অনুবাদ: অনিক সন্ধি
অস্ট্রীয় সাম্রাজ্যে ১৮৪৮ সালেরর মহাবিদ্রোহ ব্যর্থ হবার পর শ্রমজীবী মানুষকে উজ্জীবিত করা শুরু করেন বাকুনিন। পরিকল্পনা করেন ফেডারেশন অব ফ্রি স্লাভ রিপাবলিকস গঠনের। বাকুনিনের এই তৎপরতার কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করে অস্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে তাঁকে হস্তান্তর করা হয় রাশিয়ায়। রাশিয়ায় তখন জার প্রথম নিকোলাস ক্ষমতায়। তারই নির্দেশে রাশিয়ার কারাগারে আদায় করা হয় এক স্বীকারোক্তি। মহাবিদ্রোহের পর শ্রমজীবীদের সকল সংগঠনই তখন গুপ্ত তৎপরতায়। আর বাকুনিনের ব্লাঙ্কিবাদী প্রবণতাও তখন তুঙ্গে। ঠিক এমন সময়ই ১৯৫১ সালে এই স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। তবে কোন সময়ই স্বৈরক্ষমতার পক্ষে ছিলেন না বাকুনিন। বাকুনিনের পরবর্তী সংগ্রাম ব্লাঙ্কিবাদকে পরিহার করে। তিনি হয়ে ওঠেন মুক্তিপরায়ণ সমাজতন্ত্রর লড়াকু যোদ্ধা। স্যাম ডলগফের ১৯৭১ সালে প্রকাশিত Bakunin And Anarchy গ্রন্থে এটি পত্রস্থ হয়েছে। বাংলা অনুবাদটি এর অনুসরণেই করা।- সম্পাদক
বোহেমিয়াতে আমি বিপ্লবের মাধ্যমে দেশের আপাদমস্তক সব উল্টে দিতে চেয়েছিলাম। এমনভাবে সব বদলে দিতে চেয়েছিলাম যাতে আমাদের বিজয়ের পর অস্ট্রিয়ান সরকার পুরান কিছুর অস্তিত্বই খুঁজে না পায়। অভিজাত ও যাজক শ্রেণীর সব সম্পদ-সম্পত্তি দখল করার পর তাদের সকলকে পুরোপুরি বিতাড়িত করতে চেয়েছিলাম। এর এক অংশ ভূমিহীন কৃষকদের দিতে চেয়েছিলাম আর বাকিটা বিপ্লবের অর্থায়নের জন্য রাখতে চেয়েছিলাম। আমি সব দূর্গ ধ্বংস করতে চেয়েছিলাম, সব প্রশাসনিক, আইনি, সরকারি নথি-পত্র পুড়িয়ে দিতে চেয়েছিলাম। সব বন্ধক ও ঋণ মউকুফ ঘোষণা করতে চেয়েছিলাম। সংক্ষেপে, আমি বিধ্বংসী এক বিপ্লব সংগঠন করতে চেয়েছিলাম। যদিও সে ধ্বংস মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত না করে ব্যবস্থার উপর ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম।
কিন্তু আমি সেখানেই থামতে চাইনি। আমি পুরা বোহেমিয়াকে এক বিপ্লবী ক্যম্পে পরিণত করতে চেয়েছিলাম। আমি এমন এক বাহিনী গঠন করতে চেয়েছিলাম যা বিপ্লবের প্রতিরক্ষাসহ দেশের বাইরেও বিপ্লব সম্প্রসারিত করতে পারবে।
কাজ ছাড়া কথা বলা নৈরাজ্যবাদী সব ক্লাব, পত্র-পত্রিকা বিলুপ্ত করে দেয়া হত। সব শুধু এক নিরঙ্কুশ ক্ষমতার পদতলে থাকত। সব সাবালকদের তাদের চরিত্র, ক্ষমতা ও আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে ভাগ করে সারা দেশে পাঠিয়ে দিয়ে অস্থায়ী এক বিপ্লবী ও সামরিক সংগঠন তৈরি করা হত। বিপ্লবকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য গুপ্তসমাজকে তিনটি সংগঠনে ভাগ করা হত। প্রত্যেক সংগঠন একে অপরের থেকে স্বাধীন ও অপরিচিত থাকত। সমাজগুলোর একটি থাকত শহরবাসীদের, আরেকটি যুবক-যুবতীদের ও শেষটি কৃষকদের।
প্রত্যেকটি সমাজ তার নিয়োগকৃত এলাকার সামাজিক চরিত্রের উপর ভিত্তি করে তার কর্ম সম্পাদন করত। প্রত্যেকে কঠিন ক্রমকর্তৃত্বতান্ত্রিক ও চরম শৃঙ্খলার দ্বারা সংগঠিত হত। এই তিনটি সমাজ একটি গোপন কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বারা দিকনির্দেশিত হত। এই কমিটির সদস্য সংখ্যা হত অন্তত তিন কিন্তু সর্বোচ্চ পাঁচ। যদি বিপ্লব সফল হত তবে এই সমাজগুলোর বিলুপ্তকরণ করা হত না, উলটো আরো শক্তিশালী করা হত। তাদেরকে আরো প্রসারিত করা হত ও বিপ্লবী ক্রমকর্তৃত্বে যোগ করা হত।
এরকম বিপ্লব শুধু একটা জাতির জন্য সীমিত থাকত না। বিপ্লবের উদাহরণ ও প্রচার-প্রচারণা দ্বারা শুধু মোরাভিয়াই নয়, জার্মানির সকল ভূখন্ড আকর্ষিত হত।
রাশিয়াতে আমি জনতন্ত্র চেয়েছিলাম। কিন্তু কিরকম জনতন্ত্র? অবশ্যই সংসদীয় কোন জনতন্ত্র নয়! আমি বিশ্বাস করি যে অন্তত রাশিয়ায় একটা শক্তিশালী স্বৈরশক্তি আবশ্যক। এ এমন এক শক্তি যা শুধুমাত্র জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ও তাদের শিক্ষা-দীক্ষায় মনোযোগী হবে। এমন এক শক্তি যা নিদের্শনায় স্বাধীন ও উদ্দীপনায় ভরপুর হবে কিন্তু বিশেষ কোন সংসদীয় সুবিধার অধিকারী হবে না। যার বই-পুস্তক প্রকাশ করে জনগণের কাছে তার আদর্শ পৌঁছে দেয়ার স্বাধীনতা থাকবে। যা তার সোভিয়েতগুলো দ্বারা মহিমান্বিত থাকবে। যা তার স্বাধীন কাজ-কর্মের দ্বারা শক্তিশালী হবে এবং যা কোনকিছুর বা কারোর দ্বারা শেকলবদ্ধ থাকবে না।