অনুবাদ: তানভীর আকন্দ
‘মেটাপলিটিক্সে’ ঢুকে পড়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েও, একটা কর্মসূচির মূলমন্ত্রের খসড়া প্রস্তুত করার মাধ্যমে বইটি শেষ করতে চাইছি আমি।
সমাজতান্ত্রিক মতবাদের জরাজীর্ণ অট্টালিকাকে কোনোমতে জোড়াতালি দিয়ে, প্রথাগত মার্ক্সবাদ ও নৈরাজ্যবাদের প্রাসঙ্গিক টুকরোগুলোকে একসাথে করে এবং প্রাসঙ্গিক মার্ক্সবাদী বা বাকুনিনপন্থী চিন্তাভাবনাগুলোকে একত্রে তুলে এনে, কেবলমাত্র কাগজে কলমে বুদ্ধিদীপ্ত কোনো সংশ্লেষ ও জটিল সমন্বয় খুঁজে বের করার চেষ্টা আজকের দিনে বোকামি ছাড়া আর কিছুই না…
আধুনিক মুক্তিপরায়ণ মার্ক্সবাদ, যার উৎপত্তি ১৯৬৮ সালের মে মাসে, মূলত মার্ক্সবাদ ও নৈরাজ্যবাদকে অতিক্রম করে যায়।
এই সময়ে এসে নিজেকে মুক্তিপরায়ণ মার্ক্সবাদী দাবি করতে হলে আর পেছনে ফিরে দেখার অবকাশ নেই বরং ভবিষ্যতের প্রতি অঙ্গিকারবদ্ধ হতে হবে। মুক্তিপরায়ণ মার্ক্সবাদী একজন একাডেমিক নয়, বরং একজন যোদ্ধা। সে ভালো করেই জানে যে তার ওপরই নির্ভর করছে, দুনিয়াকে বদলে দেয়ার ব্যাপারটি— এর বেশিও না, কমও না। ইতিহাস তাকে একেবারে প্রান্তে ছুঁড়ে ফেলেছে। সবখানেই সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ঘণ্টাধ্বনি বেজে উঠেছে। চাঁদের মাটিতে পা রাখবার মতোই সম্ভাবনা ও অনিবার্যতার জগতে প্রবেশ করেছে বিপ্লব। সমাজতান্ত্রিক সমাজের যথার্থ সংজ্ঞায়ন এখন আর ভাববাদী সংস্কার-প্রকল্প নয়। একমাত্র ভাববাদী সংস্কারপন্থী তারাই যারা এই বাস্তবতার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
গ্রাকুস বাবুফের ভাষায় বলতে গেলে, এই বিপ্লবকে সম্ভবপর হতে হলে কোন্ নির্দেশনা মেনে চলতে হবে আমাদের?
কাজে নামবার আগে প্রথমে, একজন মুক্তিপরায়ণ মার্ক্সবাদীকে বস্তুনিষ্ঠ পরিস্থিতির মূল্যায়ন করতে হবে সতর্কতার সাথে, দ্রুত ও নিখুঁৎভাবে প্রতিটি পরিস্থিতিতে কার্যকর শক্তিসমূহের মধ্যে সম্পর্কগুলো মিলিয়ে দেখতে হবে। আর এর জন্য মার্ক্স যেই পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন তা কোনোভাবেই অগ্রাহ্য নয়, ঐতিহাসিক ও দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ এখনো নিরাপদ পন্থা, এবং রেফারেন্স পয়েন্ট ও মডেলের পরিপূর্ণ একটা খনি, তবে একে যদি মার্ক্স যেভাবে দেখেছিলেন সেভাবে দেখা হয়ে থাকে অর্থাৎ আদর্শগত দৃঢ়তা বা যান্ত্রিক অনমনীয়তা বর্জন করে। মার্ক্সের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়া মানেই সবকিছু পণ্ড করে দিয়ে বিপ্লবের সুযোগ হাতছা
ড়া করার জন্য একের পর এক বাজে অজুহাত এবং ছদ্ম-বস্তুনিষ্ঠ যুক্তি হাজির করা নয়।
মুক্তিপরায়ণ মার্ক্সবাদ নিয়ন্ত্রণবাদ ও অদৃষ্টবাদকে অস্বীকার করে ব্যক্তির ইচ্ছাশক্তি, অন্তর্জ্ঞান, কল্পনাশক্তি, প্রতিক্রিয়া জানানোর দ্রুততা এবং জনগণের গভীর প্রেরণাকে গুরুত্ব দেয়। সংকটের মুহূর্তে অভিজাতদের বিচারবুদ্ধি থেকে যা অনেক বেশি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। মুক্তিপরায়ণ মার্ক্সবাদ অতর্কিত ঘটনাবলীর ফলাফল নিয়ে ভাবে, ভাবে সাহসিকতা ও প্ররোচনার কথাও, তা ভারী ‘বৈজ্ঞানিক’যন্ত্রপাতি দেখে স্থবির হয়ে পড়া বা হুড়মুড়িয়ে পড়ার থেকে বিরত থাকে। বাকচাতুর্য বা ভাওতাবাজির আশ্রয় সে নেয় না, এবং রাজনৈতিক হঠকারিতা ও অজানার প্রতি ভয় থেকে নিজেকে রক্ষা করে চলে।
সম্পাদকীয় নোট: মুক্তিপরায়ণ মার্ক্স? এর দ্বিথীয় কিস্তি কেন মুক্তিপরায়ণ মার্ক্সবাদ? ১৯৬৯ সালে রবার লাফোঁ কর্তৃক প্রকাশিত Pour un Marxism Libertaire গ্রন্থর উপসংহার হিসেবে এই প্রবন্ধটি যুক্ত।