- শহিদুল ইসলাম
১৯৫৫ সালে অন্তিম শয্যায় শুয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন উপলব্ধি করেছিলেন, মনুষ্যত্ব এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। তিনি পৃথিবীর ভবিষ্যত নিয়ে আতঙ্কিত হয়েছিলেন। মৃত্যু পথযাত্রী আইনস্টাইন সেদিন শান্তিময় এক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছিলেন। বুঝেছিলেন গণবিধ্বংসী যুদ্ধাস্ত্র উন্নয়নের ফলে সমগ্র বিশ্ব ধ্বংসের মুখোমুখি হয়েছে। সে বিপদ সম্পর্কে তিনি পৃথিবীকে সচেতন করার তীব্র অনুভূতি অনুভব করেন। সেজন্য তিনি বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের সহযোগিতা কামনা করেন। রাসেল সহযোগিতার হাত নিয়ে এগিয়ে আসেন। ফলে ১৯৫৫ সালের ৯ই জুলাই ঘোষিত হয় রাসেল-আইনস্টাইন শান্তি ঘোষণা। তার মাত্র ৯ দিন পর, ১৮ই জুলাই আইনস্টাইনের মৃত্যু হয়। উক্ত ঘোষণায় ১১ জন বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্বাক্ষর করেন। তার মধ্যে ৯ জন নোবেল পুরস্কারে ভূষিত। এই ঘোষণায় স্বাক্ষরকারী বিজ্ঞানী যোসেফ রটব্লাট (Joseph Rottlat) ১৯৯৫ সালে নোবেল পুরস্কার পান।
সেই ভয়ঙ্কর পরিস্থতির সন্ধিক্ষণে তাঁরা বলেন,‘আমার এই বা ওই জাতির, কোন বিশেষ একটি মহাদেশের কিংবা কোন ধর্মমত বা বিশ্বাসের সদস্য হিসেবে কথা বলছি না, আমরা কথা বলছি মানুষ হিসেবে, মনুষ্য প্রজাতির সদস্য হিসেবে, যার অব্যাহত অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ জেগেছে।’ সদ্য সমাপ্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেদিনকার পৃথিবী ছিল নানা দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জর্জরিত। কিন্তু সমস্ত দ্বন্দ্ব-সংঘাতকে উপেক্ষা করে সেদিন পৃথিবীর মূল দ্বন্দ্ব ছিল ‘সাম্যবাদ ও সাম্যবাদ বিরোধিতার মধ্যে আসুরিক বিবাদ’।
মাত্র ১৪ বছর আগে ১৯৪১ খৃষ্টাব্দে (১৩৪৮ সালের ১লা বৈশাখ) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর মৃত্যুর মাত্র ২৫ দিন আগে ‘সভ্যতার সংকট’ নামের প্রবন্ধটি প্রকাশ করেন। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। তখন পৃথিবীর দুই পরাশক্তি ছিল রবীন্দ্রনাথের কথায়, ‘এক ইংরেজ,আর এক সোভিয়েত ইউনিয়ন’। বিশ্বশক্তি হিসেবে তখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্থান ঘটেনি। জীবনের শুরুতে রবীন্দ্রনাথ আন্তরিক শ্রদ্ধা নিয়ে ইংরেজ জাতিকে হৃদয়ের উচ্চ আসনে বসিয়েছিলেন। কিন্তু জীবনের শেষ প্রান্তে পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রতি তার সে শ্রদ্ধা আর বজায় থাকেনি। উক্ত প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘পাশ্চাত্য জাতির সভ্যতা-অভিমানের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা অসাধ্য হয়েছে। সে তার শক্তিরূপ আমাদের দেখিয়েছে,মুক্তিরূপ আমাদের দেখাতে পারেনি।’ তিনি সেদিন পাশ্চাত্য সভ্যতার আসুরিক রূপ দেখেছিলেন। ‘সমস্ত যুরোপে বর্বরতা কিরূপ নখদন্ত বিকাশ করে বিভীষিকা বিস্তার করতে উদ্যত। এই মানব পীড়নের মহামারী পাশ্চাত্য সভ্যতার মজ্জার ভেতর থেকে জাগ্রত হয়ে উঠে মানবাত্মার অপমানে দিগন্ত থেকে দিগন্ত পর্যন্ত বাতাস কলুষিত করে দিয়েছে।’ অনেক দুঃখে তিনি বলেন, ‘জীবনের প্রথম আরম্ভে সমস্ত মন থেকে বিশ্বাস করেছিলাম য্যুরোপের অন্তরের এই সভ্যতার দানকে। আর আজ আমার বিদায় দিনে সে বিশ্বাস একবারে দেউলিয়া হয়ে গেল।’ তবুও তিনি মানুষের উপর বিশ্বাস হারাননি। বলেছিলেন মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ, সে বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত রক্ষা করব’। মাত্র ২৫ দিন পর তাঁর মৃত্যু হয়।
একজন বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানী। অপরজন বিশ্বের সেরা কবি। এই দুই মহান স্রষ্টা মাত্র ১৪ বছরের ব্যবধানে বর্তমান পাশ্চাত্য সভ্যতার ভাস্কর রূপ দেখে চমকে উঠেছিলেন। তাই যাবার আগে তারা পৃথিবীর সকল মানুষকে সমূহ বিপদ সম্পর্কে অবহিত ও সাবধান করে গিয়েছিলেন।
রাসেল-আইনস্টাইনের ঘোষণার আরও ৫২টি বছর অতীতের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এরমধ্যে ইংরেজ অর্থাৎ যুক্তরাজ্যকে সরিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পুঁজিবাদী বিশ্বের নেতৃত্বে উঠে এসেছে। আর ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের অধীনে ছিল এমন প্রায় দেড় শতাধিক রাষ্ট্র ‘রাজনৈতিক স্বাধীনতা পেয়ে আজ আলাদা স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র গঠন করেছে। রাসেল-আইনস্টাইন ঘোষণার সময় মূল দ্বন্দ্বটি ছিল, সমাজতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র বিরোধিতার মধ্যে- সে কথা আগেই বলা হয়েছে। সেই দুই পরাশক্তি স্বাধীনতা প্রাপ্ত নতুন জাতিরাষ্ট্রগুলেকে নিজস্ব প্রভাব বলয়ে রাখার জন্য পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড়ায়। সেটাকেই বলা হত ‘ঠাণ্ডা যুদ্ধ’। সেই ‘ঠাণ্ডা যুদ্ধে’ গরম আবহাওয়া শঙ্কিত হয়ে রাসেল-আইনস্টাইন পৃথিবীর তাবৎ মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন এই বলে-
মানুষ হিসেবে আমরা মনুষ্য জাতির কাছে আবেদন করছি। আপনারা মনুষ্যত্বকে মনে রাখুন, আর সবকিছু ভুলে যান। আপনি যদি তা পারেন, আপনার সামনে স্বর্গের নতুন পথ উন্মুক্ত, আর যদি না পারেন, তাহলে আপনার সামনে রয়েছে সর্বগ্রাসী মৃত্যুর সম্ভাব্য বিপদ।
তারপর সময় গড়িয়েছে। পৃথিবীর মানচিত্র পালটিয়েছে। সমাজতন্ত্রের শক্তিকেন্দ্র সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়েছে। সেদিনের ‘ঠাণ্ডা যুদ্ধ’ থেকে পৃথিবী মুক্ত হয়েছে। সমগ্র মানচিত্র আজ শক্তির একটি কেন্দ্রের অধীনস্ত হয়েছে। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ‘দ্বিকেন্দ্রিক’ পৃথিবীর বদলে ‘এককেন্দ্রিক’ পৃথিবী আজ যেন আর ভাস্কর হয়ে উঠেছে। ‘সমাজতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র মুক্ত’ পৃথিবী আজ গণতান্ত্রিক সুবাতাসে ভরে ওঠার কথা। পরিবর্তে বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে সে পৃথিবী থেকে গণতন্ত্রের ‘অন্তর্জলী যাত্রা’ শুরু হয়েছে।
রবীন্দ্রনাথ আশা করেছিলেন যে, পূর্ব দিগন্তেই পরিত্রাণ কর্তার উত্থান ঘটবে। আর রাসেল-আাইনস্টাইন ঘোষণায় বলা হয়-
অনুভূতির দিক থেকে আমাদের অধিকাংশই নিরপেক্ষ নই, কিন্তু মানুষ হিসেবে আমাদের অবশ্য মনে রাখতে হবে যে, পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে বিবাদমান সমস্যাগুলোর একটা সুষ্ঠু সমাধানে আমাদের পৌঁছাতে হবে। সে সমাধান একজন কম্যুনিস্ট বা কম্যুনিস্ট বিরোধী কিংবা একজন এশীয় বা ইউরোপীয় কিংবা যুক্তরাষ্ট্রীয় কিংবা একজন কৃষ্ণাঙ্গ বা শ্বেতাঙ্গ যাই হোন না কেন সবার কাছে সন্তোষজনক প্রতীয়মান হয়। অবশ্যই কোন যুদ্ধের মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান করা যাবে না। আমরা চাই পূর্ব-পশ্চিম উভয়েই বিষয়টি গভীরভাবে অনুধাবন করবে।
উক্ত ঘোষণা থেকে বোঝা যায় যে, সেদিনও পূর্ব-পশ্চিম দ্বন্দ্বের কোন সুরাহা হয়নি। তারপর অনেক সময় পার হয়েছে। পূর্ব-পশ্চিমের সে দ্বন্দ্ব আজও প্রশমিত হয়নি। বরং নতুন করে সে দ্বন্দ্ব যেন বিকট আকার ধারণ করেছে। ৯/১১ এর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্ব ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছে। তাদের সেই যুদ্ধের প্রধান লক্ষ্য ইসলামি মৌলবাদ। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির বলে বলীয়ান পশ্চিমা শক্তির কাছে সমস্ত বিশ্ব আজ আত্মসমর্পণ করেছে। ইসলামি মৌলবাদের বিরুদ্ধে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে পৃথিবীর সব দেশ। ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ আজকের দুনিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় স্লোগান। পৃথিবীর প্রায় সকল মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রের মুসলমান শাসকবৃন্দ তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। তারাও ইসলামি মৌলবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এসব রাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল সৌদি আরব, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তুরস্ক, ইরাক, বাংলাদেশ ইত্যাদি। গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, হাজার বছরের পুরানো ‘ক্রুসেড’ আজ যেন আবার নতুন করে শুরু হয়েছে। সামন্তবাদের পরাজয় এবং আধুনিক বুর্জোয়া সভ্যতার অগ্রযাত্রা সত্বেও মানুষে মানুষে ধর্মীয় বিভাজনের আজও মৃত্যু হয়নি। ধর্মান্ধ ইসলামী মৌলবাদী শক্তি আজ যেমন ধর্মের নামে পশ্চিমা (ইহুদি-খ্রিস্টীয়) সভ্যতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, তেমনি পশ্চিমেও আজ ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে আনা হচ্ছে। নতুন করে ‘সভ্যতার সংঘর্ষ তত্ত্ব’ পশ্চিমের মানুষকে গেলাবার জন্য বুর্জোয়া সভ্যতার সমস্ত অর্জনকে বিনষ্ট করা হচ্ছে। পৃথিবী আজ দ্রুত মধ্যযুগের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুগত সরকারগুলি সেইসব দেশের সাধারণ গতর খাটা মানুষের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। নয়া ঔপনিবেশিক শক্তির সাহায্য-সহযোগিতায় সেইসব দেশের সেনাবাহিনী স্ফীত থেকে ক্রমশ স্ফীততর হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবাধীন আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ সে প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহায়তা করছে। ইসলামিক-অনৈসলামিক নির্বিশেষে তারা এসব দেশের সেনাবাহিনীকে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করে চলছে। ট্রেনিং দিচ্ছে। বিশ্বশান্তি সংস্থা এ বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যুক্তরাষ্ট্রের অনুগত অথচ নিজ দেশে অজনপ্রিয় সরকারগুলিকে শক্তিশালী করার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘ নিয়ন্ত্রিত ‘বিশ্ব শান্তি সংস্থা’ ঐসব অনুগত দেশের সেনাসদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আরও বেশি অনুগত করে তুলছে। কারণ বিশ্ব শান্তি সংস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বলয়ের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। বিশ্ব শান্তি সংস্থায় কিছুদিনের জন্য কাজ পাওয়া প্রতিটি দেশের সেনাবাহিনী আজ পরম সৌভাগ্য বলে মনে করে। বিশ্ব শান্তি সংস্থা প্রতিটি দেশের সেনাবাহিনীর জন্য ‘আলাদীনের চেরাগ’। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশ না শুনলে ভয় দেখানো হয়, শান্তি সংস্থা থেকে তাদের সৈন্যদের প্রত্যাহার করা হবে। সেই ভয়ে তৃতীয় বিশ্বের শাসকশ্রেণী সিটকে থাকে। তৃতীয় বিশ্বের অগণতান্ত্রিক, স্বৈরতান্ত্রিক এবং তাবেদার সরকারগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে এভাবে যে সেনাবাহিনী গড়ে তোলা হচ্ছে তা কার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে, হচ্ছে? আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি এসব দেশের সেনাবাহিনী নিজ দেশের গণতন্ত্রকামী, ঔপনিবেশবাদ ও মৌলবাদ বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। দেখা যায় যে,বিশ্ব শান্তি সংস্থা শান্তি নয়, দেশে দেশে অশান্তি বিস্তার করে চলেছে। এসব দেশের মানুষের স্বাধীনতা হরণ করা মার্কিন সমর্থনপুষ্ট সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য।
‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রভাবাধীন একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের গণতন্ত্র-বিরোধিতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সেই ‘হিউম্যান রাইট ওয়াচ’ তা স্বীকার না করেও পারেনি। ২০০৮ সালের রিপোর্টে স্পষ্ট ভাষায় সেকথা উল্লেখ করেছে। বলেছে যে, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র নিজ স্বার্থে দেশে দেশে স্বৈরশাসকদের সমর্থন জুগিয়ে চলেছে এবং তাদের গণতন্ত্রী বলে সার্টিফিকেট দিচ্ছে। অথচ মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ওইসব শাসক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ধার ধারে না। সহ্য করে না ভিন্ন মত। তারাই আজকের বিশ্বের স্বঘোষিত মোড়ল। যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু রাষ্ট্র। রিপোর্টে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থতি নিয়েও কথা বলা হয়েছে। সেখানকার মানবাধিকার পরিস্থতি ভালো না। কোন রকম অভিযোগ ছাড়া পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন দেশ থেকে ধরে এনে গুয়ান্তানামো বন্দী শিবিরে বিনা বিচারে আটকে রাখা হয়েছে ২৭৫ জনকে। তাছাড়া আজও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ পীড়ন অব্যাহত আছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতি ১০০ জন বন্দীর ৮৮ জনই কৃষ্ণাঙ্গ।
রাসেল-আইনস্টাইনের শান্তি ঘোষণায় একটি নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখার চেষ্টা পরিলক্ষিত হয়। তার বাস্তব কারণ ছিল। দ্বিকেন্দ্রিক পৃথিবীর একপক্ষের হয়ে অপর পক্ষের বিরোধী অবস্থান নিয়ে নিজেদের বিতর্কিত করতে চাননি স্বাক্ষরকারীগণ। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিশ্বে আজ এক ভিন্ন পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে। সমগ্র পৃথিবীতে আজ মাত্র একটিই শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির জোরে সে আজ সমস্ত পৃথিবীর ওপর তার একাধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। এটাই আজকের বিশ্বের বাস্তবতা। তাই আজ রাসেল-আইনস্টাইন শান্তি ঘোষণায় অত নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করার কোন বাস্তব অবস্থা পৃথিবীতে বিরাজ করছে না। আজকের মানব সভ্যতার শত্রু সুচিহ্নিত। এদের বিরুদ্ধে পৃথিবীর সমস্ত গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ হবার কোন বিকল্প নাই।
প্রাণের অস্তিত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন। আগামী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যদি হয়, হবে সম্পূর্ণ পারমানবিক। সে যুদ্ধ এড়ানোই আজকের মানবজাতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর দেশে দেশে আজ সামরিক বাজেট স্ফীত হয়ে চলেছে। বিশ্ব শান্তির জন্য তা বড় ধরনের হুমকি। আশার কথা খোদ যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণ শান্তিকামী মানুষ ক্রমশ এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন। পৃথিবীর সকল দেশের মানবতাবাদী মানুষের ‘যুদ্ধ নয় শান্তির আন্দোলনে’ যুক্ত হবার আর কোন কোন বিকল্প নেই।
প্রথম প্রকাশ
আমাদের সময়
চতুর্থ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী সংখ্যা
২৭ মার্চ, ২০০৮