অরাজ
আর্টওয়ার্ক: করোনা অ্যাপস শিল্পী: ট্রিক সূত্র: কার্টুন মুভমেন্ট
প্রচ্ছদ » এডওয়ার্ড স্নোডেন।। করোনা, নজরদারি, ভবিষ্যত

এডওয়ার্ড স্নোডেন।। করোনা, নজরদারি, ভবিষ্যত

  • অনুবাদ: প্রদীপ মার্ডী

ভূমিকা
কোভিড-১৯ এর মহামারীর প্রেক্ষাপটে কানাডীয় সাংবাদিক ও ভাইস নিউজের সহ-প্রতিষ্ঠাতা শেন স্মিথ সাক্ষাৎকার নেন এডওয়ার্ড স্নোডেনের। যেখানে শেন ও স্নোডেন কথা বলেছেন সমসাময়িক নানা বিষয়ে। অতি অবশ্যই সেই আলোচনায় করোনাভাইরাস মহামারী, প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ, নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতার মত বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে। বর্তমান বিশ্বে চলমান প্যানডেমিকের ফলাফল ভবিষ্যতে কি হতে পারে সে ব্যাপারেও কথা হয় তাদের মধ্যে। স্নোডেন মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র সাবেক সদস্য যিনি ২০১৩ দেশটির ইন্টারনেট নজরদারি কর্মসূচির তথ্য ফাঁস করে দিয়ে বৈশ্বিকভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। এডওয়ার্ড স্নোডেন ফাঁস করেন, প্রিজম কর্মসূচির আওতায় ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট, ইয়াহু, ইউটিউব এবং অ্যাপলসহ বিভিন্ন ইন্টারনেট জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানকে না জানিয়েই তাদের সার্ভারে সরাসরি প্রবেশ করে তথ্য সংগ্রহ করে আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসআই) ও ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) যা মারাত্মক এবং অসাংবিধানিক কাজ। য তাদের কথোপকথন ভাষান্তর ও গ্রন্থণা করেছেন প্রদীপ মার্ডি। নয়া দুনিয়ায় সাক্ষাতকারটি প্রথম প্রকাশিত হয়।

এডওয়ার্ড স্নোডেন

মূল আলোচনা

শেন স্মিথ: আমরা অতীতেও সার্স, মার্সসহ বিভিন্ন ভাইরাস সংক্রমণের শিকার হয়েছি এবং আমরা এটাও জানতাম যে ভবিষ্যতে আমাদের আরও এরকম ভাইরাস সংক্রমণের মুখোমুখি হতে হবে। যে কোন মহামারী বিশেষজ্ঞ বা ভাইরাস বিশেষজ্ঞের সাথে এটা নিয়ে কথা বলছি, তারা সকলেই জানতো এটা ঘটতে যাচ্ছে। এরপরও মনে হচ্ছে আমরা খুবই অপ্রস্তুত। কোভিড ১৯ আমাদের পুরোপুরি হতবাক করে ফেলেছে।

স্নোডেন: ঠিক বলেছেন। করোনা আমাদের ভয়াবহ সংকটের মধ্যে ফেলেছে। দিনের পর দিন আমরা শহরগুলোকে দুষিত করেছি। আর গাদাগাদি করে সেগুলোর মধ্যেই কোনমতে বসবাস করছি। একটা মহামারী আসার পর, এখন আমাদের সামনে স্বাস্থ্য সংকটের চেয়ে বড় কিছু নেই। কিন্তু সবাই জানতো এরকম বড় একটা দুর্যোগ আসছে। এমন কি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও মহামারীর জন্য পরিকল্পনা তৈরী করছিলো, আমি এটা জানি, কারণ রিপোর্টগুলো পড়াই ছিলো আমার কাজ । কিন্তু কোন প্রস্তুতিই কাজে আসলো না। সিস্টেম আমাদের হতাশ করলো। যদিও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সারাজীবনই হতাশ করে আমাদের। আমার কাছে যেটা সবচেয়ে অদ্ভূত লেগেছে, যুক্তরাষ্ট্রকে সব সময়ই বলা হয়েছে , এটি বিশ্বের সবচে ধনী দেশ। কিন্তু যখন মানুষ চাকরি হারানো শুরু করলো , একের পর এক প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসান দিতে শুরু করলো , তখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠলো আমাদের এত এত সম্পদগুলো গেল কোথায়? যখন হাসপাতালগুলো বলছে, তাদের আরো ভেন্টিলেটর দরকার, তখন কোথায় গেল সেই মহান প্রযুক্তিগত উন্নয়ন। সেইসব উন্নত প্রযুক্তি, যেগুলো নাগরিক নজরদারির কাজে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু মানুষের জীবন বাঁচাতে সেগুলো কোন কাজেই আসলো না। বিষয়টা চরম হতাশার।

শেন স্মিথ: দক্ষিণ কোরিয়া সাফল্যের সাথে সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। সেখানে সরকার সেইসব মানুষদের মোবাইলে মেসেজ পাঠাচ্ছে যারা করোনা সংক্রমিত মানুষের সংস্পর্শে এসেছে। তার মানে মোবাইল নেটওয়ার্কের মধ্য দিয়ে এক ধরনের কড়া নজরদারি চালাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। অন্যদিকে তাইওয়ান তথাকথিত ‘মোবাইল বেষ্টনী’ তৈরী করেছে । যেখানে তারা যদি জানে আপনি করোনা আক্রান্ত, তাহলে তারা আপনার চারপাশে মোবাইলের মাধ্যমে এক ধরনের বেষ্টনী তৈরী করবে আর আপনি যদি সেখান থেকে বাইরে যান তবে আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। মানে মোবাইল আপনার নতুন বন্ধনী। আমরা যদি দেখি চীন কি করছে, কঠোর নজরদারি ও কড়াকড়ি আরোপ করে দেরিতে হলেও করোনা নিয়ন্ত্রণ করেছে। অন্যদিকে সংক্রমণের হার বিশ্বে সর্বোচ্চ হওয়ার পরও গণতন্ত্রের ধারক বাহক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিছু করতে পারছে না। তবে কি এটাই বলা যায়, মহামারী বা মহামারীর মত যেকোন জাতীয় দুর্যোগে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার চেয়ে উত্তম?

স্নোডেন: না আমি সেটা মোটেও মনে করি না। দেখুন এটা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, চীন যা করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র তা পারে না, এর মানে এই নয় যে কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থাগুলো বেশি কার্যকরী। এখানে দুটি বিষয় আছে, যা আমরা সত্য বলে জানি, প্রথমটি হলো কেউই জানে না আসল সংক্রমণের সংখ্যাটি কত? দ্বিতীয়টি হলো, আমরা সেগুলোই জানি যে তথ্যগুলো দেয়া হচ্ছে। যেসব স্বৈরাচারী ব্যবস্থাগুলোর কথা বলছেন, শেষমেষ দেখা যায়, সেসব জায়গায় নীতি/পরিকল্পনাগুলো বিজ্ঞান ও যুক্তি দিয়ে না নিয়ে, নেয়া হচ্ছে রাজনৈতিকভাবে। অবশ্য এটি নতুন বিষয় নয়। যেমন ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু আসলে স্পেন থেকে ছড়ায় নি। এটা আসলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বাঙ্কারগুলো থেকে ছড়িয়ে ছিলো। কিন্তু তখন, সেনাবাহিনী সংবাদপত্রের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে খবরটা চাপা দেয়। স্পেন একটি নিরপেক্ষ দেশ হওয়ার পরও তাদের কথা কেউ শোনেনি। ক্ষমতাসীনরা সবকিছুতেই ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করে। প্রয়োজনে যেমন তারা স্বীকার করে। আবার প্রয়োজন পড়লে যেকোন কিছুকেই গোপন করে ফেলতে পারে চোখের নিমিষে। এটি আগেও ঘটেছে, এখনো ঘটছে।

শেন স্মিথ: চীনের মত দেশগুলোকে আমরা তাহলে কতটা বিশ্বাস করতে পারি? যারা বলছে সংক্রমণ রেখাকে দ্রুত নামিয়ে ফেলছে পেরেছে।

স্নোডেন: আমি মনে করি, তাদের বিশ্বাস করা উচিত নয়। আপনি দেখুন শুরু থেকেই চীন তার দেশে একের পর এক পশ্চিমা সাংবাদিকদের বহিষ্কার করছে, ঠিক সেই সময়, যখন আক্রান্ত এলাকা থেকে নির্ভরযোগ্য ও স্বাধীন সংবাদ প্রবাহ জরুরী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমেই আপনি জানতে পারছেন, সরকার প্রদত্ত সংখ্যার চেয়ে মৃত ও আক্রান্তের চেয়ে সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। আপনার যাচাই করারও কোন উপায় নেই। এজন্যই যেকোন দেশে স্বাধীন গণমাধ্যমের অবাধ তৎপরতা অনেক বেশি জরুরি। সংক্রমণের ধাপ ও ভয়াবহতা যত বাড়বে, রাষ্ট্রগুলোর মুঠো আরও শক্ত হবে।

আর্টওয়ার্ক: উহান ইন কোয়ারেন্টনি
শিল্পী: আরর্কাডো এস্কুইভেল
সিূত্র: কার্টুন মুভমেন্ট

শেন স্মিথ: তাহলে তখন নাগরিক স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার, গণতন্ত্রের কি হবে?

স্নোডেন: এটি সত্যিই এ সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আমরা সবাই বর্তমান নিয়েই ভাবছি, কারণ আমরা হতাশ আর বিপর্যস্ত । কিন্তু ভবিষ্যতের চিন্তাটাও করতে হবে একইসাথে । তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সকল নাগরিকের গতিবিধি নজরদারি ও নিরীক্ষণ করা হচ্ছে । পশ্চিমা বিশ্বেও তা ছড়িয়ে পড়েছে এবং অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রেও তা শুরু হয়েছে। এটি সত্যিই উদ্বেগের। আমাদের বলা হচ্ছে মহামারী ঠেকাতে এটি কার্যকরী পদক্ষেপ। নাগরিকদের সাবধান করে দেয়া হচ্ছে , ওই যে ওই লোকটা করোনা আক্রান্ত , তার কাছেও যেও না। সুন্দর ব্যবস্থা! বাস্তবিক উপকারও আছে। কিন্তু ভবিষ্যতে এই ব্যবস্থাই নাগরিকদের বিরুদ্ধে কাজে লাগানো হবে।

শেন স্মিথ: আচ্ছা, একটা বিষয় জানতে চাই। দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও এখন দেখা যাচ্ছে। প্রায়ই নাগরিকদের এরকম বার্তা দেয়া হচ্ছে, আপনি অমুক নামের একজন করোনা আক্রান্তের সাথে দেখা করেছেন। আপনার উচিত নিজেকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখা। কিংবা আপনার ১০ ফিটের মধ্যে একজন আক্রান্ত আছেন। কিভাবে তারা এতসব জানছে।

স্নোডেন: ভালো প্রশ্ন। মানে এটি এমন একটি প্রশ্ন যা সকলকে ফোনের দিকে তাকাতে বাধ্য করবে । ফোনের মাধ্যমে অবস্থান নির্ণয়ের বিভিন্ন উপায় আছে। সবচে সহজটা হলো, আপনি কোন না কোনভাবে তারবিহীন নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত। আবার একই সময় আপনি অনেক নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত নন।

ধরুন আপনি আপনার মায়ের ওয়াইফাই, প্রতিবেশীর ওয়াইফাই কিংবা লাইব্রেরীর ওয়াইফাই একই সময়ে দেখতে পারেন সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই এগুলোর আওতায় থাকতে হবে। এভাবেই তারা নেটওয়ার্ক ও ডিভাইসের একটি মিলিত মানচিত্র তৈরি করে। এবং বাকিদের বাদ দিলে আপনাকে চিহ্নিত করা সহজ হয়ে যায়। ফোন কোম্পানিগুলো প্রায়ই বলে, আপনার কোন তথ্যই আমরা অন্য কারো কাছে দেবো না। সকলের তথ্য নিয়ে আমরা একটি সামষ্টিক তথ্যভাণ্ডার তৈরি করবো। যেগুলো সবগুলোই ডাহা মিথ্যে কথা।

শেন স্মিথ: করোনভাইরাসের মহামারী সম্ভবত আমাদের মনোজগতেও পরিবর্তন এনেছে। আমরা বেশিরভাগ মানুষই ভাবছি, “হ্যাঁ তুমি আমার তথ্য পেতে পারো, কারণ আমাদের এই মহামারী ঠেকাতে হবে।” কিন্তু শেষমেষ কথাটা হচ্ছে , সভ্যতা এত এগিয়ে গেছে , উল্টোদিকে আমাদের ভয়ে ঘরে বসে থাকতে হচ্ছে।

স্নোডেন: ক্ষমতাশীলরা প্রত্যেকটা বৈশ্বিক সংকটকেই অপব্যবহার করেছে। জরুরি অবস্থাসহ নানা লোকদেখানো পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। হাস্যকর বিষয় হচ্ছে, এসকল জরুরী অবস্থা কখনোই সমাপ্ত হয় না, খালি বেড়েই চলে। বরং জরুরি অবস্থাকে স্বাভাবিক একটি বিষয় বানিয়ে ফেলেছে তারা। আর গণ নজরদারির কথা যখন বলতে হয়, বুশ আমলের ‘ওয়ারেন্টলেস ওয়্যারটেপিং প্রোগ্রাম’ এর একটি অংশ বন্ধ হয়েছিলো। কিন্তু কিছুদিন পরেই তা আবার ফিরে আসে। অন্যভাবে হলেও তা আবারো চালু হয়। এবং বারবার ফিরে এসেছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, স্বল্পমাত্রার জরুরি অবস্থা জারি করে করে আমাদের কাছে তা সহনীয় করা হয়েছে। ৯/১১ পরবর্তী বিশ্বে অনেককিছুই পাল্টে গেছে। আমরা আজও সেই একই যুদ্ধ করে যাচ্ছি, ২০ বছর আগে যেটা শুরু করেছিলাম। ৯/১১ এর ফলাফল হিসেবে পারমাণবিক শক্তিধর ইরানের আর্বিভাব ঘটে, কারণ ইরাকে তাদের ক্ষমতার ভারসাম্যপূর্ণ যে অবস্থা ছিল সেটি নষ্ট হয়ে যায়। সম্প্রতি দেখছি কর্তৃত্ববাদীদের দেখছি পশ্চিমা সমাজেও গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসছে, যা কোনভাবেই আশা করা যায়নি। স্বৈরাচারীরা যত ক্ষমতায় আসছে, তত নাগরিক অধিকার খর্ব হচ্ছে । জরুরী অবস্থা যত জারি হচ্ছে, তত আমরা কম উদার ও সীমিত স্বাধীন ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছি। আপনি বলতে পারেন না, করোনার সময় শেষ হলেও, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আপনার কাছ থেকে নেয়া তথ্যগুলোর অবব্যবহার করবে না কিংবা অবৈধ নজরদারি জারি রাখবে না। এগুলো ছোট ছোট সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঠেকাতে ব্যবহৃত হবে, এগুলো রাজনৈতিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে। এগুলো রাজনৈতিক জনমত যাচাইয়ে ব্যবহৃত হবে না , তার কোন নিশ্চয়তা নেই। যে ভাবেই হোক না কেন, যা তৈরী হয়েছে তা হলো একটি শোষণ যন্ত্র। আপনি হয়তো ফেসবুকে আপনার দেয়া তথ্য খুব একটা পরোয়া করেন না। কিন্তু ফেইসবুকের বাইরেও, কেউ না কেউ সে তথ্য পাবে এবং তার অপব্যবহার করবে।

আর্টওয়ার্ক: দ্য কার্ডেল অব সিভিলাইজেশন
শিল্পী: ইমানুয়েল দেল রোসো
সূত্র: কার্টুন মুভমেন্ট

শেন স্মিথ: ধরে নেয়া যায় , কার্যকর কোন ভ্যাকসিন আসলে করোনা মহামারী শেষ হবে। কিন্তু আরো আরো মহামারী আসবে। আরো আরো তথ্য সংগ্রহ করা হবে। নজরদারি বাড়ানো হবে। এই নজরদারির বিষয়টাকেও স্বাভাবিক করা হবে। কোনভাবেই যেটি কাম্য নয়। কিন্তু কেউ এটা নিয়ে কোন কথা বলছে না।

স্নোডেন: কেউ কিছু বলছে না, কারণ আমরা ভীত। আমরা যদি একসাথে কাজ করি, একসাথে চিন্তা করি তাহলে হয়তো বিষয়টা ঠেকানো যেতো। কিন্তু আমাদের বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রের প্রতি মুখাপেক্ষী করে দেয়া হচ্ছে। প্রথমে আমরা স্বাস্থ্য সংকটে ভুগলাম, যা দ্রুতই অর্থনৈতিক সংকট বানিয়ে ফেলা হলো। আপনি দেখবেন সব সরকার পদক্ষেপ নিতে ব্যস্ত এবং একটি মজার বিষয় লক্ষ্য করবেন, বরাদ্দকৃত বেশিরভাগ অর্থ মানুষের কাছে যাচ্ছে না, হাসপাতালেও যাচ্ছে না বরং তা ব্যবসার ক্ষেত্রে যাচ্ছে, বিভিন্ন গোষ্ঠী ও কর্পোরেশনগুলোর ঋণের জন্য যাচ্ছে যা কাঠামোগত সংকট তৈরী করেছে। আমাদের মনে রাখতে হবে ভাইরাস চলে যাবে কিন্তু এই পরিস্থিতিতে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো থেকে যাবে। আমাদের এটা নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে এবং আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মও এটা নিয়ে বেঁচে থাকবে।

শেন স্মিথ: তাহলে বলতে হয় আমরা একটা অজানা জগতের দিকে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে আমাদের কি করা উচিত।

স্নোডেন: এটা ভাববেন না যে, এই মহামারী চলে যাবার জন্য এসেছে। একজন সাধারণ আমেরিকানের কথা চিন্তা করুন। সে অফিসে এবং গাড়িতে ১০ ঘন্টা সময় অতিবাহিত করে, পরিবার থেকে দূরে, বাড়ি থেকে দূরে এবং দিনশেষে তাদের চিন্তা করার মতো জায়গা থাকে না। কিন্তু আমরা সবাই এখন একটা বাধ্যতামূলক বিশ্রামে অন্তরীণ হয়ে আছি যা সত্যিই বিস্ময়কর ঐতিহাসিক ঘটনা। এই মুহুর্তে গোটা সিস্টেম খুবই অস্থির এবং নের্তৃত্ব কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস করতে হবে, শুধুমাত্র সংস্কারমূলক পরিবর্তন নয় বৈপ্লবিক পরিবর্তনেরও সামর্থ্য আমাদের আছে। সিস্টেমটাকে আমরা বদলাতে পারি। যেটা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা যদি এই সিস্টেম পরিবর্তন না করি তবে তা শুধুমাত্র আমাদের স্বাস্থ্যই মনিটর করবে না, তারাই ঠিক করবে কে চাকরি পাবে, কে স্কুলে যাবে, কে ঋণ পাবে, কে বাড়ি পাবে আর কে পাবে না।

প্রদীপ মার্ডী