রাম্পের রাজনীতি সিরিয়াসলি না নেওয়ার একটা বিশেষ উপায় হচ্ছে, ট্রাম্পকে নিয়ে প্যারোডি করা। এটা আমাদের খুব ভালোভাবেই তার রাজনীতি থেকে অমনোযোগী করে রাখতে পারে। এটার সবচেয়ে বাজে ব্যাপার হচ্ছে, এটা পুরো রাজনীতিকে একটা হাস্যকর গ্যাগে রূপান্তর করে। এবং এই প্রক্রিয়ার সাথে গ্যাগে অংশগ্রহণকারী, লেখক বা তাদের ইচ্ছা-টিচ্ছার কোন সম্পর্ক নাই। বরঞ্চ, এই কমিক জায়গার উপর ভিত্তি করেই ট্রাম্প তার নিজের প্রার্থীতা বানিয়েছে এবং এই জায়গাটি হচ্ছে যুগ ধরে চলে আসা তার নিজের পপ-কালচারের ব্যক্তিত্বেরই জায়গা। যে সচেতনভাবেই একজন ‘সেলফ-প্যারোডি’ এবং যে কিনা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়ে গিয়েছে এই প্যারোডির পারফর্মেন্সের উপর ভিত্তি করেই। তাকে নিয়ে আসলে যতই প্যারোডি করা হোক না কেন তাতে তার বিশেষ কিছু আসে যায় না।৭
ট্রাম্প নিয়ে প্যারোডি কিভাবে মূল রাজনীতি থেকে মনোযোগ সরায়ে দিতে পারে তার জন্যে জিজেকের একটা পুরোনো জোকসের স্মরণ আসে— পনের শতকের কথা। তখন মঙ্গোলীয়দের অধীনে রাশিয়া ছিলো। এক গ্রামের ধুলো-শানা রাস্তা ধরে একজন কৃষক আর তার বৌ হেঁটে যাচ্ছে। এমন সময় এক মঙ্গোলীয় যোদ্ধা তার ঘোড়া থেকে নামল। নেমে কৃষককে বলল, আমি তোমার বউকে এখন ধর্ষণ করব। যোদ্ধা যোগ করে, এখন রাস্তায় তো অনেক ধুলো। তাই আমি যখন ধর্ষণ করব তুমি আমার অণ্ডকোষে হাত দিয়ে রেখো যেন ধুলো না লাগে। কৃষক ধর্ষণের পুরোটা সময় তাই করল। কাজ শেষ হওয়ার পর যোদ্ধা যখন চলে গেলো তখন কৃষক আনন্দে লাফায় আর হাসিতে ভেঙে পড়ে। বউ তো অবাক। কী ব্যাপার! তোমার বউকে ধর্ষণ করে চলে গেলো। কিছু তো করলাই না বরং আরও হাসি-তামাশা করতেছো? কৃষক বলে— আরে আমি তো তার বিচিতে ধুলা মাখায়ে দিছি। এইটা কি হাসির ব্যাপার না?৮
যদিও এটা খুবই দুঃখজনক অসত্য একটা জোক কিন্তু এটা দুঃখজনক সত্যও বের করে নিয়ে আসে। ট্রাম্পকে নিয়ে যতই হাসাহাসি করা হোক তাতে কোন সমস্যা নাই কিন্তু তাতে তার কাজকর্মে বিশেষ কোন বিঘ্ন ঘটে না। ঝামেলাবিহীনভাবে তাই ট্রাম্প তার কাজ শেষ করছে, করে চলেও যাবে। আর এই সময়ে বরং ট্রাম্পকে নিয়ে প্যারোডি তার ক্ষমতাকে আরও সুসংহত, মজবুত করবে।
২
ইংল্যান্ডের ওয়ারউইক ইউনিভার্সিটি ২০১৮ সালের মে মাসে এগারজন শিক্ষার্থীকে সতর্কীকরণ বহিষ্কার করে। তার মধ্যে দুইজনকে দশ বছরের জন্যে বহিষ্কার করলেও তা কমিয়ে জানুয়ারি মাসে এক বছরে নিয়ে আসা হয়। আর বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি শিথিল করা হয়। চারজনকে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ এর দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিতে পারবে বলে আশ্বস্ত করা হয়। ওই এগারজন শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ— তারা একটি ফেসবুক গ্রুপ চ্যাটে ঠাট্টাচ্ছলে তাদের নারী বন্ধুদের অপমান করে। এরকম ৯৮ টি স্ক্রিণশট বোয়ার প্রকাশ করে যাতে দেখা যায়, অভিযুক্তদের সেক্সিস্ট মেসেজ, বন্ধুদের অবজেক্ট করা, সেক্সুয়ালি অপমানজনক মেসেজগুলো শুধু অস্বস্তিকরই নয় আশ্চর্যজনক।
যেমন একটা মেসেজ— ‘কখনো সখনো ওয়াইল্ড হয়ে গিয়ে ১০০ মেয়েকে রেপ করাটা একটা মজার ব্যাপার।’
কিংবা— ‘পুরো ফ্ল্যাটে রেপ করে সবাইরে একটা শিক্ষা দিয়ে দাও।’
অথবা— ‘রেসিজম ইজ ক্লাস।’৯
যে সমস্ত মেয়েরা ওই গ্রুপ চ্যাটে ছিলো তারা পরবর্তীতে নিজেদের অসহায়, অনিরাপদ হিসেবে অভিহিত করে।
‘আমি বিশ্বাসই করতে পারি না আমরা একই সেমিনারে ক্লাস করি।’
‘আমাদেরকে সহিংস আলোচনার বিষয় করা হয়েছে।’
‘ইউনিভার্সিটির অভিযুক্তদের এইরকম শিথিল ট্রিটমেন্ট ভয়ঙ্কর।’
‘খেলাচ্ছলে অপমান—। আমি এদেরকে ভাইয়ের মতই বন্ধু ভাবতাম। এখন তারা আমাকে জাস্ট শেষ করেছে।’১০
এটা ওয়ারউইক ইউনিভার্সিটির ঘটনা। ওয়ারউইক প্রশাসনের অভিযুক্তদের প্রতি শিথিল ট্রিটমেন্ট পত্রপত্রিকায় ঝড় আনে, ক্যাম্পাসে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে উঠে। এবং আমরা জানি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এইরকম ঘটনা ঘটলেও এবং ফেসবুকে এই ঘটনাগুলো তীব্রতা থাকলেও ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ নগণ্য কিংবা নেই-ই, প্রশাসনের কথা বাদই দিলাম। বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কলেজ/ইউনিভার্সিটির ছেলেমেয়েদের স্ক্রিনশট ফাঁস হলেও কিংবা কমেন্ট সেকশনে আজেবাজে আলাপ দেখলেও তাতে শাস্তি তো দূরের কথা, ন্যূনতম প্রতিবাদও নেই।
সেক্সিজম আমাদের সবার মাঝেই।
আমার এক কাছের বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম, আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে যে সমস্ত জোক মারা হয় তার বেশিরভাগই তো অন্যকে হিউমিলিয়েট করে মারা; এর মধ্যে কোন ধরনের জোক তোর কাছে সবচেয়ে বেশি অফেন্সিভ লাগে?
তার ভাষ্যমতে—
যখন সেক্স লাইফ নিয়ে জোক মারে। আমরা খুব অদ্ভুত সময়ে বাস করি। ধর, আমি ভার্জিন। এইটা এখন কৌতুকের বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়াইছে। আবার ধর, একটা মানুষ ভালোই সেক্স টেক্স করে, অনেকের সাথেই শুইছে, আমাদের চোখে সেও কৌতুক। আমরা সেক্স চাই, আবার চাই না। আমাদের কাছে এটা পরম আরাধ্য বিষয়বস্তু, আবার নিষিদ্ধও।
আবার ধর, আরও অনেককে নিয়েও অনেকে সেক্সিস্ট জোক দেয়। এইটাও আমার পছন্দ না। কারণ ব্যাপারটা হাসির যোগান দিতেছে না, কাউকে কেবল অপমান করার উদ্দেশ্য বারবার একই জোক বলা।
ওয়ারউইকের ছেলেগুলো স্রেফ জোকই করছিলো। কিংবা বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে হাসিতামাশাই করছিলো। হয়তো সেগুলো ডার্টি জোকস, কেবল মজার জন্যেই। কিন্তু ওই মজা যে অন্যদের জন্যে রীতিমতো অপমানজনকও হয়ে উঠতে পারে, সেই চিন্তা জোকারদের মাঝে থাকে না।
কিন্তু এই সমস্ত ডার্টি, সেক্সিস্ট জোকসগুলো আসলে আমাদের কী বলতে চায়? যারা এই জোকসগুলো মারে তাদের ব্যাপারে কী বলতে চায়?
ডার্টি জোকস নিয়ে সর্বপ্রথম কথা তুলেন সিগমুন্ড ফ্রয়েড, তাঁর ‘জোকস এন্ড দেয়ার রিলেশনস টু দ্য আনকনশাস’ (১৯০৫) গ্রন্থে। তিনিই প্রথম বললেন, জোকস হচ্ছে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য এমন একটা মাধ্যম যার মাধ্যমে মানু্ষজন যা সরাসরি বলতে পারে না তা প্রকাশ করতে পারে। মানুষ সেই জিনিসটার প্রতিই হাসে যা তাকে বিব্রত করে, উদ্বিগ্ন করে। ফ্রয়েড আরও বলেন, যেকোন পুরুষের তার বিপরীত লিঙ্গের প্রতি যে আগ্রাসী আকর্ষণ তা সরাসরি যখন বলা বা করা যায় না তাকে জোকসের মাধ্যমে বাক্যে রূপান্তর করার একটা জায়গা থাকে। যদিও পরবর্তীতে ফ্রয়েডকে সাইকোঅ্যানালাইসিসের জায়গা থেকে একপ্রকার বিসর্জনই দেওয়া হয় কিন্তু আরও দুইজন তাত্ত্বিক আছেন যারা ফ্রয়েডের উপর ভিত্তি করে ডার্টি জোকস নিয়ে কাজ করেছেন। একজন ইসরায়েল জার্লিং আরেকজন গারশন লেগম্যান। প্রথমজন ফ্রয়েডের মৃত্যুর পর পঞ্চাশের দশক থেকেই জোকসকে সাইকোথেরাপির কাজে ব্যবহার করেছেন। শেষজন ১৯৬৮ সালে তাঁর ত্রিশ বছরের জোকসের গবেষণা নিয়ে হাজির হন ৮০০ পৃষ্ঠার ঢাউস একটি বইয়ে— ‘র্যাশনালে অফ দ্য ডার্টি জোকস: অ্যান অ্যানালাইসিস অফ সেক্সুয়াল হিউমার’। এই বইটি ব্যাপক বিতর্কিত এবং অসমাদৃত। এ বইয়ের দ্বিতীয় আরেকটা ভল্যুউম আছে যা ডার্টিয়েস্ট অফ ডার্টি জোকসগুলোর অ্যানালাইসিস নিয়ে। যদিও তার জোকস নিয়ে গবেষণা মূলধারার অনেক বাইরের এবং যিনি স্বশিক্ষিত, নির্বাসিত, জোকস নিয়ে কাজ করার পর তার মুখে আর হাসি আসে না— তবুও তার এই বই গুরুত্বের দাবি রাখে, ডার্টি জোকস নিয়ে বিচারকালে। লেগম্যানের মতে, সমস্ত জোকসই প্রকৃতিগত ভাবেই আগ্রাসী। আর বিশেষত, সেক্সিস্ট ডার্টি জোকসগুলো যেগুলো পুরুষ কর্তৃক মেয়েদের প্রতি পরিচালিত হয় তা আদতে নারীর প্রতি পুরুষের আগ্রাসী মনোভাবেরই অন্যভাবে প্রকাশ। জোকস আমাদেরকে একটা মোরাল ভ্যাকেশন দান করে, যেখানে কোন বাধা থাকে না, ফাইজলামির আকারে উড়ায়ে দেওয়া যায়।
বিবিধ ডার্টি জোকসের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সাইজ নিয়ে হাসাহাসি। এইটা বড় না ওইটা ছোট এইসবের মাধ্যমে বিসদৃশ যৌনতার একটা হাস্যকর সম্ভাব্যতা হাজির করা হয়। সেক্সে অনুপযুক্ততার একটা বিষয় হিসেবে হাজির করা হয়। অথচ সেক্সের ক্ষেত্রে সাইজ অত ম্যাটারই করে না। লেগম্যানের মতে, এই ধরনের ডার্টি/সেক্সিস্ট জোকস আসলে আমাদের সেক্সুয়াল যে উদ্বিগ্নতা তাকেই হাজির করে। আমাদের সমাজে সেক্সের স্বীকৃতির বিষয়ে এতই ঝামেলা চলে যে তাতে যে ব্যক্তির উদ্বিগ্নতা বা ভয় জন্ম নেয় তা থেকে রিলিফের একটা উপায় হচ্ছে এই ডার্টি হিউমারগুলো।১১
ধরেন, কেউ একটা মেয়েকে তার বুকের মাপ নিয়ে অবজেক্টিফাই করে মজা করে কিছু বললো। তাতে আসলে যে জন অবজেক্টিফাই করে জোক মারলো তারই উদ্বিগ্নতা, ভয় হাজির হয়ে পড়ে। তার অন্য মেয়েদের বুক নিয়ে সবসময়ই অস্বস্তি কাজ করে। সে এই অস্বস্তি লুকাতে জোকের আশ্রয় নেয়। লেগম্যান আরও দেখিয়েছেন, ডার্টি জোকসের ডার্টিনেস জোকারের অবচেতনের ভয় এবং উদ্বিগ্নতারই সমানুপাতিক এক বহিঃপ্রকাশ। যে যত বেশি ডার্টি জোকার, তার স্যাডিস্ট হবার সম্ভাবনাও তত বেশি।
যারা সেক্সিস্ট জোক বা অ্যান্টি-গে হিউমার ছাড়ে, তাদের মধ্যে হীনম্মন্যতা কাজ করে তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে এই হীনম্মন্যতা পৌরুষতান্ত্রিক হীনম্মন্যতা। ওয়েস্টার্ন ক্যারোলিনা ইউনিভার্সিটি ৩৮৭ জন বিষমকামির উপর গবেষণা করে দেখেছে, যারা স্ট্রেইট বা বিষম, তারা যখন দেখে তাদের পৌরুষত্ব হুমকির মুখে, তখন যে সমস্ত গ্রুপ বা কম্যুনিটি প্রচলিত নর্ম বা বিশ্বাসের মধ্যে পড়ে না, হোক তা নারী, হোক তা গে— এই সমস্ত গ্রুপগুলোকে ‘অন্য’ হিসেবে দেখার তাগিদে সেক্সিস্ট বা অ্যান্টি-গে জোকসে জড়ায়ে পড়ে। এই জোকসগুলোর মাধ্যমে তারা এটাই বোঝাতে চায়, তোমার আমার মধ্যে কমন কোন গ্রাউন্ড নাই। তুমি আলাদা আমার থেকে। আমি একজন পুরুষ, স্ট্রেইট। তুমি তা না—। এই ধরনের জোকস তখন ওই পৌরুষত্বের হীনম্মন্যতায় ভুগতে থাকা মানুষগুলোকে একটা নিরাপদ জায়গা প্রদান করে— পালানোর, নিজের পৌরুষ চিন্তাভাবনাগুলোকে বাঁচানোর।১২
আমার বন্ধুর যে বক্তব্য তাতেও বিষয়টা ঘুরেফিরে আসে। একজন মানুষ সেক্স করে বিভিন্নজনের সাথে তা ট্র্যাডিশনাল নর্মস দিয়ে আমাদের নিতে যেমন কষ্ট হয়, তেমনি এখনও কেউ ভার্জিন থাকলে তাকে আমরা সেক্সুয়াল ফ্রিডমের জায়গা থেকে একটু ব্যাকডেটেড, অক্ষম, অসমর্থ ভাবি। দুইদিক থেকেই আমাদের সমস্যা। অন্যের সেক্স লাইফই আমাদের জন্যে বিব্রতকর অবস্থা।
অন্যদের রেপ করার ওই মেসেজগুলোকে আমরা কী বলব? স্রেফ মজা করা না, ওগুলো আসলে তাদের মনস্তত্ত্বের সংবাদ দেয়? বিভিন্ন গবেষণা আমাদের এটা বোঝায়, যারা আগে থেকেই ধরে নেয় নারীরা পুরুষের অধীনস্ত এবং সেক্সিস্ট জোকে যারা অভ্যস্ত, তাদেরকে যদি ধর্ষণ করার সুযোগের সাথে পালানোর সুযোগও দেয়া হয় তবে খুব সম্ভাবনা থাকে যে তারা ধর্ষণটা করবে। তবে এটা, যারা তুলনামূলক একটু ‘ভালো সেক্সিস্ট’— যারা ভাবে নারীরা রান্নাঘরের কাজকামে পুরুষ থেকে পারদর্শী, কিন্তু একেবারেই খারাপ না কিংবা নারীরা শিক্ষাদীক্ষায় ভালো করতে পারে তবে খুব বেশি ভালো নয়— তাদের ক্ষেত্রে খাটে না।১৩ তবে ইন্টারেস্টিং বিষয়, এই ধরনের রেপ কালচারের গবেষণা এবং তথ্য-উপাত্ত যা মূলধারার মিডিয়াগুলোর মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পায় সাধারণত তার ক্রিটিকাল কোন পর্যবেক্ষণ আসে না। এবং ধর্ষণের কারণ হিসেবে বেশিরভাগ সময়ই এই ক্ষেত্রে সেক্সুয়াল ডিপ্রাইভেশনকে অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সাইকোলজিস্ট নিকোলাস গ্রথ এই জায়গায় একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা আনেন তাঁর ‘মেন হু রেপ’ (১৯৭৯) গ্রন্থে। তিনি দাবি করেন ধর্ষকদের মূলত তিনটা সম্ভাব্য মোটিভ থাকতে পারে— স্যাডিজম, রাগ এবং ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা।১৪ এই ‘ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা’ প্রায়শই ধর্ষণের আলোচনায় ধামাচাপা পড়ে যায়। কিন্তু এটা গুরুত্বপূর্ণ যদি আমরা সমাজের প্রেক্ষিতে সেক্সিজমকে দেখতে চাই। পৌরুষত্ব কেবল কোন পুরুষকেন্দ্রিক ব্যাপার না। এর সাথে ক্ষমতা জড়িত। পৌরুষত্ব, পেশীশক্তি, আগ্রাসন সবগুলোই একটা সমাজে সেক্সিজম বিস্তারে সাহায্য করে। সবসময় যে পুরুষের মাধ্যমেই সংগঠিত হবে ব্যাপারটা এমন না। পৌরুষ-চিন্তার মধ্যে নারীরাও থাকতে পারে। সাইমন দ্য বুভোয়াঁ সর্বপ্রথম নারীর স্বভাব, চলনচালন, মনস্তত্ত্বে কিভাবে সোশ্যাল কনস্ট্রাকশন কাজ করে তা দেখিয়েছিলেন; নারীরাও কিভাবে পৌরুষতান্ত্রিক চিন্তায় অংশ নেয় তাও এনেছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ের সামাজিক মনস্তত্ত্বে ‘ইমপ্লিসিট বায়াস’ কিভাবে কাজ করে তা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হচ্ছে এবং বুভোঁয়ার কাজকে এক অর্থে নতুনভাবে দেখার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।১৫ ইমপ্লিসিট বায়াস থিওরি বলে, সমাজে যে সমস্ত স্টেরিওটাইপ প্রচলিত, যেমন—নারীরা একটু কম মেধাবী, নারীরা শারীরিকভাবে দুর্বল, নারীরা একটু অধিক যৌনকাতর—এইরকম চিন্তাভাবনা থাকার ফলে নারীরা অবচেতনেই এই স্টেরিওটাইপড চিন্তাভাবনা দ্বারা আক্রান্ত হয়। তাদের কাজকর্মে এর প্রতিফলনও চলে আসে। নারীরা এই কারণে কলেজের গণ্ডি পার হয়ে ইউনিভার্সিটিতে যেতে কিংবা ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে হিমশিম খায়, নারীদের যৌনতাকে একটা ট্যাবু আকারে হাজির করা হয়। মূলত আগে থেকেই সমাজে চালু হওয়া স্টেরিওটাইপ চিন্তাভাবনা নারীদের সীমায়িত করতে সাহায্য করে। ইমপ্লিসিট বায়াস আবার পৌরুষত্বের যে ধারণা, পৌরুষত্বের যে ক্ষমতার ডিসকোর্স, তাতেও অবদান রাখে। নারীদের অধীনে রাখার যে বিষয়সমূহ সাধারণ সামাজিক ব্যাপার হিসেবে আবির্ভূত হয় তা পৌরুষত্বের বিষয়গুলোকে শক্তিশালী করার একটা অকথ্য স্বীকৃতি দেয়। যৌনতার দিকটি নিয়ে যদি চিন্তা করি, তাহলে সামাজিক নর্মসগুলোর মধ্যে এটা কিভাবে ছড়ায়ে থাকে তা দেখতে পাব— ‘যেহেতু, নারীদের যৌনকাতরতা বেশি তাই নারীদের যৌনতা নিয়ে আলাপ করা অনুচিত। কিন্তু পুরুষরা যেহেতু শক্তিশালী, যৌনতার দিক থেকে নারীকে পরিচালিত করতে পারে, তাই তাদের সেক্সিস্ট জোক ছাড়লেও অসুবিধা নাই। সে তো সত্যি কথাই বলছে। নারীর যৌনতা নিষিদ্ধ, পুরুষের যৌনতা স্বীকৃত।’
পুরুষ যখন খেলাচ্ছলে রেপের কথা বলে তখন আদতে পৌরুষত্বের যৌনতার শক্তিরই প্রকাশ ঘটে।
পুরুষ যখন অন্যের সাইজ নিয়ে জোক ছাড়ে, কিংবা অন্য পুরুষের সাইজ নিয়ে জোক ছাড়ে, তখন নিজের পৌরুষত্বের সাইজ নিয়ে সে নিজেই আসলে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে। এটাই তখন সে জোকের মাধ্যমে কাটাতে চায়।
কেউ যখন অন্যের চেহারা নিয়ে জোক ছাড়ে তখন সে যে আসলে অন্যের চেহারা নিয়ে ডিস্টার্বড, নিজের চেহারা নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভুগে সেটারই সেক্সিস্ট জোকে প্রকাশ ঘটায়।
তাই, সেক্সিস্ট জোকস এক অর্থে সমাজে পৌরুষত্বেরই অকথিত প্রকাশ। সমাজে প্রচলিত পৌরুষত্বের যৌনশক্তি নিয়ে দ্বিধা, ভয়, উদ্বিগ্ন, অহংকার এইসবেরই প্রকাশ ঘটে সেক্সিস্ট জোকসমূহে। যারা সেক্সিস্ট জোকার তাদের ভিতরে ও চারপাশে যে ক্ষমতার ডিসকোর্স বহমান তাতে জোকসগুলোকে আলাদা করে চেনা যায় না। জোকস, কিন্তু সেক্সিস্ট না— এইরকম বস্তু পাওয়া বড়ই কঠিন ব্যাপার। সেক্সিস্ট জোকস নানাভাবে ক্ষমতাকে ঠিকঠাক রাখে, একইদিকে বহমান রাখে। ক্ষমতার ডিসকোর্সে সেক্সিস্ট জোকস তাই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এই ডিসকোর্সে পৌরুষত্বের ইডিয়োলজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে যাতে অংশ নেয় নারী/পুরুষ উভয়ই, লিঙ্গ নির্বিশেষে।
অন্যভাবে, এইরকম জোকিং এক ধরনের পৌরুষতান্ত্রিক প্র্যাকটিস/চর্চা। এর পরিধিও ব্যাপক। আর এটা আপনার উপরই নির্ভর করে আপনি এতে যুক্ত হবেন না বিযুক্ত হবেন। যদি যুক্ত হন আপনি নতুন কিছু পরিবর্তন আনছেন না। কিন্তু যদি বিযুক্ত হওয়ার চেষ্টায় থাকেন তাহলে হয়তো আপনি একটি ডিসকোর্সের বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ গড়ে তুলছেন। এখানে হতে পারেন আপনি একা, কিন্তু এই একক প্রচেষ্টা আদতে পৌরুষ-কর্তৃত্বতন্ত্রের উপর চপেটাঘাত।
সূত্র
১. Stelter, Brian. “Donald Trump Insults Carly Fiorina in Rolling Stone: ‘Look at That Face!'” CNNBusiness. September 10, 2015. Accessed July 30, 2019.
https://money.cnn.com/2015/09/09/media/donald-trump-rolling-stone-carly-fiorina.
২. YouTube. September 10, 2015. Accessed July 30, 2019. https://youtu.be/xKevXvC_Eik.
৩. Cohen, Claire. “Donald Trump Sexism Tracker: Every Offensive Comment in One Place.” The Telegraph. June 04, 2016. Accessed July 30, 2019. https://www.telegraph.co.uk/women/politics/donald-trump-sexism-tracker-every-offensive-comment-in-one-place/.
৪. Žižek, Slavoj. “Hegel on Donald Trump’s “Objective Humor”.” The Philosophical Salon. January 15, 2018. Accessed July 30, 2019. https://thephilosophicalsalon.com/hegel-on-donal-trumps-objective-humor/.
৫. উপর্যুক্ত।
৬. উপর্যুক্ত।
৭. Marche, Stephen. “Op-Ed: The Left Has a Post-truth Problem Too. It’s Called Comedy.” Los Angeles Times. January 06, 2017. Accessed July 30, 2019. http://www.latimes.com/opinion/op-ed/la-oe-marche-left-fake-news-problem-comedy-20170106-story.html.
৮. Žižek, Slavoj. “Hegel on Donald Trump’s “Objective Humor”, প্রাগুক্ত।
৯. “11 Warwick Students Temporarily Suspended after Group Chat Exposed.” The Boar. May 8, 2018. Accessed July 30, 2019. https://theboar.org/2018/05/warwick-students-temporarily-suspended/.
১০. Kennelly, Dulcie Lee & Larissa. “Warwick Students Suspended over Rape Threats Allowed to Return Early.” BBC News. January 31, 2019. Accessed July 30, 2019. https://www.bbc.com/news/uk-47060367
১১. Brottman, Mikita. Funny Peculiar: Gershon Legman and the Psychopathology of Humor. Analytic Press,, Publishers, 2004, পৃ-৪৮, ৪৯।
১২. O’Connor, Emma C., Thomas E. Ford, and Noely C. Banos. “Restoring Threatened Masculinity: The Appeal of Sexist and Anti-Gay Humor.” Sex Roles77, no. 9-10 (2017): 567-80. doi:10.1007/s11199-017-0761-z.
১৩. Countach, Martin. “Words in the Wrong Place: Are Sexist Jokes Dangerous?” Areo. February 15, 2019. Accessed July 30, 2019. https://areomagazine.com/2019/02/15/words-in-the-wrong-place-are-sexist-jokes-dangerous/
১৪. Groth, A. Nicholas. Men Who Rape: The Psychology of the Offender. New York: Basic Books, 2001.
১৫. Webber, Jonathan. “Sedimentation: The Existentialist Challenge to Stereotypes – Jonathan Webber: Aeon Ideas.” Aeon. December 14, 2018. Accessed July 30, 2019. https://aeon.co/ideas/sedimentation-the-existentialist-challenge-to-stereotypes.