অরাজ
আর্টওয়ার্ক: করোনা শাসকতা শিল্পী: সারশু সূত্র: অরাজ
প্রচ্ছদ » ইউভাল নোয়াহ হারিরি।। মহামারী, ক্ষমতা ও সংহতি

ইউভাল নোয়াহ হারিরি।। মহামারী, ক্ষমতা ও সংহতি

  • অনুবাদ: ইকরামুল হক

করোনা কোন অনিবার্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়।মহামারী রোধে রাজনৈতিক ব্যবস্থারই ধরন ও কাঠামো এক্ষেত্রে প্রধান বিবেচ্য। করোনা ভাইরাস নিয়ে রাষ্ট্র’র সৃষ্ট সংকট বোঝাপড়ার জন্য হারারির এই সাক্ষাৎকারটি গুরুত্বপূর্ণ । করোনা ভাইরাস বায়োমেট্রিক নজরদারি, পরিচালনা ও বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। সাউদ চায়না মর্নিং পোস্ট  পত্রিকায় সাক্ষাতকারটি Homo Deus author Yuval Harari shares pandemic lessons from past and warnings for future শিরোনামে প্রকাশিত হয়। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন লিন্ডা লিউ।

ইউভাল নোয়াহ হারিরি

লিউ: আপনি হোমো ডিউস বইয়ে লিখেছিলেন, ‘আমরা যদি সত্যি দুর্ভিক্ষ, প্লেগ এবং যুদ্ধকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারতাম…। সেকথা ধরেই  বলছি, করোনা ভাইরাস মহামারীর বিস্তার অব্যাহত রয়েছে, আপনি কি এখনও বিশ্বাস করেন যে, মানুষ এই প্লেগের লাগাম টেনে ধরতে পেরেছে?  

হারারি: আমরা স্পষ্টতই নতুন সংক্রামক রোগের আগমন বন্ধ করতে পারবো না। রোগজীবাণু প্রতিনিয়ত প্রাণীর শরীর থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে, এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে জেনেটিক রূপান্তরের (মিউটেশন) মাধ্যমে আগের চেয়ে আরো বেশি সংক্রামক এবং মারাত্মক হয়ে উঠে। তা সত্ত্বেও, আমাদের কাছে প্লেগের লাগাম টেনে ধরার এবং এর  হাত থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু এবং অর্থনীতির ধ্বংস রোধ করার উপায় আছে।

আমাদের বর্তমান যুগের পরিস্থিতির সাথে আগের যুগের পরিস্থিতির তুলনা করতে পারি। খেয়াল করুন, আগের  যুগে যখন মহামারী ছড়িয়ে পড়ত তখন সাধারণত মানুষ বুঝতে পারতো না– এই রোগগুলো কী কারণে ঘটেছে বা তাদের থামানোর জন্য কী করা যেতে পারে। তারা মনে করত মহামারী দেব-দেবীর অভিশাপে কিংবা ব্ল্যাক ম্যাজিকের কারণে হচ্ছে। সে কারণে তারা রোগ নিরাময়ের জন্য  দেব-দেবীর কাছে একত্রিত হয়ে প্রার্থনা করত, যেটা আসলে সংক্রমণকে আরো বাড়িয়ে দিত। চতুর্দশ শতাব্দীতে যখন ব্ল্যাক ডেথের কারণে এশিয়া ও ইউরোপের এক চতুর্থাংশের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল, তখনও মানবজাতি জানতো না, ঠিক কি কারণে এতো মানুষ মারা যাচ্ছে। এমনকি যখন ষোড়শ শতাব্দীতে গুটি বসন্ত এবং অন্যান্য মহামারীতে আমেরিকার আদি জনগোষ্ঠীর ৯০ শতাংশ পর্যন্ত মারা গিয়েছিল, অ্যাজটেক, মায়া এবং ইনকা সভ্যতার মানুষজন ধারণা করতে পারেনি, কেন তারা মারা যাচ্ছে ।

অন্যদিকে, খেয়াল করেন করোনাভাইরাস মহামারী শুরু হওয়ার পর, বিজ্ঞানীদের এই ‘নোভেল ভাইরাস’ চিনতে, এর জিনোম সিকুয়েন্স বের করতে এমনকি আক্রান্ত  ব্যক্তিদের সনাক্ত করতে, একটি নির্ভরযোগ্য পরীক্ষার উদ্ভাবন ঘটাতে মাত্র দুই সপ্তাহ সময় নিয়েছে। করোনা ভাইরাসের সাথে লড়াইয়ে চিকিৎসকরা এগিয়ে  আছেন, কারণ রোগজীবাণুগুলি কোনরকম তথ্য ছাড়া কেবলমাত্র মিউটেশনের [mutation] এর উপর ভিত্তি করে আক্রমণ করে, অন্যদিকে চিকিৎসকরা সুনির্দিষ্ট তথ্যের উপর নির্ভর করেন। একই সাথে অর্থনৈতিক বিপর্যয় রোধে সরকার এবং ব্যাংকগুলি একটি সাধারণ পরিকল্পনা তৈরি করতে পারে।

আর্টওয়ার্ক: মেডিকেল মাজেল
শিল্পী: মোহাম্মদ আফেফা
সূত্র: কার্টুন মুভমেন্ট

যাই হোক, এইখানে একটা বড় রকমের সতর্ক বার্তা আছে। এই মহামারী কাটিয়ে উঠার সক্ষমতা মানুষের রয়েছে। তার মানে এই না যে, এই সক্ষমতাকে ভালভাবে প্রয়োগ করার মত বোধশক্তি মানুষের সবসময় কাজ করে। ২০১৫ সালে আমি হোমো ডিউস বইতে লিখেছিলাম যে ‘যদিও আমরা নিশ্চিত নয় যে, নতুন ইবোলার প্রাদুর্ভাব বা একটি অজানা ফ্লু স্ট্রেন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে কি পড়বে না এবং লক্ষ লক্ষ লোককে মৃত্যুর ঝুঁকিতে ফেলতে সমর্থ হবে কি হবে না। তবে তেমনটি হলে তখন আমরা একে অনিবার্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসাবে বিবেচনা করব না। বরং আমরা একে মানবজাতির ক্ষমার অযোগ্য কাজ হিসাবে বিবেচনা করব এবং এই ঘটনার  পিছনের মূল ব্যক্তিদের এরজন্য দায়ী করব। মানুষের কাছে মহামারী রোধ করার জন্য পর্যাপ্ত  জ্ঞান এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকার পরেও যদি মহামারীটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তবে সেটা ঈশ্বরের অভিশাপের (Divine Anger) জন্য ঘটবে না, ঘটবে মানুষের অক্ষমতার কারণে।

আমি মনে করি, আমার এই কথাগুলো এখনকার পরিস্থিতির জন্যও সত্য। আমরা এখন গোটা পৃথিবী জুড়ে  যা দেখছি তা অনিবার্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়। এটি মানুষের ব্যর্থতা। দায়িত্বজ্ঞানহীন সরকারগুলো তাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অবহেলা করেছে, সময় মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এখনো তারা বিশ্বব্যাপী কোন ধরনের কার্যকর  সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রস্তুত  করতে পারেনি। আমাদের এটাকে থামানোর সক্ষমতা আছে, তবে এখনও পর্যন্ত এর লাগাম টেনে ধরার জন্য পর্যাপ্ত বুদ্ধির অভাব রয়েছে ।

লিউ: মহামারী নিয়ন্ত্রণে চীন তার সাফল্যের চিত্র তুলে ধরে বলছে যে, স্থানীয়ভাবে এই ভাইরাসের বিস্তার উল্লেখযোগ্যভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। মহামারী মোকাবেলার জন্য লকডাউনে সক্ষম– এমন স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা কি পশ্চিমা ধাঁচের গণতন্ত্রের চেয়ে বেশি কার্যকর হবে?

হারারি: ঠিক তেমনটা না। আপনি যদি কোন অসচেতন এবং সরকারের প্রতি আস্থাহীন জনগোষ্ঠীর পরিবর্তে সেই  জনগোষ্ঠীকে সচেতন এবং সঠিক তথ্যে দীক্ষিত করতে পারেন, তখন মহামারী মোকাবেলা করা আপনার জন্য সহজ হবে। আর আপনি কি চাইলেও প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষকে টয়লেটে পুলিশ কিংবা ক্যামেরা রেখে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার কাজটি করাতে পারবেন ? এইটা আসলে অসম্ভব একটা বিষয়। তার বদলে আপনি যদি মানুষকে সচেতন করতে পারেন এবং তারা যে তথ্য পাচ্ছে তার উপর তাদের আস্থা থাকে সে ক্ষেত্রে তারা নিজ উদ্যোগে সঠিক কাজটি করতে পারবে।

আর্টওয়ার্ক: ও টেম্পোরা
শিল্পী: টিমো এসনার
সূত্র: কার্টুন মুভমেন্ট

আমি স্কুলে শিখেছিলাম যে, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার কারণে রোগ হয়, সাবান দিয়ে হাত ধুলে রোগজীবাণু মরে যায়। সেই তথ্য আমি বিশ্বাস করেছিলাম। তাই আমি স্বেচ্ছায় হাত ধুই। একই কারণে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষও তাই করে। সমস্যাটা হল সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রের জনতোষণবাদী [Populist] রাজনীতিবিদরা ইচ্ছাকৃতভাবে বিজ্ঞান, নির্ভরযোগ্য  গণমাধ্যম এবং পাবলিক অথোরিটির [Public Authority] প্রতি মানুষের আস্থার জায়গাকে সংকুচিত করেছে। এই ধরনের আস্থাহীনতার ফলে জনগণ কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। কোন স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়াটা সমাধান না, বরং সমাধানটা হল বিজ্ঞান, গণমাধ্যম এবং সরকারি কর্তৃপক্ষের উপর মানুষের আস্থা পুনর্নির্মাণ করা। যদি শাসন কাঠামো মানুষের প্রতি বিশ্বাস তৈরি করতে পারে, আপনি মানুষের প্রতি এই আস্থা রাখতে পারবেন যে, তারা কোন ধরনের নজরদারি বা শাস্তির ভয় ছাড়াই সঠিক কাজটি করবে ।

লিউ: আমরা দেখেছি যে, চীনের মতো দেশগুলি মহামারীর  বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে নাগরিকদের অবস্থান এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করতে স্মার্টফোন এবং অ্যাপস এর সাহায্য নিয়েছে। মহামারী বিশ্বব্যাপী কি আরও বায়োমেট্রিক রাষ্ট্রের বিকাশ ঘটাতে পারে?

হারারি: হ্যাঁ, এটা একটা বড় আশঙ্কার জায়গা। নজরদারির ইতিহাসে করোনা ভাইরাসকে একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে । প্রথমত, যেসমস্ত দেশে গণনজরদারি (mass surveillance) ব্যবস্থা এতদিন ধরে ছিল না, এই ঘটনা সে সমস্ত দেশে গণনজরদারির (mass surveillance) সরঞ্জাম স্থাপনকে বৈধতা দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এটি ‘ত্বকের ওপরে’ থেকে ‘ত্বকের নীচে’ পর্যন্ত নজরদারির নাটকীয় রূপান্তরকে নির্দেশ করতে পারে। আগে, সরকার প্রধানত আপনার গতিবিধি  পর্যবেক্ষণ করত–আপনি কোথায় যান, কার সাথে সাক্ষাত করেন, এসব । এখন তারা আপনার দেহের ভিতরে কী ঘটছে, সে সম্পর্কে আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আপনার শারীরিক অবস্থা যেমন: শরীরের তাপমাত্রা, রক্তচাপ–এই জাতীয় বায়োমেট্রিক তথ্য আপনার সম্পর্কে সরকারকে আগের চেয়ে অনেক বেশি তথ্য দিচ্ছে ।

এমন কিছু টোটালিটেরিয়ান  রাষ্ট্রের কল্পনা করুন– ১০ বছরে যে রাষ্ট্রগুলো প্রতিটি নাগরিককে বায়োমেট্রিক ব্রেসলেট পরতে বাধ্য করে–যা তাকে ২৪ ঘন্টা নজরদারির মধ্যে রাখবে। মানব দেহ এবং মস্তিষ্ক সম্পর্কে আমাদের ক্রমবর্ধমান জ্ঞান এবং একই সাথে মেশিন লার্নিংয়ের অপরিসীম ক্ষমতা ব্যবহার করে শাসন ব্যবস্থা, ইতিহাসে প্রথমবারের মতো, প্রতিটি নাগরিক প্রতিটি মুহুর্তে কী অনুভব করছে তা জানতে সক্ষম হতে পারবে। টেলিভিশনে ‘মহান’ নেতার  বক্তব্য শোনার সময় বায়োমেট্রিক সেন্সরগুলি যদি আপনার রাগ নির্দেশক (যেমন উচ্চ রক্তচাপ, শরীরের তাপমাত্রায় সামান্য বৃদ্ধি,অ্যামিগডালার ক্রমবর্ধমান ক্রিয়াকলাপ) শনাক্ত করে, আপনি ভালো রকমের সমস্যায় পড়তে পারেন। আপনি হাসতে এবং হাততালি দিতে পারেন, কিন্তু আপনি যদি সত্যিই রেগে থাকেন তবে শাসকরা তা বুঝতে পেরে যাবে।

আর্টওয়ার্ক: গ্লোবাল সিকিউরিটি
শিল্পী: অং থেইন
সূত্র: কার্টুন মুভমেন্ট

লিউ: যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের কিছু রাষ্ট্রের হাতে এতো সময় থাকার পরও করোনা মোকাবেলায় তারা ধীর গতিতে এগিয়েছে । এ থেকে আমরা কি শিক্ষা নিতে পারি? 

হারারি: আমি মনে করি এই মহামারী থেকে আমাদের মূল শিক্ষাটা হল যে, আমরা সকলেই একে অপরের সাথে যুক্ত। এটি কোনও চীনা বা ইতালিয়ান সংকট নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সংকট । সারা বিশ্বের মানুষ একই রকমের অভিজ্ঞতা এবং ভয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ভাইরাসের কাছে সবাই সমান। যতক্ষণ মহামারীটি যেকোন একটি দেশে ছড়িয়ে পড়ে, এটি আমাদের সকলের জীবনকে বিপন্ন করতে পারে, কারণ এটি আমাদের সবার কাছে পৌঁছে যেতে পারে। তাই এই মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের একটি বৈশ্বিক পরিকল্পনা প্রয়োজন।

লিউ: এই মহামারী রাষ্ট্রগুলোর দিকে থেকে  বিশ্বায়নকে নতুন করে মূল্যায়ন করতে এবং সীমানা, বাণিজ্য এবং সংস্কৃতির আদান প্রদানের ক্ষেত্রে আরও বাধা স্থাপন করতে পারে?

হারারি: কিছু লোক করোনা ভাইরাস মহামারীর জন্য বিশ্বায়নকে দায়ী করে এবং তারা এও বলে যে, এইরকম ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমানোর জন্য আমাদের বিশ্বায়নের রাস্তা বন্ধ করতে হবে।

তাদের এই ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল। মহামারী বিশ্বায়ন ঘটার অনেক আগেই ছড়িয়েছে। মধ্যযুগে ভাইরাসগুলি একটি মালবাহী ঘোড়ার মত গতিতে ভ্রমণ করেছিল এবং বেশিরভাগ জায়গায় তারা কেবলমাত্র ছোট শহর এবং গ্রামগুলিকে সংক্রমিত করতে পারত। যদিও ব্ল্যাক ডেথের মতো মহামারীগুলো আজকের চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহ ছিল। আপনি যদি বিচ্ছিন্ন হয়ে মহামারী থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চান তবে আপনাকে প্রস্তর যুগে ফিরে যেতে হবে। এটি সর্বশেষ সময় ছিল যখন মানুষ মহামারী থেকে মুক্ত ছিল, কারণ সেই সময়ে মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগের পরিধি ছোট ছিল।

মহামারীটির আসল প্রতিষেধক বিচ্ছিন্নতা নয়, এর প্রতিষেধক হচ্ছে তথ্য এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বিনিময় করা। ভাইরাসের চেয়ে মানুষের বড় সুবিধাটা হল মানুষ কার্যকর পদ্ধতিতে সহযোগিতা করতে পারে। ভাইরাস চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের উপর তার সংক্রমণের ধরন অদল বদল করতে পারে না। তবে চীন চাইলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করতে পারে। তার চেয়েও বড় কথা, চীন সরাসরি বিশেষজ্ঞ এবং সরঞ্জাম প্রেরণ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করতে পারে। ভাইরাসগুলি মানুষের মতো এরকম কিছু করতে পারে না।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাবে আমরা আমাদের সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যাবহার করতে পারছি না। গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের দায়িত্বজ্ঞানহীন রাজনীতিবিদরা ইচ্ছাকৃতভাবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার উপর আস্থা কম রেখেছেন। আমাদেরকে এখন সে ভুলের মাসুল দিতে হচ্ছে। বিষয়টা অনেকটা অভিজ্ঞ মানুষ না থাকার মত।

আর্টওয়ার্ক: সেলফলেস হিরো
শিল্পী: ডোডি
সূত্র: কার্টুন মুভমেন্ট

আশা করি, আমরা অতিদ্রুত নিম্নে উল্লেখিত কমপক্ষে পাঁচটি ক্ষেত্রে অধিকতর সহযোগিতা দেখতে পাব:

১. নির্ভরযোগ্য তথ্য শেয়ার করা। যে দেশগুলি ইতিমধ্যে এই  মহামারীতে আক্রান্ত হয়েছে তাদের উচিত অন্যান্য দেশের সাথে তাদের পরামর্শ বিনিময় করা। মেডিসিন এবং ভ্যাকসিন এর উদ্ভাবনের প্রচেষ্টাতে বিশ্বজুড়ে সমস্ত তথ্য খোলাখুলিভাবে এবং দ্রুততার সাথে বিনিময় করা।

২. টেস্টিং কিট, ব্যাক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (PPE) এবং ভেন্টিলেটর মেশিন এর মত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরণের বৈশ্বিক উৎপাদন এবং বিতরণে সমন্বয় সাধন করা । বিশ্বব্যাপী সমন্বিত উৎপাদন ব্যাবস্থার সকল বাধা দূর করা এবং এটা  নিশ্চিত করা যে, এই চিকিৎসা উপকরণগুলো পাওয়ার ক্ষেত্রে ধনী দেশগুলোর পরিবর্তে যেন সেই সমস্ত দেশগুলো পায় যাদের এইগুলো বেশি প্রয়োজন।

৩. কম ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর চিকিৎসক, নার্স, বিশেষজ্ঞদের সবচেয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে পাঠানো উচিত যাতে করে তারা সেই দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে পারে  এবং সেই  সাথে মূল্যবান অভিজ্ঞতাও যেন অর্জন করতে পারে। মহামারীর কেন্দ্র পরিবর্তিত হচ্ছে। আগে এটি চীন ছিল, এখন এটি ইউরোপ, সম্ভবত পরের মাসে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পরে ব্রাজিল হবে। ব্রাজিল যদি আজকে ইতালিকে সহায়তা করে, সম্ভবত ইতালির পরিস্থিতি দুই মাসের মধ্যে স্বাভাবিক হবে, তখন তারা আবার ব্রাজিলকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে পারবে ।

৪. সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ও খাতগুলোকে বাঁচাতে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সুরক্ষা নেটওয়ার্ক তৈরি করা। এটি দরিদ্র দেশগুলির জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং জার্মানির মত সমৃদ্ধ দেশগুলোর অর্থনীতি হয়ত কম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে একবার মহামারীটি আফ্রিকা, মধ্য প্রাচ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলিতে ছড়িয়ে পড়লে আমরা যদি কোন ধরনের বৈশ্বিক পরিকল্পনা না নিই, তবে এই আক্রান্ত দেশগুলোর মারাত্মক অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটতে পারে।

৫. ভ্রমণকারীদের ভ্রমনপুর্ব স্ক্রিনিং এর বিষয়ে একটি বৈশ্বিক সমঝোতায় আসা দরকার যা ভ্রমণকারীদের আসা যাওয়ার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা প্রদান করবে। বিমানে চড়ার আগে ছেড়ে যাওয়া রাষ্ট্রের বিমান বন্দরে যদি ভ্রমণকারীদের ভালভাবে স্ক্রিন করা হয়, সেক্ষেত্রে গন্তব্য রাষ্ট্র ভ্রমকারীদের সেই দেশে প্রবেশের বিষয়ে নিরাপদ বোধ করা উচিত।

ইকরামুল হক