অরাজ
প্রচ্ছদ » লুইস মিশেল || কমিউনের স্মৃতি

লুইস মিশেল || কমিউনের স্মৃতি

  • অনুবাদ: সারোয়ার তুষার

সম্পাদকের নোট: প্যারি কমিউনের অন্যতম লড়াকু কমিউনার্ড, লুইস মিশেল ছিলেন শিক্ষিকা। কমিউনের পতনের পর তাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল নিউ ক্যালদোনিয়ার পেনাল কলোনিতে। ১৮৮০ সালে আবার ফ্রান্সে ফেরার পর, জীবনের বাকি সময়টা লুইস মিশেল কাটিয়েছেন হয় জেলখানায়, নয়তো বক্তৃতা দিয়ে। ১৮৮৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর আত্মজীবনী, Mémoires de Louise Michel écrits par elle-même। এই লেখাটি সেই বইয়ের অংশ।

লুইস মিশেল (১৮৩০-১৯০৫)

আমি প্রথমে নিজের সম্পর্কে কিছু না বলেই এই ভলিউমটি লিখেছিলাম। বন্ধুরা যখন এ ব্যাপারটি আমার নজর আনল, কিছু বিষাদ হজম করে হলেও আমি ব্যক্তিগত কিছু পর্ব যুক্ত করলাম।  আমি যা করেছি বরং তার বিপরীত প্রভাবটিই প্রকাশিত হতে শুরু করল: কাহিনিটি এগিয়ে নেয়ার সাথে সাথে আমি আমার প্রকৃত অস্তিত্ব মুক্তি সংগ্রামের সেই সময়টির স্মৃতিময় পুনর্জীবন দেখতে ভালবাসলাম এবং এর স্মৃতিতে নিজেকে হারাতে আমি ভালোবাসি।

এজন্যই আমি আমার চিন্তাভাবনাগুলিকে এমন এক ধারাবাহিক টুকরো টুকরো দৃশ্যের সমাহার হিশেবে দেখি যেখানে অগুনিত অস্তিত্ব চিরতরে অদৃশ্য হয়ে যায়।

আমরা Champs de Mars এ অবস্থান করছি: আমাদের অস্ত্রগুলি স্তুপীকৃত এবং অসাধারণ এক রাত। রাত তিনটার দিকে আমরা ভের্সাইতে যাব ভেবে রওয়ানা হলাম। আমি বৃদ্ধ Louis Moreau এর সাথে কথা বলি এবং তিনিও যাত্রা করতে পেরে বেজায় খুশি। আমার পুরানা রাইফেলের জায়গায় তিনি আমাকে একটি রেমিংটন কারবাইন দিয়েছেন। এই প্রথমবারের মতো আমার কাছে একটি ভাল অস্ত্র এসেছে যদিও এটি খুব একটা নির্ভরযোগ্য না বলে বলা হয়েছিল। তবে কথাটি সত্য নয়। আমি আমার মাকে বলা মিথ্যাগুলো পুনর্ব্যক্ত করলাম যেন তার দুশ্চিন্তা না হয়। আমার দিকথেকে সমস্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে, আমার পকেট আশ্বাসব্যঞ্জক পত্রে ঠাসা, যেগুলো আগাম তারিখে পোস্ট করা হবে। আমি আমার মাকে বলি তাদের আমাকে প্রয়োজন ছিল; আমি প্রথম মুহূর্তেই মন্টমার্টে যাবো।

আমার হতাভাগা মা! আমি কতই না তাকে ভালোবাসতাম! আমার বিবেকের নির্দেশ অনুসারে তিনি আমাকে চলার যে স্বাধীনতা দিয়েছেন তার জন্য আমি তার কাছে চিরকৃতজ্ঞ এবং আমি প্রায়শই তার দুর্দিনে তাকে রক্ষা করতে কতই না পছন্দ করতাম!

মন্টমার্টের কমরেডরা আছেন। আমরা একে অপরের বিষয়ে নিশ্চিত এবং যারা আদেশ দিবে তাদের সম্পর্কে নিশ্চিত।

এখন আমরা চুপ করে যাই; লড়াই শুরু হয়েছে। একটি পাহাড়ে আমি এগিয়ে যেতেই চিৎকার করছি: ভার্সাই এর দিকে! ভার্সাই! লোকেদের জড়ো করার জন্য রাজাউয়া আমাকে তার তলোয়ারটি ছুঁড়ে দিল। আমরা পাহাড়ের চূড়ায় হাত মিলিয়েছি; আকাশে যেন আগুনের ছটা! কেউ আহত হয়নি।

আমরা ছোট গাছের স্টাম্পে পূর্ণ জমিকে ট্যারিলেয়ার হিশেবে স্থাপন করি। আপনি ভাববেন যে আমরা এটি আগেও করেছি।

এবার আমরা মৌলিনাক্সে (Moulineaux) রয়েছি। যেমনটা ভাবা হয়েছিল ঠিক তেমন সৈন্য সন্নিবেশিত নেই। একবার ভাবলাম আমরা আরও অগ্রসর হবো, কিন্তু না, আমরা এখানেই রাত কাটাতে যাচ্ছি, আমাদের একাংশ দূর্গে, বাকিরা জেসুইট কনভেন্টে। আমাদের মধ্যে যারা ভেবেছিল যে আমরা আরও এগিয়ে যাব, মন্টমার্তের কমরেডরা এবং আমি নিজেও, ক্রোধে কন্দনরত। তথাপি আমরা দৃঢ় আত্মবিশ্বাসী। ইউডস, র্যানভিয়ার বা অন্যরা কেউই গুরুতর কারণ ছাড়া যেখানে থাকার কথা সেখানে থাকবেন না। তারা আমাদের কারণগুলি জানায় কিন্তু আমরা শুনি না। আমরা আশা পুনর্জীবিত করি: ইসির দূর্গে এখন কামান প্রস্তুত আছে এবং সেখানে থাকাই ভাল হবে। দখলকৃত অবশিষ্টাংশ, বন্দুকের ক্যালিবারের সাথে খাপ না খাওয়া গুলি সমেত আমাদের যুদ্ধসজ্জা অদ্ভুত।

আমি দেখলাম আমাকে ছায়ার মতো পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে যারা কনভেন্টের নীচের বড় হলে ছিল: ইউডস, মে ভাইয়েরা, ক্যারিয়া ভাইয়েরা, বীরের মতো সাহসী তিন বৃদ্ধ পুরুষ: বৃদ্ধ মোরো, বৃদ্ধ শেভালিট, বুড়ো মানুষ ক্যারিয়া, রাজউয়া, মন্টমার্তের সকল ফেডারেল; বন্য জন্তুর মতো স্পষ্ট সাদা দাঁতযুক্ত এক নিগ্রো কালো: তিনি ভাল, বুদ্ধিমান এবং সাহসী।

জেসুইটরা চলে গেছে, কেবলমাত্র একজন একজন বৃদ্ধ লোক ছাড়া যিনি বললেন যে তিনি কমিউনে ভীত নন এবং তিনি নিজের ঘরে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছেন এবং যে রাঁধুনি, কেন জানি না, সে আমাকে আমার ভাই জিন ডেস ইউটোমার্সকে স্মরণ করিয়ে দেয়। দেয়ালগুলি সাজাতে যে পেইন্টিংগুলি ব্যবহার করা হয়েছে বিষয়বস্তুর চরিত্র সম্পর্কে ভাল ধারণা দেয় এমন একটি প্রতিকৃতির দিকে আলাদাভাবে নজর গেল আমার, নিশ্চই কোন না কোন জেসুইট পরিভালকের প্রতিকৃতি হবে।

একটি বেশ জমকালো দূর্গ, আমি আর্টিলারিম্যানদের সাথে বেশ ভাল সময় ব্যয় করি। আমরা সেখানে দীর্ঘকালীন বন্ধু ভিক্টরিন ইডস-এর দেখা পেয়েছি, এখনও তিনি শক্ত-সমর্থ রয়েছেন। তিনিও গুলি চালাতে বেশ পারদর্শী।

আছেন নারীরা, যারা তাদের বুলেটবিদ্ধ লাল পতাকাসমেত ফেডারেলকে স্যালুট জানাচ্ছিল। তারা দূর্গে মোবাইল হাসপাতাল স্থাপন করেছিল, সেখান থেকে আহতদের প্যারিসে উন্নততর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। আরও কার্যকর হতে আমরা ছড়িয়ে পড়ি। আমি ক্ল্যামার্টে ট্রেন স্টেশনে যাই, প্রতি রাতে ভের্সাই আর্টিলারি দিয়ে গুলি চালাতাম। আমরা ইসির দূর্গে যাওয়ার জন্য একটি হেজ রেখাযুক্ত পথ অনুসরণ করি; রাস্তাগুলো কামানে পিষ্ট পুষ্পাঞ্জলিতে পূর্ণ।

কাছেই পাথর কল। ক্ল্যামার্ট ট্রেঞ্চে প্রায়শই আমাদের যথেষ্ট লোকবল থাকে না। কেল্লার কামান যদি আমাদের সমর্থন না করে তবে যে-কোন আচমকা আক্রমণের মুখে পড়ে যাওয়া সম্ভব ছিল: ভের্সাইপন্থীরা কখনওই জানত না সংখ্যায় আমরা ঠিক কত গুটিকয়েক ছিলাম।

ব্যারিকেড, দ্য প্যারিস কমিউন || শিল্পী: আন্দ্রে দেভাম্বে

এমনকি এমনও হয়েছিল যে এক রাতে স্টেশনের সামনের পরিখরে আমরা কেবল দুজন ছিলাম!, যদিও আমি জানি না কেন: প্রাক্তন পন্টিফিকাল জোউভে এবং আমার লোডেড রাইফেলসহ: আমরা নূন্যতম সতর্কতা অবলম্বন করেছিলাম। আমাদের অবিশ্বাস্য ভাগ্য সেই রাতে কোন আক্রমণ হয়নি। আমরা যখন ট্রেঞ্চের সামনে পিছনে টহল দিচ্ছিলাম, তখন মুখোমুখি হতেই তিনি আমাকে বললেন:

আমরা যে জীবনযাপন করছি তা নিয়ে আপনার অনুভূতি কেমন?

অদূরেই একটা নদীর তীর দেখতে পাওয়ার মতন অনুভূতি, যেখানে আমাদেরকে পৌঁছাতে হবে। , আমি বললাম।

তিনি উত্তর দিলেন, আমার কাছে একটি ছবিওয়ালা বই পড়ার মতো অনুভূতি হচ্ছে।

আমরা ক্ল্যামার্টের ওপর ভের্সাই এর নীরবতার মধ্যেই পরিখায় হাঁটতে থাকি।

লিসবন যখন সকালে তাঁর সাথে একদল লোক নিয়ে হাজির হলো এসেছিল তখন তিনি একইসাথে খুশি ও ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন, যেন মাছি তাড়াচ্ছেন এমন ভঙ্গিতে নীচে মাথা নাড়ছিলেন।

একই জায়গায় বার্সার সাথে আরও একটি রাতের অভিযাত্রা, যারা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিল তাদের হাজার হাজার বিপদ নিয়ে ভের্সাইয়ের আগুনে যেন আমাদের সাথে যোগ দিতে।

আমি আবারও এসব দেখতে পাচ্ছি। যেন স্বপ্নের রাজ্যে স্বপ্ন, স্বাধীনতার স্বপ্ন।

একজন শিক্ষার্থী যে কিনা আমাদের ধারণাগুলো ধারণ করে না, তবে ভের্সাইপন্থীও নন, তার সম্ভাবনার গণনা যাচাই করার লক্ষ্যে আগুনের বিনিময়ে ক্ল্যামার্টে এসেছিল।

তার সাথে ছিল বদলেয়ারের একটি ভলিউম, যা আমরা সময় সময় কয়েক পৃষ্ঠা পড়েছিলাম।

একদিন যখন বেশ কয়েকটি ফেডেরাল একই জায়গায় খাদের মাঝখানে একটি ছোট প্ল্যাটফর্মে কামানবল দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল, তখন সে তার হিসাবগুলি আবার পরীক্ষা করতে চেয়েছিল এবং আমাকে এক কাপ কফির আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।

আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে নিজেদেরকে স্থির করেছিলাম এবং La Charogne শিরোনামের কবিতাটি পড়ছিলাম। আমাদের কফি যখন প্রায় শেষের দিকে, তখন ন্যাশনাল গার্ডের সৈন্যরা আমাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে, আমাদেরকে টেনেহিঁচড়ে নিতে থাকে আর চেঁচিয়ে বলতে থাকে, আচ্ছা, আচ্ছা! বেশ! এখনই এসব থামাতে হবে!

ঠিক সেই মুহূর্তেই কামানের গোলাটি আঘাত হানল এবং কাপগুলো প্ল্যাটফর্মে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেল, বইটিকে অতিসূক্ষ্ম ছেঁড়া টুকরোতে পরিণত করল।

আমার হিসাব একদম হুবহু ছিল, শিক্ষার্থীটি তার শরীরকে আচ্ছাদিত করা ময়লা পরিস্কার করতে করতে বলল।

এরপর সে আরও কয়েকদিন ছিল, কিন্তু আমি তাকে আর দেখিনি।

কমিউনের দিনগুলোতে আমি কেবল একটা চ্যাংড়া ছেলের মধ্যেই সাহসের অভাব দেখেছি। সে তার সদ্য বিবাহিত বউ এর চিন্তায় পেরেশান ছিল এবং তার ডরপুক স্বভাবের সমালোচনা করে তাকে প্যারিস ফেরত পাঠাতে ইউডসের কাছে আমি এক পত্র পাঠিয়েছিলাম। চ্যাংড়াটি এতেও খুশি ছিল। আমি লিখেছিলাম:

প্রিয় ইউডস,

আপনি কি অনুগ্রহ করে এই আহাম্মকটিকে প্যারিসে ফেরত পাঠাবেন? এ কেবল ঘাবড়াতেই জানে! আমি তাকে বুঝিয়েছি যে আমাদের দূর্গ থেকে যেসব কামান দাগা হচ্ছে, তা মূলত ভের্সাই থেকে আমাদের দিকে দাগা হচ্ছে। যেন সে দ্রুত পালায়। দয়া করে তাকে দ্রুত প্যারিস পাঠিয়ে দিন।

সে এতটাই ভয় পেয়েছিল যে আমরা আর তাকে দেখিনি। ভার্সাই সেনাবাহিনী প্যারিসে প্রবেশের সময় সে যদি তার ফেডারাল ইউনিফর্ম রাখে, তবে তাকে অবিলম্বে কমিউনপন্থী ধরে নিয়ে সাথে সাথে গুলি করে হত্যা করা হত। এই পরিস্থিতিতে আরও অনেকে ছিলেন।

একই ধরনের অন্য একটি যুবক ছিল। একদিন রাতে ক্লামার্ট স্টেশনে যখন আমরা হাতেগোণা কয়েকজন ছিলাম এবং ভের্সাই থেকে আমাদের দিকে গুলিবর্ষণ করা হচ্ছিল, এমন এক অবস্থায় সে হঠাৎ আত্মসমর্পণের কল্পনায় মশগুল হয়ে গেল। কিছুতেই তাকে অন্য কিছু বোঝানো যাচ্ছিল না। আমি তাকে বলেছিলাম: তুমি চাইলে আত্মসমর্পণ কর, তবে আমি এখানেই থাকব এবং তুমি যদি আত্মসমর্পণ কর তবে আমি স্টেশনটি উড়িয়ে দেব, আমি একটি ছোট্ট চেম্বারে একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে বসেছিলাম যেখানে প্রজেক্টিকেলগুলো স্তূপ করে রাখা, সেখানে আমার সাথে করমর্দন করতে এল সেই নিগ্রোটি। সে সেদিন টহলে ছিল। পরেরদিন যুবকটি চলে গেল এবং কখনই ফিরে আসেনি।

ক্ল্যামার্টে আমি ও ফার্নান্দেজ বিচিত্র কিছু অ্যাডভেঞ্চারের মুখোমুখি হলাম। আমরা বেশ কয়েকজন ফেডারালদের সাথে গেম ওয়ার্ডেনের বাড়িতে গিয়েছিলাম, যেখানে ভাল লোকদের ডেকে আনা হয়েছিল।

আমাদের চারপাশে এত এত  গুলি ছড়ানো-ছিটানো ছিল যে ফার্নান্দেজ আমাকে বলেছিলেন: যদি আমি মারা যাই তবে আমার ছোট বোনদের খেয়াল রাখবেন। আমরা আলিঙ্গন করি এবং রাস্তা ধরে এগুতে থাকি। আহত তিন বা চারজন লোক বাড়িতে ছিল, মেঝেতে বা গদিতে পড়ে ছিল। গেম ওয়ার্ডেন অনুপস্থিত ছিলেন এবং তাঁর একা হয়ে পড়া স্ত্রীকে বেশ ভীত দেখাচ্ছিল।

শিল্পী: ‍গুস্তাভ বুলাঁজ্যে

যখন আমরা আহত লোকদের নিতে শুরু করি তখন তিনি আমাকে ও ফার্নান্দেজকে চলে যেতে অনুরোধ করতে শুরু করলেন। বহন করা যায় না এমন আহতদের তিনি আমাদের সাথে থাকা ফেডারেলদের তত্ত্বাবধানে রেখে আমাদের চলে যেতে বললেন।

ভদ্রমহিলা কেন এইরকম আচরণ করছিলেন তা বুঝতে পারছিলাম না। আমরা দুনিয়ার কোন কিছুর বিনিময়ে আহতদের এমন ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় রেখে যাব না। আমরা আমাদের সাথে থাকা অ্যাম্বুলেন্স স্ট্রেচারগুলিতে বেশ কষ্টেসৃষ্টে আহতদের উঠাচ্ছিলাম আর ওই মহিলা আমাদের পেছিন পেছন এসে বারংবার আমাদেরকে কেটে পড়তে বলছিলেন।

তার কথা তেমন একটা আমলে নেয়া হচ্ছে না দেখে তিনি চুপ করে গেলেন এবং গুলিবিদ্ধ আহত রোগীদের নিয়ে তার সদর দরজা থেকে আমরা সামনে অগ্রসর হলাম।

পরে আমরা জানতে পারলাম যে তার ঘরেই ভের্সাই এর নিয়মিত সৈনিকরা ঘাপটি মেরে ছিল। তিনি অন্য নারীকে খুন হতে দেখতে হবে এই ভয়ে ছিলেন? নাকি তিনি স্রেফ হতভম্ব অবস্থায় ছিলেন?

আমাদের বয়ে নিয়ে আসা আহতদের মধ্যে আমরা একটি অর্ধ-মৃত ছোট ভের্সাই সৈনিককেও নিয়ে এসেছিলাম যাকে অন্যান্যদের সাথে প্যারিসের ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালে রাখা হয়। ধীর ধীরে সে সেরে উঠছিল। প্যারিস আক্রমণের সময়ে অন্য সৈনিকদের সাথে হয়তো তাকেও মেরে ফেলা হতো।

 ইউডস যখন লিজিওন অফ অনারে গিয়েছিলেন তখন আমি লা সিসিলিয়ার সাথে মন্ট্রোজে এবং তারপরে ডম্ব্রোভস্কির সাথে নিউইলি গিয়েছিলাম। এই দু’জন পুরুষ শারীরিকভাবে একে অপরের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নন; অথচ ক্রিয়াকালীন তাদের একই দ্রুত দৃষ্টি, একই সিদ্ধান্ত, একই দুর্গমতা।

সাধারণভাবে ফেডারেলদের সাহসের কোন তুলনা হয় না। মূলত এই সাহস ছিল একটি বিপ্লবী আন্দোলনের উদ্দীপনা। কমিউনের সেনাবাহিনী সম্পর্কে অপবাদগুলি প্রদেশগুলির চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে; এই সেনাবাহিনীকে দস্যু এবং ন্যায়বিচার থেকে পলাতকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনী বলে অভিহিত করা হয়।

তবুও পাওল মিংক, আমোরোকস এবং অন্যান্য বীর বিপ্লবীরা যে সমস্ত কমিউন ঘোষিত বড় শহরগুলিতে তাদের অনুগামীদের পাঠিয়েছিল। বাকি প্রদেশ এবং গ্রামাঞ্চল ভার্সাই থেকে সামরিক প্রতিবেদন পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যে ডুভালের মৃত্যুতে গ্রামগুলি আতংকিত হয়ে পড়েছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমাদের সেনাবাহিনী ৫০০ এরও বেশি বন্দি গ্রহণ করেছে এবং তাদের মধ্যে আমরা শয়তানগুলোর মুখ বন্ধ করতে পারি যারা হালকা মন দিয়ে তাদের পাশবিক আবেগের বশে দেশটিকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছিল। বেশিরভাগের বয়স চল্লিশ-পঞ্চাশ বছরের মধ্যে ছিল, তবে ঘৃণ্য ব্যক্তিদের এই দীর্ঘ লাইনে বৃদ্ধ পুরুষ এবং শিশুরাও ছিলেন। তাদের মধ্যে কিছু মহিলাও দেখা গেছে। ক্রুদ্ধ জনতার কব্জা থেকে এদেরকে ছাড়িয়ে নিতে এদের প্রহরা দিয়ে নিয়ে আসা অশ্বচালিত অশ্বারোহী প্লাটুনকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তা সত্ত্বেও, আমরা তাদের অক্ষত অবস্থায় আস্তাবলের কাছে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি।

ব্যক্তি ডুভাল, সেই অন্য নকল জেনারেল, সকালে দুই সাধারণ কর্মচারীর সাথে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।

“তিনজনই গর্বের সাথে অস্ত্র তুলে নেয়া সমস্ত বিদ্রোহী নেতাদের ভাগ্যে যা ঘটে  সেই ভাগ্য বরণ করেছিল।

(ভের্সাই সেনাবাহিনীর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার রচিত The war of the Communists of Paris)

আমরা জানতাম যে সাম্রাজ্যের জেনারেলরা যারা নিজেদের পদবি ব্যতীত অন্য কোনও পরিবর্তন না করে ভের্সাই প্রজাতন্ত্রের সেবায় চলে গিয়েছিলেন তাদের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করা যায়।

প্যারিস হত্যার ভবিষ্যতের অন্যতম প্রতিশোধ হবে সামরিক প্রতিক্রিয়ার প্রচলিত কুখ্যাত বিশ্বাসঘাতকতা প্রকাশ করা।

সারোয়ার তুষার